ইভিএম নিয়ে আপত্তির বিস্তারিত তুলে ধরলেন ফখরুল

আগামী জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ১০০ আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ( ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। যদিও এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এই আলোচনা ‍শুরু হওয়ার পর থেকেই ইভিএমের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়ে আসছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইভিএমের বিষয়ে আপত্তির কারণসহ নিজেদের সার্বিক অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফখরুলের লিখিত বক্তব্যটি তুলে ধরা হলো-

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞগণের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং অধিকাংশ আইটি বিশেষজ্ঞগণের পরামর্শকে তোয়াক্কা না করে সরকার ও তার অনুগত নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করার জন্য তড়িঘড়ি করে আরপিও সংশোধন করার অপকৌশল গ্রহণ করছে। জনগণের কষ্টার্জিত প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এক লাখ ৫০ হাজার ইভিএম/ডিভিএম যন্ত্র অতিগোপনে সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জনগণের অর্থ লুটপাট ও তাদের ভোটাধিকার হরণে নির্বাচন কমিশনের এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সরকারি আর্থিক শৃঙ্খলা ও নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অতি দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন যেখানে ২০১০ সালে দশ হাজার টাকা মূল্যে একটি ইভিএম মেশিন ক্রয় করেছিল সেখানে আজ ২০ গুণ বেশি দামে প্রতিটি ইভিএম মেশিন দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকায় ক্রয় করতে চাচ্ছে। এটা জনগণের অর্থ লোপাটের আরেকটি উদ্যোগ বৈ আর কিছুই নয়। এটি হচ্ছে আসলে সরকার ও কমিশনের একটি অশুভ পার্টনারশিপ। অর্থাৎ ‘তোমরা জনগণের অর্থ লুটপাট করে খাও, আমাদেরকে ভোটে পাশ করিয়ে দাও’। আসলে আওয়ামী লীগ এখন জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে যন্ত্রের ওপর ভর করেছে।

ফখরুল বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশ্যে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা গত বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সুধীজন এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞগণের সাথে সংলাপ করেছেন। সংলাপে অংশগ্রহণকারী ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ইভিএম/ডিভিএম পদ্ধতি ব্যবহার না করার পরামর্শ/প্রস্তাব দিয়েছেন। আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য এবং সর্বজনীন আস্থা সৃষ্টি না হলে ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে না।

তিনি বলেন, সংলাপ ছাড়াও আমরা আলাদাভাবে নির্বাচন কমিশনের সাথে সাক্ষাৎ করে বিতর্কিত ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতির তথ্য উপাত্তসহ নির্বাচনে এটা ব্যবহার না করার যৌক্তিক বক্তব্য ও লিখিত দরখাস্ত দিয়েছিলাম। এটি ব্যবহার সম্ভব নয় মর্মে তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন হঠাৎ করে কী ঘটলো, কী কারণে, কার নির্দেশে, কাকে নির্বাচনে বিজয়ী করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন গোপনে তাড়াহুড়া করে এই বিতর্কিত এবং সারাবিশ্বে প্রায় পরিত্যক্ত ইভিএম যন্ত্র কেনার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে? দেশের জনগণ যেকোন মূল্যে নির্বাচন কমিশনের এই অপতৎপরতা অবশ্যই প্রতিহত করবে। এই বিতর্কিত যন্ত্র কেনার জন্য ব্যয়িত প্রতিটি পয়সা কমিশনের কর্তাদের ব্যক্তিগত দায় হিসেবে গণ্য হবে। এই অপকর্মের সম্পূর্ণ দায়ভার নির্বাচন কমিশকে বহন করতে হবে।

