দেশে তামাক ব্যবহারের হার কমেছে ৮ শতাংশ

* দেশে ধূমপান করে এক কোটি ৯২ লাখ মানুষ * ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে
* বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ৫৪.৯ শতাংশ


আট বছরে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার ৮ শতাংশ কমেছে। ২০১৭ সালের গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভেতে (গ্যাটস) এই তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে ‘গ্যাটস ২০১৭’ এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি তত্ত্বাবধানে ২০১৭ সালের গ্যাটস পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে সার্বিকভাবে (ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন) তামাক ব্যবহারের হার ছিল ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৭ সালের জরিপে এই হার কমে হয়েছে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। সার্বিক তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে আগে পুরুষ ছিল ৫৮ শতাংশ ও নারী ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এখন পুরুষ ৪৬ শতাংশ ও নারী ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।’

এখন দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তামাক ব্যবহার কমার তুলনামূলক হার প্রায় ১৮ শতাংশ, যা বর্তমান সরকারের সাফল্যের স্বাক্ষর বহন করে।’

নাসিম বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে একটা ভালো কাজ করেছি। আমি নিজেও ৫ বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম ধূমপান কমিয়ে আনা যায় কি না। সার্ভে রিপোর্টে দেখা গেছে, তামাক গ্রহণের হার কমেছে। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন করেছি, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর ১ শতাংশ হারে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করেছি। তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০ শতাংশ স্থানজুড়ে সচিত্র সতর্কবাণী মূদ্রণের ব্যবস্থা করেছি।’

আগের চেয়ে সার্বিক ধূমপানের হার ৫ শতাংশ কমেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে ধূমপান করা মানুষের হার ছিল ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ ও নারী এক দশমিক ৫ শতাংশ। এখন ধূমপানের হার ২০ দশমিক ৬ শতাংশ, এর মধ্যে পুরুষ ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ ও নারী শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।’

বাংলাদেশে এখন এক কোটি ৯২ লাখ মানুষ ধূমপান করে বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

বর্তমানে বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ৫৪ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ- জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যা ২০০৯ সালের জরিপে ছিল ৩৯ শতাংশ। কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার মানুষের হার ৬৩ শতাংশ থেকে এখন কমে হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ।’

‘আগে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হত, ২০১৭ সালের সার্ভেতে এই হার ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ।’

স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আগে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ ধূমপানে শিকার হলেও এখন তা কমে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।

গ্যাটস হলো ১৫ বছর বা এর বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃত জরিপ, যা তামাক ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণের একটি মানদণ্ড। সাধারণত ৫ বছর পরপর এই জরিপ পরিচালিত হয়।

জরিপ অনুযায়ী কোন বয়সের মানুষের মধ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেশি জানতে চাইলে বিবিএসের একজন কর্মকর্তা অনুষ্ঠানে জানান, এখন জরিপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও আগের জরিপের তুলনামূলক বিবরণটা দেয়া হয়েছে। মূল তথ্যগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। বিস্তারিত রিপোর্টটা প্রস্তুত করা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে তা প্রকাশ করা হবে, তখন এসব তথ্য পাওয়া যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের অর্থায়নে ‘গ্যাটস-২০১৭’ পরিচালনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।