সুন্দরী রোজেনা- আওয়ামী লীগ বোঝে না!

golam mowla ronyগোলাম মাওলা রনি: সুন্দরী রোজেনার সঙ্গে আমার কোনোকালে সাক্ষাৎ হয়নি। তবে তাকে আমি বেশ ভালো করেই চিনি। তার অপরূপ লাবণ্য ও দেহসৌষ্ঠব সম্পর্কে আমি যা জেনেছি তাতে মাঝেমধ্যে তার চিন্তা যে আমাকে তাড়িত করে না এ কথা দিব্যি করে বলার মতো দেবত্ব আমি আজও অর্জন করতে পারিনি। রোজেনা সম্পর্কে আমি যা কিছু জানি তার শতভাগ কৃতিত্ব কবি আল মাহমুদের। তিনি তার অমর কবিতা অবুঝের সমীকরণে রোজেনা সম্পর্কে মাত্র তিনটি লাইন লিখেছেন। কবি বলেছেন, ‘ও পাড়ার সুন্দরী রোজেনা, সারা অঙ্গে ঢেউ তার, তবু মেয়ে কবিতা বোঝে না।’ সুন্দরী রোজেনা এবং তার অঙ্গে সৌন্দর্যের ঢেউগুলোর সঙ্গে কবিতার কী সম্পর্ক থাকতে পারে সেই চিন্তা যেমন আমাকে তাড়িত করে তেমন রোজেনার চেয়েও বহুগুণে সৌন্দর্যমণ্ডিত ও আকর্ষণীয় হওয়ার পরও আওয়ামী লীগ আসলে কতটুকু কবিতা বোঝে তাও আমাকে কম ভাবায় না। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার আগে রোজেনার সৌন্দর্য, অঙ্গসমূহের ঢেউ ও কবিতা সম্পর্কে দু-চারটি কথা বলা অবশ্যক।

রোজেনার স্বাভাবিক সৌন্দর্য যা তার সুন্দরী বিশেষণের মধ্যে ফুটে উঠেছে তা সব নারী-পুরুষ, আবালবৃদ্ধবনিতা থেকে শুরু করে বনের পশুপাখিকে পর্যন্ত আকর্ষণ করে। রূপলাবণ্য একটি নিষ্পাপ বিষয় যার সঙ্গে প্রায়ই কামনা-বাসনা, লোভ-স্বার্থ ইত্যাদির সংযোগ থাকে না। যে কোনো রূপসী বা রূপবান— সে হোক নদী কিংবা বনবনানী-পাহাড়-সমুদ্র-মরুভূমি অথবা প্রাণিকুলের অন্য কোনো সদস্য তা আপনপরনির্বিশেষে সবাইকে সাধারণভাবে আকর্ষণ করবেই। অন্যদিকে সাধারণ সৌন্দর্যের বাইরে যদি কোনো বিশেষ আকর্ষণ যা মানুষ বা পশুকে প্রলুব্ধ করতে পারে তা যদি কোনো জীবের মধ্যে থাকে তবে অবশ্যই সেই জীবকে কবিতা বুঝতে হবে। মানুষের ধনসম্পত্তি, পদ-পদবির মতো যুবতী নারীর শরীরের ঢেউ খেলানো যৌন আবেদন লোভী মানুষকে মুহূর্তের মধ্যে দুর্বৃৃত্ত বানিয়ে ফেলে। তারা লালসাগ্রস্ত হয়ে উন্মাদের মতো সুন্দরী রোজেনার ঢেউ খেলানো শরীরের ওপর যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার চেয়েও ভয়ঙ্করভাবে পঙ্গপালের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়ে অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতা ও নাম-যশের ওপর।