তিনি বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতির সঙ্গে এ ধরনের নগ্ন প্রতারণা এবং অসৎ উদ্দেশ্যে জনগণের বিপুল অর্থ লুটপাটের ষড়যন্ত্র দেশবাসী কোনোভাবেই মেনে নেবে না। তাই আমরা আবারও হুঁশিয়ার করছি, অবিলম্বে ইভিএম/ডিভিএম ক্রয়ের উদ্যোগ পরিত্যাগ করুন। নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতাকে আরও ঘনীভূত করবেন না। জনগণের কথা ভাবুন, এখনও সময় আছে। তা না হলে যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনই দায়ী থাকবে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এই ডিজিটাল কারচুপির পথ থেকে সরে আসুন। অন্যথায় ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে এই অপতৎপরতার জন্য মূল্য দিতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী ইভিএম মেশিন সংগ্রহ করার জন্য একজন দলবাজ ও দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তাকে কিছুদিন আগে নির্বাচন কমিশনের আইডিএ প্রকল্প শেষে বিএমটিএফ এ পদায়ন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সদ্য সমাপ্ত পিইআরপি প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বসানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এ দুটি প্রকল্পের শত শত কোটি টাকার হিসাব জনগণ জানতে চায়। কারা এসকল প্রকল্পে কতবার বিদেশে গিয়ে কি করেছেন তাও জনগণের অজানা নয়। তাছাড়া, একজন চরম দলবাজ ও দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তা হেলালুদ্দীনকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব পদে বসানো হয়েছে। এই সচিবই গণমাধ্যমে বলেছে, আরপিও সংশোধন করা হবেনা। তাহলে, কেন আরপিও সংশোধন করে ইভিএম ব্যবহারের উদ্যেগ গ্রহণ করা হচ্ছে? কারা নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে? বর্তমান নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ২০০৮ সালে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক হিসাবে দায়িত্বপালন করেন। এই প্রকল্পে কত অর্থ নয়-ছয় হয়েছে তা দেশবাসী জানে।

তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলে নিতে চাই, ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের অপকর্মের সঙ্গী আর হবেন না। মনে রাখবেন, জনগণ আপনাদের কাছ থেকে কড়ায় গন্ডায় তাদের কষ্টার্জিত অর্থ অপচয়ের হিসাব নেবেন। জনগণের অর্থ লোপাট ও অপব্যবহার করে কেউই রেহাই পাবে না। নির্বাচন কমিশন সংলাপে আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম/ডিভিএম চালুর প্রস্তাব দেয়। শাসক দলের প্রধানমন্ত্রী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চালু করার পরিকল্পনার কথা সংসদে তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেছি, নির্বাচন কমিশন সরকারের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল অপতৎপরতার সঙ্গী হয়, নির্লজ্জভাবে তড়িৎ সাড়া দেয়।

ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন ইভিএম ক্রয়সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) এর উদ্দেশ্য অংশে ভোটগহণ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত, বিশ্বাসযোগ্য, ভোটগ্রহণ এবং ভোটগণনা দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ইভিএম ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ ইভিএম-এর মাধ্যমে যে ভোট জালিয়াতি করা যায় তা আজ বিশ্ব স্বীকৃত। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট এবং তথ্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত। আপনারা জানেন, কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে যে ইভিএম ব্যবহার করেছে তাতেও কোন কোন জায়গায় বিশেষ করে বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনায় ইভিএম কখনো কখনো বন্ধ হয়ে গেছে, একজনের ভোট আরেকজন দিয়েছে, কোথাও ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে হয়েছে। ১৫ জুন ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ভোটকেন্দ্রে একটি ইভিএম মেশিন অকার্যকর হয়ে যায়, যা নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ চলাকালীন সময়ে আর মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে পরবর্তীতে আরেকদিন ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে হয়েছে। তাছাড়া, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ইভিএম দিয়ে ভোট সম্পন্ন করতে সন্ধ্যা ৬.০০ টারও বেশি বেজে যায়। অর্থাৎ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইভিএম এর ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনের দ্রুত ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনার উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, কমিশন যে ইভিএম ব্যবহার করছে তা সহজেই ম্যানিপুলেট করা যায়। কমিশন বলছে, ভোটারের বায়োমেট্রিক ছাড়া মেশিন কার্যকর হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ভোটার ছাড়াও চাইলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার তার নিজের বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে ইভিএমকে ভোটদানের উপযোগী করতে পারে। ফলে অসাধু সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের মাধ্যমেই যে কোন প্রার্থীর পক্ষে সকল ভোট সহজেই কাস্ট করা সম্ভব। ইভিএম এর ‘পোল কার্ড’ এ ভোটারদের ভোটদানের সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এ ‘পোল কার্ড’ এর মাধ্যমেই ভোটের ফলাফল গণনা করা হয়। ইভিএম এর সাথে একটি ডুপ্লিকেট ‘পোল কার্ড’ থাকে এবং এ ‘পোল কার্ড’ পরিবর্তন করা যায়। ফলে পূর্ব থেকেই ডুপ্লিকেট পোল কার্ডে ফলাফল সেট করে গণনার সময় তা ব্যবহার করে ভোটের ফলাফল সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়া সম্ভব। ইভিএম এর ব্যালট ইউনিটে ডামি প্রতীক ব্যবহার করেও ভোটের ফলাফলকে ম্যানিপুলেট করা যায়।

