মা-মেয়ে খুন : পেশাদার খুনি দিয়ে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড

চট্টগ্রাম :চট্টগ্রামের খুলশীতে মা ও মেয়েকে হত্যা করে পানির রিজার্ভ ট্যাংকে ফেলে দেয়ার ঘটনাকে পূর্ব পরিকল্পিত ও পেশাদার হাতের কাজ বলে ধারণা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রাথমিক তদন্ত শেষে সম্পত্তির লোভে পরিচিতজনদের হাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে মত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডটিকে গুরুত্বে নিয়ে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

রোববার (১৫ জুলাই) দুপুরে নগরীর খুলশী থানাধীন ফ্লোরা আটার মিল এলাকার নির্মাণাধীন একটি ভবনের পানির রিজার্ভ ট্যাংক থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, মা মনোয়ারা বেগমকে (৯৭) গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চিহ্ন দেখা গেছে। মেয়ে শাহ মেহেরুন নেছা বেগম (৬৭) এর মাথার পেছনে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু চুরি বা ডাকাতির জন্য এ ঘটনা ঘটেছে- তা বলা যাবে না। এমনটা হলে লাশ গুম করার চেষ্টা হতো না, খুন করে লাশ পানির ট্যাংকে ফেলে দিত না।

এর সঙ্গে অবশ্যই অন্য বিষয় জড়িত আছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঠান্ডা মাথার খুনিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সম্পত্তির বিরোধের কারণে সাধারণত এ ধরনের ঘটনা ঘটে।’

এদিকে ঘটনাস্থল ঘুড়ে আসা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাকে শ্বাসরোধ এবং মেয়েকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।

হত্যার পর খুনিরা মেয়ে মেহেরুন নেছার দুটি মোবাইল সেট নিয়ে গেলেও রেখে গেছে সিম দুটি। এমনটা শুধু পেশাদার অপরাধীরাই করে থাকে। সিম নিয়ে গেলে তারা সহজে ধরা পড়বে, এটা তারা জানে।’

নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আবদুল ওয়ারিশ জানান, ঘটনার সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনাস্থল থেকে মেহেরুনের ব্যবহৃত দুইটি সিমকার্ড ও বাড়ির ছাদ থেকে একটি শাবল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়া খুনিরা বাড়ির সামনের দরজা ব্যবহার করেনি। বাসায় দুটি দরজা আছে। একটি মূল দরজা অপরটি ছাদের। ছাদের দরজা দিয়ে ছাদ থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে বাসার ভেতরে আসা যায়।
সম্পত্তির জন্য মা-মেয়ে খুন!

মেহেরুন নেসার বোনের ছেলে বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কারো শত্রুতা নেই। আমার খালা মেহেরুন নেসা ও নানু মনোয়ারা বেগম দুইজনেই বাসায় একা থাকতেন। তিন গন্ডা (৩.৬৩ কাঠা) জায়গার ওপর নিমার্ণাধীন চারতলা ভবনটি আমার খালার নামে। এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল জায়গাটা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছে। সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার জন্য খালা-নানুকে হত্যা করেছে ওরা।’

২০০৬ সালে বাড়ি তৈরির সময় থেকেই স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছিলেন বলেও জানান বেলাল উদ্দিন।

পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তার নাম না প্রকাশের শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধে এ ঘটনা ঘটতে পারে। এবং তা পূর্বপরিচিত অথবা নিকট আত্মীয়দের হাতেই। খুব ঠান্ডা মাথায় মা ও মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, মা-মেয়ে অনেক বছর ধরে এখানে থাকলেও প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না। মনোয়ারা বেগমের পাঁচ মেয়ে ও চার ছেলে। এর মধ্যে দুই ছেলে মারা গেছেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলে দেশের বাইরে থাকেন। এক ছেলে থাকেন ঢাকায়, এক মেয়ে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে ও অন্য মেয়ে থাকেন ময়মনসিংহে। নয় ছেলেমেয়ের মধ্যে মেহেরুন নেছা বিয়ে করেননি। তিনি মাকে নিয়ে এই ভবনে থাকতেন।

তারা আরও জানান, আটার মিল এলাকায় একটি পাহাড়ের ওপর দুটি বাড়ি। স্থানীয়দের কাছে এটি আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। নির্জন ইটের পথ পেরিয়ে প্রবেশ করতে হয় ভবন দুটিতে। এই দুটি ভবনের একটির মালিক মেহেরুন নেছা। মা মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে নিজের ভবনের নিচতলায় থাকতেন তিনি। পুরো ভবনটি চারতলার কাঠামো হলেও কেবল নিচতলার কাজই শেষ হয়েছে।