মানুষের মধ্যে লুক্কায়িত দানবের দুর্বৃত্তপনা ও তাণ্ডব থেকে বাঁচার জন্য কবিতার জ্ঞানের অপরিহার্যতা বোঝানোর জন্যই কবি আল মাহমুদ তার অবুঝের সমীকরণ কবিতায় রোজেনার প্রসঙ্গ এনেছেন। আমরা কবিতা বলতে সাধারণত সেসব চিন্তা-চেতনা ও কল্পনাকে বুঝি যা জীবনকে ছন্দময় গতি এনে দেয়। কিন্তু রোজেনার জন্য যে কবিতার কথা বলা হয়েছে তার অর্থ আরও ব্যাপক। এ কবিতার অর্থ মাত্রাজ্ঞান, ভালোমন্দ বিচার-বিশ্লেষণ করে ভালোটি গ্রহণ ও মন্দকে বিসর্জন করার দুরন্ত সাহসকে বোঝানো হয়েছে। স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করে নিজের সতীত্ব রক্ষার পাশাপাশি জীবনকে চমৎকারভাবে উপভোগ করার কৌশলও কবিতার অন্তর্ভুক্ত। রোজেনার রূপলাবণ্য ও যৌন আবেদন সম্পর্কে একটি প্রচলিত উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। সুন্দরী রোজেনা নামক যৌন আবেদনময়ী যুবতীটি যে সমাজে বাস করেন সেখানকার সব পুরুষ তার সৌন্দর্য দ্বারা আবিষ্ট হবেন। কেউ কেউ প্রেম নিবেদন করার জন্য এগিয়ে আসবেন, কেউ বা বিয়ে করতে চাইবেন।

উপরোক্ত দুই শ্রেণির পুরুষ ছাড়াও একশ্রেণির পুরুষ তাকে কেন্দ্র করে পরকীয়া, লুচ্চামি, নষ্টামি ইত্যাদি করার জন্য লালসাগ্রস্ত হয়ে বিনিদ্র রজনী কাটাবেন। তুলনামূলক ভীরু ও কাপুরুষ প্রকৃতির এই ধরনের লোককে আপনি ছিঁচকে চোর, বাটপাড়, দালাল প্রভৃতি চরিত্রের মানুষের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। অন্যদিকে ডাকাত, সন্ত্রাসী, লুটেরা ও রাহাজানি করার মানসিকতাসম্পন্ন একশ্রেণির মানুষ রয়েছে যারা রোজেনাকে অপহরণ ও সম্ভ্রমহানির ফন্দি-ফিকিরে ব্যস্ত থাকবে। এ ছাড়া চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, পতিতাপল্লী পরিচালনা, জুয়া ও নারী পাচারের মতো অপরাধী মানসিকতাসম্পন্ন লোকেরা রোজেনাকে ছিনিয়ে নিয়ে দেশে বা বিদেশে বিক্রি করে অর্থ রোজগারের ধান্ধা করবে। কাজেই এসব পরিস্থিতি থেকে বেঁচে থাকার জন্য রোজেনাকে নিজের সৌন্দর্য ও যৌন আবেদন সম্পর্কে একদিকে যেমন সচেতন হতে হবে এবং এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থেকে নিরাপদ থাকার জন্য কৌশল জানতে হবে।

