যশোরে বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের দু’পাইলটের ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধার, তদন্ত কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর: যশোরে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দুই পাইলট নিহত হয়েছেন। রোববার রাতে যশোর সদর উপজেলার বুকভরা বাওড়ে বিধ্বস্ত হয় প্রশিক্ষণ বিমানটি। রোববার রাত ও সোমবার সকালে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে দুই পাইলটের ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার করা হয়। একইসাথে বিধ্বস্ত বিমানের বিভিন্ন অংশও উদ্ধার করা হয়।

jessore newsনিহত দু’পাইলট হলেন, স্কোয়াডন লিডার সিরাজুল ইসলাম ও স্কোয়াডন লিডার এনায়েত কবির পলাশ। পলাশ জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের সফিউদ্দিনের ছেলে এবং সিরাজুলের বাড়ি রাজবাড়ি জেলায়। সোমবার নিহত দুই পাইলটের ছিন্নভিন্ন দেহের অংশবিশেষ উদ্ধারের পর বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে যশোর বিমান বাহিনীর মতিউর রহমান ঘাঁটিতে তাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সোমবার সকালে হেলিকপ্টারে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বাহিনী বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত।

jessore biman newsএর আগে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর এর এক বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমান দুর্ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

যশোর বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক আলমগীর পাঠান জানান, রোববার রাত ৮টা ৫১ মিনিটে যশোরের মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি থেকে প্রশিক্ষণ বিমান কে-৮ডব্লিউ উড্ডয়ন করে। রাত ৯টা ১১ মিনিটে বিমানটি কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর সেটি যশোর সদর উপজেলার বুকভরা বাওড়ের মধ্যে আছড়ে পড়ে। এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে যশোর বিমান বাহিনীর মতিউর রহমান ঘাঁটিতে নিহত দুই পাইলটের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর সকালে হেলিকপ্টারে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বাহিনী বাহিনীর প্রধান এয়ার এয়ার মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত।

যশোর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপ-পরিচালক পরিমল কুন্ডু সোমবার দুপুরে ব্রিফিংকালে জানান, রোববার রাত ও সোমবার উদ্ধার অভিযানে বিধ্বস্ত বিমানটির ৩৫ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে বিমানের ইঞ্জিন এখনও উদ্ধার করা যায়নি। আর নিহত দুই পাইলটের মাথা, হাতসহ শরীরের ছিন্নভিন্ন বিভিন্ন অংশ উদ্ধার হয়েছে। সামগ্রিক এ উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াডন লিডার মাহাদি।
বিকেলে উদ্ধার অভিযানে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিধ্বস্ত বিমানের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করা হলেও এখনও এর ইঞ্জিন উদ্ধার করা যায়নি। ইঞ্জিনটি প্রায় ১৪ ফিট পানির নিচে এবং নরম কাদা মধ্যে রয়েছে। এজন্য প্রায় ৮শ’ কেজি ওজনের ইঞ্জিনটি তুলতে সময় লাগছে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবুল বাশার মিয়া জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে যশোর সদর উপজেলার বুকভরা বাওড়ের মধ্যে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান পড়ে যাওয়ার খবর পান তারা। এ খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। তবে রাতের আঁধার ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ডুবে যাওয়া বিমানের অবস্থান চিহ্নিত করতে বিলম্ব হয়। উদ্ধার অভিযানের শুরুতেই পানিতে ভাসতে থাকা বিধ্বস্ত বিমানের কিছু ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। পরে খুলনা থেকে এসে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় নৌ-বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। রাত প্রায় ৪টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এরপর অভিযান স্থগিত করা হয়। সোমবার সকাল ৯টা ২৫মিনিটে নৌ-বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ফের এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

এর আগে রোববার রাতে বিকট শব্দে বিমান বুকভরা বাওড়ের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীও সেখানে ভিড় করেন। বাওড়ের পাড় জুড়ে এলাকাবাসী অবস্থান নেন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এলাকায় অবস্থান নেন। রাত হলেও এলাকার শত শত মানুষ বাওড়ের পাড়ে ভিড় করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মঠবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আশুতোষ সরকার বলেন, রোববার রাত ৯টার দিকে বাওড়ে মাছ ধরতে এসেছিলাম। বাওড়ের ধারেই ছিলাম। হঠাৎ দেখি দক্ষিণ আকাশে বিকট শব্দে একটি বিমান ব্লাস্ট (বিস্ফোরণ) হয়। এরপর আগুনের গোল্লা বাওড়ের জলে পড়ে। কিছুক্ষণ পর এলাকাবাসী বাওড়ের ধারে ভিড় করে।

চান্দুটিয়া বাজারের ব্যবসায়ী শ্যামল কুমার সিংহ জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বাজারে ছিলেন। এ সময় প্রচ- একটি শব্দ শুনে তারা অনেকেই আরিচপুর বাজার সংলগ্ন বুকভরা বাওড়ে ছুটে যান। দূর থেকে তারা দেখতে পান একটি বিমানের কিছু অংশ বাওড় পাড় থেকে প্রায় ৩শ’ মিটার দূরে পানিতে ভাসছে। কেউ কেউ নৌকা নিয়ে বিমানটির কাছাকাছিও গেছেন। কিন্তু কোনো মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে গোটা এলাকা পেট্রোলজাতীয় জ্বালানির গন্ধে ভরে ওঠে। প্রচন্ড বৃষ্টি আর অন্ধকারের কারণে কোনোকিছু ঠিকভাবে দেখাও যাচ্ছিল না।