আলোকচিত্রী শহিদুলের চিকিৎসার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ

আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে হাসপাতালে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

সোমবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর শহিদুল আলমের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন।

শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হাইকোর্টের আদেশ ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাই আবেদনটি অকার্যকর হয়ে গেছে।

এ সময় শহিদুলের আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, শহিদুল আলমকে নির্যাতনের বিষয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে সংশ্লিষ্ট আদালতের (হাইকোর্ট) আদেশের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সে আদেশ এখনও প্রতিপালন করা হয়নি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিষয়টি হাইকোর্টের। তখন সারা হোসেন বলেন, বিষয়টি আদালতের নজরে আনলাম।

আদালত বলেন, চাইলে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনতে পারেন। এর পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করার আদেশ দেন আদালত।

উল্লেখ্য, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ৪ ও ৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ঝিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেসবুক লাইভে আসেন অধিকারকর্মী আলোকচিত্রী শহিদুল।

ওই আন্দোলনের বিষয়ে আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন।

এর পর ৫ আগস্ট রাতে ধানমণ্ডির বাসা থেকে দৃক গ্যালারি ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুলকে আটক করে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল।

পর দিন আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ।

কিন্তু শহিদুলকে ডিবি হেফাজতে নির্যাতন করার অভিযোগ এনে রিমান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৭ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন তার স্ত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ।

৬৩ বছর বয়সী শহিদুলকে হাসপাতালে পাঠানোর আবেদন জানিয়ে করা আবেদনে বলা হয়, পুলিশ হেফাজতে শহিদুলকে নির্যাতন এবং চিকিৎসা না দিয়ে তাকে রিমান্ডে পাঠানোর মাধ্যমে সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে।

ওই আবেদন শুনে আদালত দ্রুত শহিদুলকে ডিবি হেফাজত থেকে হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে ৯ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার বিচারপতির আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে।

চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ না দিয়ে আবেদনটি ৯ আগস্ট আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। এদিন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি আজ সোমবার পর্যন্ত মুলতবি রাখেন আপিল বিভাগ।

এদিকে হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, ৮ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে শহিদুল আলমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়।

বিএসএমএমইউর মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহর নেতৃত্বে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড কেবিন ব্লকের পাঁচ তলার একটি কক্ষে শহিদুল আলমকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

এর পর শহিদুল আলমকে ফের ডিবি পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়। পরে মেডিকেল বোর্ড আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে বলা হয়, শহিদুল আলম ইজ ফিজিক্যাল সাউন্ড (শারীরিকভাবে সুস্থ)।

এদিকে শহিদুল আলমের সাত দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ায় গতকাল রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।