ধরুন আমাদের আলোচ্য রোজেনা অত্যন্ত উদারভাবে তার সব প্রেমিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজেকে উজাড় করে দিলেন। সে ক্ষেত্রে সমাজ তাকে পতিতা বা চরিত্রহীনা আখ্যা দিয়ে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবে। অন্যদিকে, তিনি যদি সব প্রেমপ্রত্যাশীকে নির্বিচারে অপমান করেন তাহলেও তিনি একসময় বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। তার প্রতি যারা লোভাতুর, কামাসক্ত এবং তাকে বিক্রি করে যারা টাকা রোজগারের ধান্ধা করেন তাদের সম্পর্কে তিনি যদি উদাসীন থাকেন তবে তার জীবনের অস্তিত্বই হুমকির মধ্যে পড়বে। কাজেই এসব অবস্থা থেকে নিজের জীবন, মানসম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য তাকে কবিতার মতো ছন্দময় কৌশল রপ্ত করতে হবে। কবিতার মধ্যে যেমন সুদূরপ্রসারী চিন্তা, চেতনা ও স্বপ্নের কথামালা লুক্কায়িত থাকে তেমন রোজেনাকেও নিজের রূপ-যৌবন রক্ষার জন্য সুদূর-প্রসারী চিন্তা, কর্ম ও কথামালা সাজাতে হবে। নিজের সঠিক প্রেমিক বা জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার জন্য তাকে একাধারে রুচিশীলা অন্যদিকে বুদ্ধিমতী হতে হবে; অন্যথায় তার রূপ-যৌবন মানুষরূপী পশুদের দ্বারা লাঞ্ছিত ও লুণ্ঠিত হবে। আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা অবুঝ রোজেনার কবিতা না বোঝার বিপদ-বিপত্তির প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নিয়ে আলোচনা করব। আওয়ামী লীগ কি কবিতা বোঝে নাকি বোঝে না তা বলার আগে রোজেনার সৌন্দর্য এবং শরীরের ঢেউয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী দলটির কী কী অন্ত্যমিল আছে তা নিয়ে কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করব। আমার মতো রাজনীতিপাগল বাঙালির কাছে আওয়ামী লীগের আকর্ষণ রোজেনার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। যারা দলটি করেন অথবা করেন না তারা সবাই এ দল সম্পর্কে যথেষ্ট কৌতূহল অনুভব করেন। দলটির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নান্দনিক কর্মকাণ্ড রাজনীতির মাঠে কবিতার মতো বহু শত ছন্দ-রূপ-রস ও সৌরভ সৃষ্টি করেছে। দলের গঠনশৈলী, নীতি-আদর্শ, ত্যাগী নেতা-কর্মী এবং টিকে থাকার ক্ষমতার কারণে আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে যে জৌলুস সৃষ্টি হয়েছে তা দলমতনির্বিশেষে সবাইকে এমনভাবে আকর্ষণ করেছে যা সুন্দরী রোজেনার নিষ্পাপ সৌন্দর্যকেও হার মানিয়েছে।

রোজেনার শরীরে যৌবনের যে ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে তেমনি গত ১০ বছরের বিরতিহীন রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার সুযোগের কারণে আওয়ামী লীগের শরীরেও সুযোগ-সুবিধা, ভাগ্যোন্নয়ন ইত্যাদির ঢেউ খেলে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্য, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, পদ-পদবি ইত্যাদি লাভের সুযোগ যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমন দলের ছত্রচ্ছায়ায় লুটপাট, ঘুষ, দুর্নীতি, দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মারামারি, জুলুম, অত্যাচার ইত্যাদি অপকর্ম করার জন্য রোজেনার যৌবনলোভী অমানুষদের মতো লুটেরা, ধর্ষণকারী, চোরাকারবারি, নারী পাচারকারী, চোর-ডাকাত ইত্যাদি লোক একেবারে হায়েনার মতো যেমন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তেমন শকুনের মতো দূর আকাশে লোভাতুর চোখ, ধারালো ঠোঁট ও ভয়ঙ্কর নখ নিয়ে অনবরত টহলও দিয়ে যাচ্ছে। এদের হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য আওয়ামী লীগ কী কী কবিতা কীভাবে ও কতটুকু রপ্ত করেছে তা অনুধাবনের জন্য রাজনীতির কিছু সমীকরণ নিয়ে আলোচনা করা অবশ্যক।