ফখরুল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং/ইভিএম/ডিভিএম যাই বলা হোক না কেন তা চালু করার বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অবস্থান একেবারেই পরিস্কার। আমরা মনে করি এই ইভিএম পদ্ধতির উদ্যোগ দূরভিসন্ধিমূলক ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনগণের ভোটাধিকার হরণ বৈ আর কিছুই নয়।

তিনি বলেন, পৃথিবীর ৯০ ভাগ গণতান্ত্রিক দেশে ই-ভোটিং/ইভিএম/ডিভিএম পদ্ধতি চালু নেই। হাতেগোনা যে কয়টি দেশ এটা চালু করেছিল প্রচণ্ড সন্দেহ ও বিতর্কের পর তারা এটি থেকে সরে এসেছে। জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, নেদাল্যান্ডস, ফ্রান্স ইত্যাদি উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ বির্তকিত এ পদ্ধতি ইতিমধ্যে পরিত্যাগ করেছে।

ফখরুল বলেন, নেদারল্যান্ডস ভোটারদের আস্থা, স্বচ্ছতা, বিশ্বাস ও অনিশ্চিত নিরাপত্তার কারণে এই পদ্ধতি থেকে সরে এসেছে। জার্মানী এ পদ্ধতিকে ÒUnconstitutional due to lack of transparency to a common voterÓ হিসাবে অভিহিত করে বাদ দিয়েছে। ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্ট ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আয়ারল্যান্ডস ২০০৬ সালেই ই-ভোটিং পরিত্যাগ করেছে। ভারতেও অতি সম্প্রতি ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট কারচুপির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ইতালি বলেছে ÒEVMs are easy to falsifyÓ ।

ইভিএম/ডিভিএম একটি সফট্ওয়্যার ভিত্তিক যন্ত্র। এ সফট্ওয়্যার এর বিষয়ে বিভিন্ন যৌক্তিক বিশ্লেষণ রয়েছে যেমন It is internationally well documented that EVMs are prone to inconsistencies, and can be tampered both externally by hackers and internally by insiders. The more advanced technology progresses the more vulnerable cyber hacking has become. c„w_ex weL¨vZ software company ‘MICROSOFT’ ej‡Q “there is no software in the world which cannot be hacked or crackdown”.

পৃথিবী বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান গওঞ’র একজন অধ্যাপক ঊঠগ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন। তিনি তাঁর ঊঠগং; the traditional ballot system where only the election officials were the “insiders”, electronic voting machine regime has spawned a long chin of insiders including the manufacturers of the EVMs, programmers, foreign companies fusing microchips abroad and their suppliers/vendors, maintenance engineers, local officials etc. These private players may have their own agendas and preferences. This may include running Government.

“Outsiders” are people who can manipulate the EVMs, away from the machines with gadgets whilst voting is in process. The serious dangers from outsiders are that they can change the results to elect a terrorist organization, cults, and extremists etc of which the results will be Final… Doom for ever as there will be no room for contesting it.

তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে ইভিএমে জালিয়াতির সুযোগ থাকায় এক চাপে পাঁচটি ভোট দেয়া সম্ভব। তাছাড়া, দেশের কিংবা বিদেশের মাটিতে বসেও ঊঠগ হ্যাক করা যায় এবং একটি ঊঠগ হ্যাকিং করতে এক মিনিটের বেশি সময় লাগে না।

তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহারের আরো কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ দিকের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, সকল ইভিএম মেশিন বিদেশে তৈরি হয়। ফলে, ইভিএম মেশিন নিয়ন্ত্রণের গোপন কোড তাদের কাছে থাকে। তারা চাইলে সহজেই কারো পক্ষে-বিপক্ষে ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।

ইভিএম এ Fake display unit স্থাপন করা যায়। যেখানে সম্মুখভাগে ম্যানিপুলেটেড ফলাফল প্রদর্শিত হবে, কিন্তু প্রকৃত ম্যানুপুলেটেড ফলাফল তৈরি হবে ব্যাক সাইডে।

তিনি বলেন, প্রশাসনের সর্বত্র দলীয়করণের কারণে প্রতি ভোটকেন্দ্রে যদি অন্তত একটি করে ঊঠগ মেশিনে এ প্রোগ্রাম করে দেন যে, নির্বাচন শেষে ক্লোজ বাটনে ক্লিক করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট কোন প্রতীকে প্রদত্ত ভোটের নির্ধারিত সংখ্যা পরিবর্তন হয়ে যুক্ত হবে, তাহলে সহজেই নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেয়া সম্ভব।

ফখরুল বলেন, আমাদের দেশে ভোটকেন্দ্র দখল ক্ষমতাসীনদের অস্থিমজ্জায় ঢুকে পড়েছে। প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে অতি স্বল্প সময়ে (মিনিটে ৫ টি) প্রতি বুথে শতাধিক ভোট বিশেষ কোন প্রার্থীর পক্ষে দিয়ে দেয়া সহজেই সম্ভব। গত কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যার নগ্ন চিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি ইভিএম মেশিনে কিংবা প্রতি ভোটকেন্দ্রে একটি মেশিনের মাইক্রোকন্ট্রোলারের প্রোগ্রাম এমনভাবে সেট করে দেয়া সম্ভব যে, ‘কোন কেন্দ্রে সকল প্রার্থী একটি নিদিষ্ট সংখ্যক (২০ বা ৫০/১০০/২০০) ভোট পাবার পর যেকোন ব্যালট বাটনে চাপলেই অতিরিক্ত সকল ভোট একজন নির্দিষ্ট প্রার্থীর প্রতীকে যুক্ত হবে’। এক্ষেত্রে প্রোগ্রামে সময়ও সেট করে দেয়া সম্ভব, অর্থাৎ সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১০টা পর্যন্ত প্রদত্ত সকল ভোট একটি নির্দিষ্ট প্রতীকে যুক্ত হবে। ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের দ্বারা কেন্দ্র দখলের পর গোপনে সরবরাহকৃত অগ্রিম ভোট দেয়া ইভিএম এর শুধুমাত্র কন্ট্রোল ইউনিট প্রতিস্থাপন করলেই ফলাফল শতভাগ তাদের অনুকূলে নেয়া সম্ভব।

ফখরুল বলেন, মাইক্রোকন্ট্রোলার চিপস্ নিয়ন্ত্রিত ইভিএম এ ব্যবহৃত হয় জঋওঞ (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টেফিকেশন ডিভাইস) ট্যাগ। অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতা পেলে কোন বিশেষ প্রার্থীর আইটি বিশেষজ্ঞ কিংবা প্রশিক্ষিত কর্মী রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে ভোট কেন্দ্রের কয়েকশ মিটার দূর থেকেও কন্ট্রোল ইউনিট নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।ইভিএম এ ব্যবহৃত সফটওয়্যারে খুব সহজেই কোন নির্দিষ্ট প্রতীক/প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে ভোটের সংখ্যা নির্ধারণ করে সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন সিলিং করে দেয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, মার্কিন আইটি বিশেষজ্ঞগণের মতে কোন ইভিএম মেশিনই জালিয়াতি প্রতিরোধক নয়। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী ফলাফলের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও যাচাইযোগ্যতার নিশ্চয়তা ইভিএম দিতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইভিএম এর নির্ভরযোগ্যতা, বিশ্বস্ততা এবং সঠিকতা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরী হয়েছে । তারা বিভিন্ন স্টেট এ ভোটারদের ভোটগ্রহণ পদ্ধতি বেছে নেয়ার সুযোগ দিলে অধিকাংশ স্টেটের ভোটারই পেপার ব্যালটে ভোটপ্রদান করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

