সিলেটে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি

bnp logoসিলেট : আগামী ৩০ জুলাই প্রথম বারেরমতো দলীয় প্রতীকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের চতুর্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগ-বিএনপির জন্য মর্যাদার লড়াই। আরিফ-কামরানের জনপ্রিয়তা পরীক্ষার নির্বাচনও এটি।

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তিন-চার মাসে আগে শাহজালাল রহ. এর স্মৃতিবিজড়িত এই সিলেট সিটি নির্বাচনকে দলীয় নেতাকর্মীরা মূল লড়াইয়ের প্রস্তুতি হিসেবে নিয়েছেন।

এ অবস্থায় বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। কারণ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ও ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াত সমর্থিত মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী হয়েছেন।

এই সু্যোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান আছেন সুবিধাজনক অবস্থানে।

আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সিলেটের আলোচিত ব্যবসায়ী মাহি উদ্দিন সেলিম নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চেয়ে মনোনয়ন না পেলেও তারা কামরানের বিজয় নিশ্চিতে মাঠে নেমেছেন ঐক্যবদ্ধভাবে।

এ কারণে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। যদিও বদরুজ্জামান সেলিম বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এতে ভোটারদের মনে তেমন প্রভাব পড়েনি।

এদিকে, এবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ চাচ্ছে সিলেটে দলীয় মেয়র প্রার্থীকে জয়ী করে বিগত সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের শোধ নিতে। তবে দলীয়ভাবে আরিফ বেকায়দায় থাকলেও সিটি এলাকায় বিগত সময়ে মেয়র থাকাকালে যে উন্নয়ন করেছেন এর জন্য সাধারণ ভোটারদের কাছে কম জনপ্রিয় নয় আরিফ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এবার আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত করা একেবারে সহজ হবে না। নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচন পর্যন্ত দলের ঐক্যকে টেনে নিতে হবে কামরানকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিটিতে যারা বিজয়ী হবেন তারা আগামী নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন। আর সরকারকে একদিকে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করার প্রমাণ করতে হবে, অপরদিকে নৌকার জয় ঘরে তুলতে হবে। এ কারণে আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ বেশি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। গত ১৫ মে খুলনা এবং ২৫ জুন গাজীপুরে প্রথম ধাপের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। সেই ধারাবাহিকতা সিলেটেও ধরে রাখতে মরিয়া দলটি। অনেক দিন পর নৌকা ও ধানের শীষের এই লড়াইকে সামনে রেখে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে ব্যাপক আলোচনা।

উভয় পক্ষই অগ্নিপরীক্ষা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। জয়ী হয়ে তারা নিজেদের পক্ষে ইতিবাচক বার্তা দিতে চায়। দুই দলই স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। টানা দুবারের নির্বাচিত সিটি মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানেই আস্তা রেখেছে আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী এবার জমিয়ে তুলেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। প্রায় এক ১০ মাস আগে থেকে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে মাঠে নামেন। অ্যাডভোকেট জুবায়ের এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিপাকে রয়েছেন আরিফুল হক।

এ অবস্থায় ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনের মতো সুবিধাজনক অবস্থায় নেই আরিফ। সে সময় হেফাজত ঝড় আর জলবদ্ধতা কাল হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ ও কামরানের জন্য। তবে এবার কামরান অনেকটা ফুরফুরে মেজাজেই আছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিলেটে জামায়াতই নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দেবে। আর এজন্য আরিফুল হক চৌধুরী ও বিএনপি জোর চেষ্টা চালিয়েছে জামায়াতের সমর্থন আদায়ের। কিন্তু এখানে বিএনপি জামায়াতের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াতও এ নির্বাচনকে নিজেদের ভোটের মাঠে জনপ্রিয়তা যাচাই করতে সিলেটে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক জামায়াত নেতা।

জামায়াত সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা দেশের পাঁচ সিটি নির্বাচনের মধ্যে শরিক দল হিসেবে জামায়াত শুধুমাত্র সিলেটে বিএনপির সমর্থন চেয়েছিল। বিএনপি আমাদের এই সুযোগ দেয়নি। তবে নগরবাসীর সমর্থন আর আগ্রহের কারণেই ঘড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছি। ৩০ জুলাই নিরপেক্ষ ভোট হলে আমরাই বিজয়ী হবো- ইনশাল্লাহ।

আর বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলছেন, দু-একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য বেগম জিয়ার প্রতীক ধানের শীষের বিজয়ে প্রভাব পড়বে না। কারণ বিএনপি জনগণের দল। আর জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থন এবং নেতাকর্মীর নিরলস প্রচেষ্টায় আমাদের জয় নিশ্চিত হবে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, আমাদের দল ও মহাজোটের প্রত্যেক নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। যেখানে যাচ্ছি সেখানেই মানুষ শেখ হাসিনার নৌকার প্রতীকের প্রতি সমর্থন দিচ্ছেন। আশা করি ৩০ জুলাই বিপুল ভোটের ব্যবধানে নগরবাসী ভালোবাসা নিয়ে বিজয়ী হবো- ইনশাল্লাহ।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৫ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। ১২৮ কেন্দ্রের সব কটির ফলাফলে আরিফ টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ১৭৩ ভোট।