ঈদ সামনে রেখে যশোরে কোতয়ালি পুলিশের অর্থ বানিজ্য

জাহিদুল কবীর মিল্টন: ঈদ সামনে রেখে যশোর কোতয়ালি পুলিশ অর্থ বানিজ্যে নেমেছে। সিভিল পোশাকে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল নিয়ে পাড়া, মহল্লা, শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন অলিগলি চষে বেড়াচ্ছে কোতয়ালি পুলিশ। কথিত অভিযোগে সাধারণ পথচারি, দিন মজুর ও নীরিহ অসহায় মানুষসহ মাদক ব্যবসায়িদের আটক করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

আটককৃত ব্যক্তিদের নাম থানার আসামির রেজিষ্টারে এন্ট্রি না করে দারোগাদের ব্যক্তিগত ডায়েরিতে এন্ট্রি করা হয়। আটককৃত আসামিদের থানায়ও আনা হয় না। দারোগারা আটকৃতদের অজ্ঞাত স্থানে রেখে দেয়। ফলে আসামির স্বজনরা আটককৃতদের খোজে থানায় এসে পায় না। কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারও আটককৃতদের সম্পর্কে স্বজনদের কোন তথ্য দিতে পারে না। এতে স্বজনরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও আতংকিত হয়ে পড়ে।

আর এসব কারণে তারা যতদ্রুত সম্ভব থানা থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের স্বজনদের ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। রোববার সকাল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত সিভিল পোশাকে কোতয়ালি থানা পুলিশ কথিত অভিযোগে বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা, শহর ও শহরতলীতে অভিযান চালিয়ে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে আটক করে। আটককৃতদের অধিকাংশই নিরীহ প্রকৃতির।

রোববার সকালে শহরের সিটি কলেজ পাড়া থেকে কথিত অভিযোগে শহরের আর এন রোডের মোটরপার্টস ব্যবসায়ি সুজন অটোর স্বত্তাধিকারি বাবুকে কোতয়ালি থানার এস আই আমিরুজ্জামান আটক করে। আটকের সময় বাড়ির স্বজনরা জানতে চান বাবুকে কি অভিযোগে আটক করা হচ্ছে।
দারোগা আমিরুজ্জামান বাবুর স্বজনদের বলেন, উপরের নির্দেশে বাবুকে আটক করা হচ্ছে। থানায় আনার পর বলা হয় বাবু বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তাকে মামলা দিয়ে চালান দেয় হবে। এমনকি ক্রসেও দেয়া হতে পারে। বাবুকে ছাড়াতে হলে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। পুলিশের কথা শুনে আটককৃত বাবুর স্বজনরা আতংকিত হয়ে পড়ে। পুলিশের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে বাবুকে ছাড়াতে। বাবুর স্বজনদের উদ্বেক উৎকন্ঠা ও আতংকিত হওয়ার ফলে পুলিশও পেয়ে বসে। বিভিন্ন মাধ্যম্যে দেনদরবার শুরু হয়। রোববার সকালে বাবুকে আটক করে থানায় আনার পর অবশেষে সোমবার সকালে রফা হয় ২ লাখ টাকায়। তাও আবার থানা থেকে ছাড়া হয় না বাবুকে।

সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে বাবু আটকের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার কারণে পুলিশ নিজেদের বাঁচাতে বাবুকে নেশাগ্রস্ত দেখিয়ে ৩৪ ধারায় সোমবার সকালে আদালতে চালান দেয়। চালান দেয়ার কয়েক ঘন্টা পর বাবু কয়েকশ টাকা জরিমানা দিয়ে বাইরে বের হয়ে যায়।

এদিকে বাবুকে এস আই আমিরুজ্জামান আটক করলেও আদালতে ফরোয়াডিং লিখে চালান দেয় এস আই আসাদ।

বাবুকে কত টাকা নিয়ে ছাড়া হয়েছে জানতে চাইলে এস আই আসাদ প্রতিবেদককে জানান, টাকা পয়সার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। উপরের নির্দেশে আমি বাবুকে ৩৪ ধারায় চালান দিয়েছি। বাবু মধ্যপ অবস্থায় ছিল। তাকে রোববার মেডিকেল করা হয়েছে।
অথচ হাসপাতালের প্রথমিক চিকিৎসার খাতায় এক্সিডেন্টাল ইনজুরি দেখানো হয়েছে। যার রেজিঃ নং ৩৫৫৭০/২৩৩। জেনারেল হাসপাতালের ব্রাদার বাবুল আক্তারকে সোমবার বিকেলে ফোন দিলে তিনি এতথ্য জানান।

বাবুকে কি অভিযোগে আটক করা হয়েছে জানতে চাওয়া হলে এস আই আমিরুজামান জানান, বাবুকে একটি অভিযোগে আটক করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সুনিদিষ্ট কোন অভিযোগের কথা বলতে পারেননি। শুধু বলেন অভিযোগটি গোপনীয়।
বাবুকে ছেড়ে দেয়া হবে না তাকে মামলায় চালান দেয়া হবে জিজ্ঞাসা করা হলে আমিরুজ্জামান বলেন, উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা আছেন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন কি করা হবে। আমি আপনাকে পরে জানাবো বলে দারোগা আমিরুজ্জামান ফোন রেখে দেয়।

বাবুর আটকের ব্যাপারে কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি (অপারেশন) সামসুদ্দোহার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ৩৪ ধারায় চালান দেয় হয় বলে জানান।

বাবু ছাড়াও রোববার রাতে কোতয়ালি থানার এ এস আই তহিদুল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থেকে কোন কারণ ছাড়াই এল জি কোম্পানীর মিস্ত্রি মাহাফুজুল আসলাম সানি ও মুরাদকে আটক করে। মাহাফুজুল শহরের কারবালা এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে। মুরাদের বাড়িও একই এলাকায়। রাতে কাজ শেষে দুজন মোটরসাইকেলে করে কারবালার বাড়ি যাচ্ছিল। পথ্যি মধ্যে পুলিশ সুপারের কার্যারয়ের সামনে থেকে তাদের মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে দুজনকে থানা হাজতে রাখার পর সোমবার সকালে দেনদরবার শেষে ৫০ হাজার টাকায় রফা হয়।

এব্যাপারে এ এস আই তহিদুলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি শিকার করে বলেন, অতো টাকা নেয়া হয়নি। একজনকেতো এমনিই ছেড়ে দিয়েছি।

এছাড়া কোতয়ালি থানার দারোগা এস আই হাসান একটি বোতল গ্রিন রংয়ের প্রাইভেটকারে চড়ে পাড়া, মহল্লা, শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। গত ৭ জুন শহরের ষষ্ঠিতলা পাড়া থেকে শরিফুল ইসলাম চায়না নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়িকে আটক করে অর্ধ লাখ টাকার বিনিময়ে পরের দিন ৮ জুন ৩৪ ধারায় আদালতে চালান দেয়।