আমরা কমবেশি সবাই এ কথা জানি যে, কথার জবাব কথা দিয়ে দিতে হয়। কলমের জবাব কলম দিয়ে ও তলোয়ারের জবাব তলোয়ার দিয়ে। কেউ যদি গান গেয়ে রাজনীতির মঞ্চ কাঁপায় তবে তার প্রতিপক্ষকেও অনুরূপ সংগীত রচনা করতে হবে। অনুরূপভাবে নৃত্যের বদলে নৃত্য, মারের বদলে মার ও প্রেমের বিনিময়ে প্রেম। অভদ্রের সঙ্গে ভদ্রতা যেমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ কর্ম তেমন অকৃতজ্ঞকে দান-খয়রাত করা অনুৎপাদনশীল অর্থনৈতিক কর্ম বলে বিবেচিত। অপরাধীর সঙ্গে উদারতা, কৃপণের সঙ্গে লেনদেন, চরিত্রহীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও ভণ্ডকে বিশ্বাস করা আত্মহত্যার চেয়েও ভয়াবহ। নির্বোধকে উপদেশ প্রদান, অহংকারীকে দায়িত্বে নিয়োগ, চতুর ও ঠগবাজকে কাছে স্থান দেওয়ার কারণে মানবজীবনে ভয়াবহ বিপদ ও বিপত্তি ঘটে যায়। অযোগ্য, বদরাগী, চাটুকার ও অসৎ ব্যবসায়ীর পরামর্শ মানুষকে জাহান্নামের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। একজন সাধারণ মানুষ, কিংবা পরিবারের ক্ষেত্রে এসব সমীকরণের ব্যত্যয় ঘটলে যে ভয়াবহ পরিণতি ঘটে তার চেয়েও বহুগুণ ভয়ঙ্কর পরিণতি ঘটে ক্ষমতার রাজনীতির ক্ষেত্রে।

আওয়ামী লীগের অতীতকালে উল্লিখিত সমীকরণগুলোর বিপরীত কর্ম করার কারণে কত বড় সর্বনাশ হয়েছিল তার কয়েকটি উদাহরণ দিলেই সম্মানিত পাঠক দলটির বাস্তব অবস্থা বুঝতে পারবেন। স্বাধীনতার পর পর ইতালির নামকরা একজন মহিলা সাংবাদিক ঢাকায় এসেছিলেন বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য। তাকে সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে না পারার কারণে তিনি স্বদেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যে নিবন্ধ প্রকাশ করেন তা পশ্চিমা মিডিয়াগুলোয় রীতিমতো ঝড় তোলে। আওয়ামী লীগ আজ অবধি সেই দায় মেটাতে পারেনি। একইভাবে একজন আহমদ ছফা বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের যে সর্বনাশ করেছেন তার কলমের মাধ্যমে তা ১০০ জাসদ বা ১ হাজার খন্দকার মোশতাক পারেননি। আহমদ ছফা যখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন তখন কবিতার জ্ঞানশূন্য রাগ চণ্ডাল আওয়ামী নেতৃবৃন্দ তার বিরুদ্ধে কোদাল থেরাপি প্রয়োগ করেছিলেন। ফলে আহমদ ছফা তার সর্বোচ্চ মেধা প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেসব সুখপাঠ্য বিভ্রান্তিকর নিবন্ধ লিখেছিলেন তা আজ অবধি মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছে।

আওয়ামী লীগের অতীতকালে বেশি ভুল হয়েছিল নাকি বর্তমানকালে— তা নিয়ে তার প্রতিপক্ষ কাব্য রচনায় যতটা না ব্যস্ত তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অলসতা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন বর্তমান নেতৃত্ব। সরকারবিরোধীদের শত সহস্র রকমারি, দক্ষ, আকর্ষণীয় বক্তার বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপিত অভিযোগসমূহের গ্রহণযোগ্য জবাব দেওয়ার মতো জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য বক্তা আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেয়নি। অথবা তারা এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। অথচ তারা একবারও ভেবে দেখে না যে, অতীতকালের মিথ্যা অভিযোগ যথা মেজর ডালিমের স্ত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ, বাংলাদেশ ব্যাংক লুট ইত্যাদির মতো বর্তমানকালের বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা লুট, রিজার্ভ লুট, সোনালী ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত দরিয়া ই নুর নামক হীরা লাপাত্তা, কয়লা লুট, ব্যাংক লুট, শেয়ার মার্কেট লুট ইত্যাদি গুজব কত্তোবড় গজব আকারে আগামী দিনগুলোয় তাদের পাকড়াও করবে!

