হঠাৎ বিএনপি নেতাদের ভারত সফর কেন?

bnp newsঢাকা: হঠাৎ করেই বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ভারত সফর করেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর এই সফরে ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নেতাদের এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।

হাকডাক ছাড়া বিএনপি নেতাদের এই ভারত সফর শুধুই কী ‘ভারতবিরোধী’ অবস্থান নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা, নাকি আগামী নির্বাচনে ভারতের মনোভাব জানাতে- এমন প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে।

তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আদায়ে বিএনপি দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছে। এই দাবির প্রতি তারা আন্তর্জাতিক সমর্থনও চান। এরই অংশ হিসেবে সম্পতি বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল দিল্লি সফর করেছে।

বিএনপি নেতাদের ভাষ্যে, আপাত দৃষ্টিতে সফরকে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক তৈরির একটি মাধ্যম ধরা হলেও মূলত দুটি ইস্যুকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এক. বিএনপিকে ভারতবিরোধী বলে ক্ষমতাসীন মহল থেকে যে অপপ্রচার ছড়ানো হয়, সে বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করা ও দুই. চলতি বছরের শেষদিকে হতে যাওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারত ঠিক কী ভাবছে, তা জানার চেষ্টা করা।

দিল্লি সফর নিয়ে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিবেশীর বাড়িতে মানুষ দুটি সময় উপস্থিত হয়। নিজের উপযুক্ত মেয়েকে যদি প্রতিবেশীর ছেলে জ্বালাতন করে এবং অযাচিত কোনো বিষয়ে যদি প্রতিবেশী নাক গলান, তাকে সাবধান করতে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির এই সফরকে আমি খারাপভাবে দেখছি না। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ভারত যে কাণ্ড করেছিল, তাতে এবার নির্বাচনের আগেই তাদের বলে রাখা ভালো— আমরা আপনাদের ব্যাপারে নাক গলাই না, আপনারাও আমাদের ব্যাপারে নাক গলায়েন না। বিএনপি নেতারা এটা বলে থাকলে ভালো। আর যদি তারাও জি হুজুর, জি হুজুর করে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়ার আলাপ-আলোচনা করতে যায়, তার কোনো অর্থ আমি দেখি না।’

সফর বিষয়ে ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুকে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বলেছেন, ‘পেছনে নয়, সামনের দিকে তাকানো উচিত। ’৮০ ও ’৯০ দশকের রাজনীতি এখন বাতিল হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান চান ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক। আমরা সে বার্তাটা পৌঁছে দিয়েছি।’

ভারত সফর সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মতো ভারতও আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায়। একটি ভালো নির্বাচনের জন্য কী প্রয়োজন, সে সম্পর্কে বিএনপির চাওয়াগুলো তাদের জানানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের কোনো সহায়তা চাইনি। ক্ষমতার পরিবর্তন হবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে। বিএনপি জনগণের ভোটে ক্ষমতার পরিবর্তনে বিশ্বাস করে। সেখানে কারও হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করে না।’

এই সফর নিয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আমরা তিন দিকে থেকে ভারতবেষ্টিত। অন্যদিকে সমুদ্র। ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা আমাদের দায়িত্ব। মূলত ভারতীয় জনগণের সঙ্গে এদেশের জনগণের সম্পর্কের ভিতটা আমরা তাদের থিঙ্ক ট্যাংকে যারা আছেন, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আগামী নির্বাচনে যেন সুজাতা সিংহের মতো ভূমিকা কেউ না রাখে, সেটিও বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো বলি- অভিন্ন নদীর পানি এবং ৫৪টি নদীর সমস্যা সমাধান করতে হবে। তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আমাদের দিতে হবে। একই সঙ্গে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের আশ্রয় দিবে না। এগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আলোচনা চলবে।’

বিএনপির প্রতিনিধি দলের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও ভারত সফর করেন। এই সফরের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।