ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১১টি সংশোধনী, আরো যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত

parliament of bangladesh - songsodডেস্ক রিপোর্ট: জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল, ২০১৮’’ বিলে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সুনির্দিষ্ট আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি করে খসড়া বিলে ১১টি সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কোন কোন পয়েন্টে বিলে এসব সংশোধনী আনা হয়েছে, তার একটি তালিকা বুধবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আইনে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞায় অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুসরণ করার কথা বলা হয়। এতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আপত্তি জনানোয়। তারা এসব সংশোধনী পর্যালোচনার জন্য সময় চাইলে বিলটি আরো যাচাই বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সংসদীয় কমিটি। এজন্য চলতি মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত বৈঠক মুলতবি করা হয়।

সংসদ ভবনে বুধবার অনুষ্ঠিত ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৪তম বৈঠকের ২য় মূলতবি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ। বিশেষ আমন্ত্রণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কমিটির সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া কমিটির আমন্ত্রণে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দি ডেইলি ষ্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, এসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু, বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বৈঠকে যোগদান করেন।

বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম দফা আলোচনার প্রেক্ষিতে কিছু সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। তাঁরা সেগুলো পড়ে দেখার সুযোগ পাননি। সে কারণে তাৎক্ষণিক মতামত দিতে প্রস্তুত ছিলেন না। এসব সংশোধনীর বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে।

সম্পাদক পরিষদ যেসব আপত্তি ও দাবি জানিয়েছিল সেগুলো পূরণ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি। আলোচনা চলছে। আশা করি আরও ব্যাপক আকারে আলোচনা হবে।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যে যে পরিবর্তনগুলো করা প্রয়োজন ছিল সে পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে। ওনারা (সাংবাদিক পক্ষ) বলেছেন, এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে তারা তাদের নিজস্ব ফোরামে আলোচনা করবেন। ১৬ জুলই আবার বৈঠক হবে।

সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আইনে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞায় অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুসরণ করার কথা বলা হয়। এতে সাংবাদিকেদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। এ বিষয়টি আরও পর্যালোচনা করা হবে।

এ বিষয়ে বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, অফিসয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

কমিটি সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় ১১টি সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের ৮টি ধারা নিয়ে উত্থাপিত আপত্তিগুলো নিস্পত্তি করতে এসব সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়। এর আগে গত ২২ মে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হয়ে নিজেদের আপত্তির কথা তুলে ধরেছিল সম্পাদক পরিষদ। ওই বৈঠকে অ্যাটকো, বিএফইউজের নিজেদের আপত্তির কথা তুলে ধরেছিলেন।

বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, কিছু বিষয়ে সাংবাদিকদের আপত্তি ছিল। সংসদীয় কমিটি কমিটি ১১টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রস্তাব করেছে। সাংবাদিকেরা নিজেদের সঙ্গে আলচনা করে নিজেদের অবস্থান জানাবেন। এজন্য আগামী ১৬ জুলাই আবার বৈঠক হবে।

কমিটির সভাপতি বলেন, প্রস্তাাবিত আইনের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা হয়েছে। এর সংজ্ঞা হবে সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে তা এখানে প্রযোজ্য হবে। ২৫ নম্বর ধারার ‘খ’ উপধারা (এমন কনো তথ্য সম্প্রচার বা প্রকাশ করা যা কোনো ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করতে পারে) বাতিল এবং সব মিলে দুটি উপধারা করা, ২১ ধারায় সাজা যাবজ্জীবনের ক্ষেত্রে ১৪ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ সাজার কথা আইনে বলা হয়েছে। অপরাধ বিবেচনায় আদালত ঠিক করবে সর্বনিম্ন সাজা কতদিন হবে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সাজা ও জরিমানার পরিমাণ কমানো এবং কিছু শব্দগত পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।