প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১লা সেপ্টেম্বর সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টনে তারা সে সমাবেশটি করতে চায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে অনুমতি মেলেনি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে বাধা এলে রাজনীতিতে বইতে পারে নতুন উত্তাপ। কারাবন্দি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতেও আন্দোলনের হুমকি দিয়ে রেখেছেন দলটির নেতারা। অন্যদিকে জনগণের সম্মিলিত শক্তিকে জোরদার করার লক্ষ্যে সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গণসংযোগ, জনসভা ও গণসমাবেশের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যুক্তফ্রন্ট।
একই সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মসূচি পালন করবে ৮টি বাম দল নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট। ইসলামী দলগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে আন্দোলনের। কিন্তু হুট করেই কোনো সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচি দেবে না বিএনপি। সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলে সঠিক সময়ে রাজপথে নামতে চায় তারা।
শনিবার কারাগারে সাক্ষাৎ করতে গেলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তেমনই বার্তা দিয়েছেন কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা বিষয়ে ৪টি নির্দেশনা দিয়েছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দল ও জোটের ঐক্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগে দল ও জোটের ঐক্য ঠিক রাখতে হবে। দল ও জোটের ঐক্য ঠিক রেখেই চলতে হবে জাতীয় ঐক্যের পথে। কারণ বিএনপি ও জোট নেতাদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করবে সরকার। সে ধরনের ফাঁদে যেন কেউ পা না দেয়। এ ব্যাপারে নেতাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশনাও দিয়েছেন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সজাগ ও সতর্ক থেকে গণতন্ত্রের সংগ্রাম অব্যাহত রাখার। সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের জন্য যত ধরনের প্রস্তুতি দরকার তার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এজন্য প্রার্থী বাছাই, কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনসহ প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সেরে নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। খালেদা জিয়া পরিষ্কার বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলন এবং নির্বাচনে ভালো ফলাফল অর্জন দুই ধরনের প্রস্তুতিই যেন থাকে বিএনপির। সূত্র জানায়, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে বিএনপিকে জড়িয়ে আগাম বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এটা বিশেষ কোনো চক্রান্ত বাস্তবায়নের ইঙ্গিত হিসাবে মনে করে বিএনপি। তাই ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন এবং তার মামলা পরিচালনার বিষয়ে ভুল এড়াতে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন। তার সে নির্দেশনা অনুযায়ী দু-একদিনের মধ্যেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের জবাব দেবে বিএনপি। সূত্রগুলো জানায়, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয়ে কোনো আলাপ হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। কিন্তু এ সাক্ষাৎটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১৩ জন সদস্যের জন্য এ সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে একাই সাক্ষাৎ করেছেন মহাসচিব মির্জা আলমগীর। আর খালেদা জিয়ার সঙ্গে মহাসচিবের একা সাক্ষাতের সিদ্ধান্তের মধ্যেই রয়েছে অনেক প্রশ্নের উত্তর।
এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানামুখী গুঞ্জন এখন রাজনৈতিক মহলে। নেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বাড়ছে কৌতূহল। মহাজোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে কি যুক্ত করা হচ্ছে এক প্লাটফর্মে? কোন দিকে মোড় নিচ্ছে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের গতিপথ। বিএনপি কি খালেদা জিয়াকে ছাড়াই নির্বাচনে যাবে, নাকি তার কারামুক্তির দাবিতে আন্দোলনের মাঠে নামবে সহসা? বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজপথমুখী পথচলার একটি উত্তাপ বইছে রাজনীতির সামগ্রিক পরিবেশে। কিন্তু চট করেই সে পথে হাঁটবে না বিএনপি। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই বিএনপিতে। কিন্তু সে আন্দোলনের দিনক্ষণ, ধরন ও গতিপ্রকৃতি কেমন হবে তা এখনও আলোচনার পর্যায়ে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিলকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটতে পারে। সেটা হতে পারে অক্টোবরে। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্য প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি বড় সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম। ফলে সেপ্টেম্বরকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের দৃশ্যমান পথচলার মাস ধরে অক্টোবরকে (সম্ভাব্য তফসিল ঘোষণার পর) টার্গেট রেখেই সব প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আর সরকারের চেহারা ও আচরণের ওপর নির্ভর করবে আন্দোলনের ধরন ও কৌশল। আন্দোলন হবে কার্যকর কর্মসূচির মাধ্যমে জোরালো কিন্তু স্বল্পকালীন। আর সবার্ত্মক আন্দোলন ও নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই সারাদেশে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ইউনিটের দুই শতাধিক নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপিসহ অঙ্গদলগুলো। পযার্যক্রমে যেসব সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণার বাকি রয়েছে স্বল্প সময়ের মধ্যেই সেসব কমিটিও ঘোষণা করা হবে। যেসব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আংশিক কমিটি আছে শিগগির সেগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হবে। ওদিকে দশম জাতীয় সংসদের মতো এবারও সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে বলেই অভিযোগ বিএনপির। তবে দলটির নেতারা এ-ও বলছেন, এবার তারা সরকারকে একতরফা নির্বাচন করতে দেবে না। ঈদের দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেছেন, সরকারকে অতীতের মতো আর একতরফা নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির মতো আবারও একতরফা নির্বাচন জনগণ প্রতিহত করবেই। শূন্য মাঠে আর খেলতে দেয়া হবে না। সামপ্রতিক সময়ে নেতাদের এমন বক্তব্যের মধ্যেই মিলছে নির্বাচনী প্রস্তুতির ইঙ্গিত।
বিএনপি নেতারা জানান, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছে বিএনপি। কারণ, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে আগ্রহী দলগুলোর তরফে উঠে আসছে নানা ধরনের পর্যবেক্ষণ ও দাবি-দাওয়া। যার কিছু কিছু বিষয়ে বিএনপির দ্বিমত না থাকলেও কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া তাদের জন্য কঠিন। সূত্র: মানবজমিন