তিনি আরো বলেন, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে ইভিএম টেম্পারপ্রুফ নয় মর্মে রুল ইস্যু করে। ব্যাপক নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ভারতেও এখন ইভিএম প্রচণ্ড সমালোচনার মুখোমুখি। ইভিএম তথা ভোটিং মেশিনে কারচুপি সম্ভব অভিযোগ তুলে ভারতের সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল ব্যালট পেপারে ভোটের দাবি তুলেছে। অতিসম্প্রতি ২৭/০৮/২০১৮ তারিখে ভারতের নির্বাচন কমিশনের ডাকা এক সর্বদলীয় বৈঠকে সকল বিরোধীদল একযোগে নির্বাচন কমিশনের কাছে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটে কারচুপি হয় বলে অভিযোগ করে এ পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ পরিহারের জোর দাবি তুলেছে।

ফখরুল বলেন, নেদারল্যান্ডস এ ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অজ্ঞাতসারে ৪০ মিটার দূর থেকে নির্বাচনী ফলাফল হ্যাকিং এবং টেম্পারিং এর জন্য ইভিএম পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে। ভোটারদের ইভিএম ব্যবহারে সমস্যা হওয়ায় এবং যথাযথভাবে ভোটপ্রদান করতে না পারার কারণে ফিনল্যান্ড এর সুপ্রীম এ্যাডমিনিসট্রেটিভ কোর্ট ২০০৯ সালে পাইলট ভিত্তিক ৩ টি মিউনিসিপাল নির্বাচনের ফলাফল বাতিল বলে ঘোষণা করে পুনরায় ভোটগ্রহণের জন্য আদেশ প্রদান করেন। তখন থেকেই ফিনিস সরকার ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করে।

তিনি বলেন, বুয়েটের অধ্যাপক ড. লুৎফুল কবিরও তাঁর উদ্ভাবিত ইভিএম মেশিনের নিরাপত্তা নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত নন। তাছাড়া অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মত প্রকাশ করেছেন যে, চেষ্টা সত্ত্বেও যন্ত্রে ভোট দেয়াকে সম্পূর্ণ নিরাপদ করা যায়নি।

ফখরুল বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির নজীরবিহীন ঘটনাটি আমলে নেয়া যায়। কঠিন প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা দেয়াল ভেদ করে একটি দুষ্টচক্র নজিরবিহীন অর্থ লোপাট করেছে আমাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। এ ধরনের অসাধু চক্রের পক্ষে প্রযুক্তির অপকৌশল প্রয়োগ করে জনগণের ভোটের হিসাব পাল্টে দেয়া একেবারেই সম্ভব।

তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহারে নিরাপত্তা ঝুঁকির সাথে জড়িত হচ্ছে এর প্রস্তুতকারক, সফ্টওয়ার প্রোগ্রামার, মেশিনের মাইক্রোচিপস্ সরবরাহকারী, সাপ্লাইয়ার/ভেন্ডার, রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী, স্থানীয় কর্মকর্তা এবং রির্টানিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারবৃন্দ। অপরদিকে প্রচলিত ও বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী ‘কাগজের ব্যালটের’ নিরাপত্তার সাথে জড়িত শুধুমাত্র ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তাগণ। প্রথমটি অদৃশ্য যা সাধারণ জ্ঞানে প্রতিরোধ কষ্টসাধ্য। অপরদিকে কাগজে ব্যালট হচ্ছে দৃশ্যমান এবং সদিচ্ছা থাকলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মনোনয়নপত্র জমা প্রদানে বাধা প্রদান, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, রাতে ব্যালট বাক্সে ব্যালট পেপার ঢুকিয়ে রাখা ইত্যাদি দৃশ্যমান অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কিন্তু ইভিএম পদ্ধতির নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা একেবারেই গৌন হয়ে পড়বে। এমনকি দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদেরও কোন কার্যকর ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকবেনা। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর ‘ভ্যানগার্ড’ বলে পরিচিত ভোটকেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা হবে সাক্ষী গোপালের মত। সর্বোপরি যে জনগণের জন্য নির্বাচন, সেই জনগণকেও এই ইভিএম/ডিভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ‘ওয়াচডগের’ দায়িত্ব পালন থেকে বিছিন্ন করে ফেলা হবে। অর্থাৎ এই বাস্তব অবস্থার নিরিখে জনআস্থা বিরোধী ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করা হলে তা হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক।

তিনি বলেন, সামগ্রিক তথ্য, উপাত্ত ও বক্তব্য শেষে আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন বিচারেই ই-ভোটিং/ইভিএম/ডিভিএম পদ্ধতি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, জনআস্থাহীন, গণতন্ত্র বিধ্বংসী, বিভ্রান্তিকর ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ পরিত্যাগ করুন। সকল অংশীজনের সাথে আলোচনাক্রমে প্রচলিত ‘পেপার ব্যালট’ পদ্ধতিকে ফুলপ্রুফ করার কার্যকর উদ্যেগ গ্রহণ করুন। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

তিনি বলেন, এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে ও জাতীয় সংকট উত্তরণে প্রতিটি পর্যায়ে এদেশের সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। জনগণের আন্দোলন সংগ্রামের সহযোগী শক্তি হিসেবে দেশপ্রেমিক ও সচেতন সাংবাদিক সমাজও চরম নিগ্রহ, নির্যাতন ও লাঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনেও বহু সাংবাদিককে সরকারের পেটোয়া হেলমেট বাহিনী কর্তৃক নির্মমভাবে প্রহার ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও সাংবাদিক সমাজের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করবেন। আপনাদের সামনে উপস্থাপিত ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আমাদের বক্তব্য জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষায় ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু নির্বাচনের সদিচ্ছা থাকলে আমরা আহবান জানাবো এ চার হাজার কোটি টাকা দিয়ে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নিন। নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা দেশবাসীর কাছে খোলাসা করুন।

১) আগামী নির্বাচনের জন্য ৪৪ হাজার ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করুন;

২) ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করুন, এতে শ্রেণী কক্ষ সংকট কিছুটা হলেও দূরীভূত হবে।

৩) উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মোবিলিটি বৃদ্ধির জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবরাহ করুন।

৪) ব্যালট পেপারের জালিয়াতি রোধে সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদের জন্য অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রেস স্থাপন করুন।

৫) নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন।

৬) সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল পোলিং এজেন্ট ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কার্যকর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন।

৭) ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাগণ নির্বাচনের সময় অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এজন্য তাদেরকে সম্মানী ও ঝুঁকিভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করুন।

৮) নির্বাচনে আনসার-ভিডিপি ও গ্রাম পুলিশ অত্যন্ত কষ্টকর দায়িত্ব পালন করেন। তাদেরকে পর্যাপ্ত সম্মানী ও খোরাকি ভাতা প্রদান করুন।

৯) প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করুন। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

১০) বর্তমান সরকারের নেতিবাচক ও ভোট কারচুপির কারণে জনগণ ভোটকেন্দ্র বিমূখ হয়ে পড়েছে। তাই ভোটারদেরকে ভোট প্রদানে উদ্ধুদ্ধ ও আশ্বস্ত করার জন্য Voter Education ও Awareness Program গ্রহণ করুন।

১১) ভোটগ্রহণকালে ছবি ধারণ ও ভিডিও করার জন্য প্রতিটি উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভিডিও ক্যামেরা সরবরাহ করুন।