সরকারবিরোধীদের লেখনীর জবাব দেওয়ার মতো শক্তিশালী কলম আওয়ামী লীগের কয়টি আছে তা খুঁজে দেখতে হবে। কিছু লেখক কিছু লেখেন বটে তবে তা কতজন পড়েন তা যেমন লাখ টাকার প্রশ্ন তেমন লেখনীসমূহের মধ্যে কীসব সারবস্তু থাকে তা খুঁজে বের করার জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন। কিছু বক্তা রয়েছেন যাদের দেখলে মানুষের মনে বিরক্তির উদ্রেক হয় এবং যারা কথা বললে জনমত সটাং করে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উল্টা হয়ে যায়। অথচ আওয়ামী লীগ গত ১০ বছরে কত মানুষকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিল, জাতীয় অধ্যাপক, অধ্যাপক ইমেরিটাস ইত্যাদি বানাল, কত মানুষকে একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার ইত্যাদি প্রদান করল কিন্তু তারা দলটির পক্ষে এযাবৎকালে দুই কলম লিখলেনও না এবং একটি কথা মুখ ফুটে বললেনও না। অস্ত্রের চেয়ে শত সহস্র গুণ শক্তিশালী কলম এবং যে কোনো বোমার চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী মানুষের কণ্ঠের বিধ্বংসী ক্ষমতা রুখে দেওয়ার চিরন্তন পদ্ধতি প্রয়োগ না করে শক্তি প্রয়োগ এবং ভয় প্রদর্শন যে কতটা দুর্বল ও অকার্যকর তা কি আওয়ামী লীগ বোঝে, নাকি বোঝে না?

ক্ষমতাকেন্দ্রিক দুর্বৃত্তপনা, ক্ষমতার স্বাদ লেহনকারী চাটার দল, সুসময়ের মধুমক্ষিকা, ক্ষমতার দালাল, লুটেরা, চোর-বাটপাড়, ডাকাত, ক্ষমতালোভী মীরজাফর, জগেশঠ ইয়ার লতিফ, বিশ্বাসঘাতক ও নিষ্ঠুর হত্যাকারী ব্রুটাস, মোহাম্মদী বেগরূপী জল্লাদদের কাছ থেকে দূরে থাকা অথবা তাদের চক্রান্ত থেকে বেঁচে থাকার কাব্যিক ছন্দ আওয়ামী লীগ কতটা রপ্ত করতে পেরেছে তা দলটির নিরীহ নেতা-কর্মীরা আজও টেরও পাননি। আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদের ক্ষমতা লাভের সম্ভাবনা সামনে রেখে সাধুবেশে শয়তানরা যেভাবে উল্লাসনৃত্য শুরু করেছে তাতে চিরাচরিত রাজনীতির কবিতার ছন্দপতন ঘটাবে এবং আগামী দিনগুলোয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পক্ষে আওয়ামী লীগ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। ত্যাগী নেতা-কর্মী, নিঃস্বার্থ সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের হয়তো নব্য আওয়ামী লীগার, লুটেরা হাইব্রিড, দুর্বৃত্ত কাউয়া এবং ডাকাত ফার্মের মুরগিদের তোয়াজ-তদবির করে অথবা তাদের সুপারিশ, দয়া-করুণা ও অনুকম্পা নিয়ে দল করতে হবে। শীর্ষ নেতৃত্ব যদি যথাসময়ে এবং যথানিয়মে তার কাব্যপ্রতিভা প্রয়োগ করে রাজনীতির কবিতার অমৃতাক্ষর ছন্দের ঝঙ্কারে আওয়ামী লীগের সারা অঙ্গের ঢেউলোভীদের সামাল দিতে পারেন তবেই রক্ষা!

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট। বাংলাদেশ প্রতিদিন থেকে সংগৃহীত।