ঢাকা: সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ বেশ কয়েকজন প্রবীণ নেতা।
এরপর থেকেই এই বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে সরব আলোচনা চলছে। বলা হচ্ছে, তাদের নেতৃত্বাধীন দলগুলো ক্ষমতাসীন মহাজোটে যোগ দিচ্ছে। যদিও নাজমুল হুদা ছাড়া কাদের সিদ্দিকী কিংবা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ নিয়ে কোনো বক্তব্য এখন পর্যন্ত দেননি।
তবে রোববার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগ ও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি একেবারেই রাজনৈতিক নয়। আমাদের একটা সম্পর্ক আছে। তিনি বাংলাদেশের একজন বীরউত্তম মুক্তিযোদ্ধা। তাছাড়া তিনি এক সময় আমাদের মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন। কনস্ট্রাকশনের কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখানে ওনার কিছু পাওনা আছে। সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি বলেছি, আপনার যেটা পাওনা আছে, সে বিষয়ে যেসব কাগজপত্র আছে তা আমার পিএসের কাছে দেন। যেটা পাওনা আছে, সেটাতো দিতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আলাপের ফাঁকে ফাঁকে রাজনীতি এবং জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।’
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেলিম আর আমি একসঙ্গে এক সময় ছাত্রলীগ করতাম। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে আমরা রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছি। মিছিল নিয়ে কলাবাগান পার হচ্ছি, দিনটি ছিল ১৮ সেপ্টেম্বর। কলাবাগান পর্যন্ত যেতেই আমরা খবর পেলাম জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে, তার লাশ আত্মীয়-স্বজনের কাছে দেয়ার জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে ভাবছি তার (সেলিম) অফিসে যাব চা খেতে। সেদিন সেলিম সাহেব বিকেলে যেতে বলেন। এরপর গেলাম, দেখা ও কথা হলো। সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। হাইড অ্যান্ড সিক্রেটের বিষয় নয়। তারা তাদের জোট যে প্রগতিশীল বাম জোট আছে তারা তাদের মতো করেই তাদের অ্যালায়েন্সে থাকবেন। তারা সেভাবেই নির্বাচনে যাবেন। তবে তিনি বলেছেন আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আমাদের স্পিরিটটা একই। একাত্তরের চেতনাটা আমাদের আছে থাকবে। কাদের সিদ্দিকীর মেজাজও একই রকম। আমাদের স্পিরিটিটা একই। আমি বলেছি, অ্যালায়েন্স করেন আর যাই করেন এ স্পিরিটট ধারণ করেই সব সিদ্ধান্ত নেন।’
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের সঙ্গে ফোনালাপ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘অলি আহমদকে স্পেস দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কুমিল্লায় একটা মিটিংয়ে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সেই ইস্যুতে আমি তার সঙ্গে আলোচনা করেছি। আপনি নেক্সটে কোনো মিটিং হলে আমাকে জানাবেন। আমি আলাপ করে নিব সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। তাছাড়া এখন স্পেস দেয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে। আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজির সঙ্গে কথা বলেছি। আমি অলি আহমদকে বলেছি, আমরা রাজনীতি করি আমাকে জানাবেন যেকোনো জায়গায় মিটিং করতে চাইলে। আমি বিষয়টা নিয়ে কথা বলব।’
এ সময় জোট সম্প্রসারণের কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা কেউ যদি আসতে চায় তাহলে আমরা আমাদের পরিসরে আলোচনা করব। আমাদের জোটের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে সেটা আমরা বিবেচনা করব।’
বাম রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগের জোটে আনাতে কোনো চেষ্টা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, কাদের সিদ্দিকী ও সিপিপি সভাপতি। আমি কিন্তু এ আলোচনায় কোনো মিডিয়ায় খবর দেইনি। এটা নিয়ে যদি কোনো জাতীয় রাজনীতির বিষয় থাকতো, তাহলে আমি মিডিয়ায় খবর দিতাম। কাদের সিদ্দিকী সাহেব সচিবালয়ে এসেছেন, আমি তখনো মিডিয়ায় খবর দেইনি। এগুলো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে বলতে পারেন। তবে আমি কথা বলতে গেছি, সেখানে রাজনীতির কোনো কথা হবে না? জোট সম্প্রসারণের আলোচনা একেবারেই প্রাথামিক পর্যায়ে আছে। তবে সিপিবি বলেছে তারা আওয়ামী জোটেও থাকবে না, বিএনপি জোটেও থাকবে না। এটা তারা ক্লিয়ারলি বলেছে। তারা তাদের আদর্শ ধারণ করে।’
কিন্তু, আপনারা তাদের জোটে নিতে চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা চাইলে তো হবে না। তারা চাইতে হবে। চাওয়াটাতো আমাদের ওপর নির্ভর করবে না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি। এটা নিয়ে ফাইনালি কিছু হয়নি। যদি এটা কোনো মেরুকরণ বা স্ট্রেটাজিক্যাল কোনো অ্যালায়েন্সের দিকে আগায় তাহলে সেটাতো গোপন থাকবে না।’
সোমবার হতে যাওয়া তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি আশা করি বিএনপি মাঠে থাকবে। মাঠে না থাকার কোনো কারণ নেই। তারা বলেছেন, মাঠে থাকবেন। আমি তাদের এই স্পিরিটকে ওয়েলকাম করছি।’