হারাম উপার্জনের পরিণতি

হজরত আবুদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, হুজুর (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো বান্দা যদি হারাম মাল উপার্জন করে এবং আল্লাহর রাহে সদকা করে, তাহলে ওই সদকা বা দান তার পক্ষ হতে কবুল করা হবে না এবং যদি তার নিজের জন্য এবং পরিবারের জন্য ব্যয় করা হয়, তবে তা ‘বরকত’ শূন্য হয়।

যদি সে ব্যক্তি ওই মাল রেখে মারা যায়, তবে তা তার জাহান্নামের পথের সম্বল হবে। আল্লাহ তায়ালা খারাপ জিনিসকে খারাপ জিনিস দ্বারা মুছে ফেলেন না বরং মন্দকার্যকে সৎকার্য দ্বারা মুছে ফেলেন। খারাপ জিনিস খারাপ জিনিসকে মুছে ফেলে না।’ হজরত জাবের (রা:) বলেন, হজরত নবী করিম (সা:) বলেছেন, ‘হারাম মাল দ্বারা প্রতিপালিত গোশতের টুকরা বেহেশতে প্রবেশ করবে না এবং তা দোজখে প্রবেশেরই উপযোগী।’

হজরত আবুদল্লাহ ইবনে উমর (রা:) কর্তৃক বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি ১০ দেরহাম মূল্যের একখানা কাপড় খরিদ করছে, আর এতে একটি দেরহাম যে কোনো হারাম উপায়ে অর্জিত, এমতাবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত ওই কাপড়খানা তার শরীরে থাকবে, আল্লাহপাক তার নামাজ কবুল করবেন না।’ এই বলে ইবনে উমর (রা:) স্বীয় কর্ণদ্বয়ে আঙুল দিয়ে বললেন, ‘এই শব্দগুলো আমি হুজুর (সা:)-এর কাছে শ্রবণ না করলে আমার কর্ণদ্বয় বধির হয়ে যাক, অর্থাৎ এ কথা আমি নিশ্চিতরূপে হুজুর (সা:)-এর কাছে শুনেছি।’

হজরত আবু হোরায়রা (রা:) বলেন, হুজুর (সা:) বলেছেন, ‘মানুষের ওপর এমন এক যামানা আসবে যখন লোক মাল কিভাবে অর্জন করেছে- হালাল কিংবা হারাম উপায়ে, তার কোনো পরোয়া করবে না।’

হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা:) বর্ণনা করেন : হজরত আবু বকর (রা:)-এর একজন কৃতদাস যা উপার্জন করত, তা থেকে সে নিজের মনিবকেও নির্ধারিত অংশ প্রদান করত। হজরত আবু বকর (রা:) তার উপার্জন ভোগ করতেন। একদা খাওয়ার জন্য সে কোনো জিনিস উপস্থিত করলে আবু বকর (রা:) তা থেকে খেলেন। খাওয়া শেষে কৃতদাস বলল, ‘এটা কি জিনিস আপনি জানেন কি?’ আবু বকর (রা:) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এটা কি ছিল?’ কৃতদাস উত্তরে বলল, ‘জাহেলিয়াতের যুগে আমি এক ব্যক্তিকে গায়েবি কথা বলতাম, অথচ আমি তাকে এ দ্বারা ভালো ধোকা দিতাম। আজ তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে সে আমাকে এই জিনিসটি দান করে।’ হজরত আয়েশা (রা:) বলেন, ‘এটা শ্রবণ করে আবু বকর (রা:) গলার ভেতর আঙুল প্রবেশ করিয়ে যা খেয়েছিলেন তা বমি করে বের করে ফেলেন।’

হজরত আবু ওমামা (রা:) বলেন, হুজুর (সা:) বলেছেন, ‘যে সকল নারী গান-বাজনা করে তাদের সাথে ক্রয়-বিক্রয় করো না এবং তাদেরকে গানও শেখাবে না। তাদের এই কাজে অর্জিত মূল্য হারাম-নিষিদ্ধ।’ এই সম্পর্কে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ, কতিপয় এমন লোকও আছে যারা খেল-তামাশার কথা খরিদ করে। যখন কৃতদাসীদের জন্য গান-বাজনা ও গান শিক্ষাদান করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তখন স্বাধীন মহিলাদের জন্য এ পেশা চরমভাবে নিষিদ্ধ।

হজরত রাফে ইবনে খোদায়জ (রা:) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা:) বলেছেন : ‘কুকুরের মূল্য অপবিত্র, ব্যভিচারিণী মহিলার আয় নিষিদ্ধ এবং সিঙ্গাদানকারী নারীর পারিশ্রমিক নিষিদ্ধ।’ অপর বর্ণনা মতে, বিড়ালের ক্রয়-বিক্রয়ও নিষিদ্ধ। হারাম পেশা অবলম্বনের মাধ্যমে আয় উপার্জন ইসলাম সমর্থন করে না। বর্ণিত হাদিস তারই নির্দেশক।