আট পাতার লিখিত বক্তব্যে কূটনীতিকদের যা জানালো বিএনপি

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের অবগত করেছে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।

মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিকেল সোয়া ৪টায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে সোয়া ৫টা পর্যন্ত। বৈঠক শেষে কোনো পক্ষ থেকেই গণমাধ্যমে কিছু বলা হয়নি। পরে সন্ধ্যা ৭টায় বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তা এড়িয়ে যান।

তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনীতির সার্বিক পরিস্থতি নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেন। বৈঠকে মৌখিকভাবে ব্রিফ ও পরে প্রত্যেকের হাতে লিখিত কপি দেয়া হয়। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ও পাকিস্থানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, স্পেন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জাপান, রাশিয়া, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধি ও ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টরসহ ১৮টি দেশের কূটনৈতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুেমিন ফারহানা, তাবিথ আওয়াল উপস্থিত ছিলেন।

আট পাতার ওই লিখিত বক্তব্যে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সরকার বিরোধী পক্ষকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে। মিথ্যা বানোয়াটা মামলায় দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখা চেষ্টা করছে। এ ছড়াও কৌশলে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে সরকার।

বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের এ বৈঠকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিষয়টির পাশাপাশি কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিষয়টিও বেশ গুরুত্ব পায়।

মির্জা ফখরুল তাদের বলেন, এই হামলার ঘটনায় বিএনপি প্রথম থেকেই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে, এখনও জানায়। ওই ঘটনার জন্য দায়ী প্রকৃত অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় বিএনপি। কারণ, আমরাও চাই এমন নির্মম অরাজনৈতিক ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। কিন্তু সরকার উল্টো ষড়যন্ত্র করে তারেক জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের ওই মামলায় জড়ানোর লক্ষ্যে ফাঁক-ফোকর খুঁজছে। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট মামলাকে পুঁজি করে সরকার বিএনপি নেতাদের বিপদে ফেলার নগ্ন প্রয়াস চালাচ্ছে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় দল বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্যই বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সরকার এই অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অপেক্ষমাণ রায়কে ঘিরে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে আইনমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যায়। কোন মামলার রায় কবে হবে, তা এখন আর বিচারকরা নয়, দেশের আইনমন্ত্রী স্থির করেন। এসব ঘটনায়ই বোঝা যায়, ২১ আগস্ট মামলার রায়কে তারা বিচারা বিভাগকে তার প্রভাবিত করবে।

বিএনপি মুখপাত্র বলেন, ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা সাব-জেলে বন্দী থাকার সময় এই মামলার পঞ্চম তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল কবির তাকে (শেখ হাসিনা) জিজ্ঞাসা করলে ১৬১ ধারায় গৃহীত জবানবন্দিতে তিনি কোথাও খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মামলার (ভিকটিম) চার্জশিটভুক্ত দুই নম্বর সাক্ষী থাকার পরও তিনি আদালতে আসেননি, সাক্ষ্য দেননি, কোনো কথা বলেননি এবং সহযোগিতাও করেননি। বরং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নেয়া হলেও কিন্তু শেখ হাসিনা সেই তদন্ত কাজে অসহযোগিতা করেন। সুতরাং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানোর বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও দুরভিসন্ধিমূলক ছাড়া কিছু নয়।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, কারাবন্দি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। ডাক্তাররা বলছেন, তার প্যারালাইসিস, অন্ধত্ব ও সকল ধরনের কাজ করার সার্মথ্য হারিয়ে ফেলার ঝুকি রয়েছে। তিনি হাঁটতে পারছেন না। চোখের কর্নিয়া শুকিয়ে যাচ্ছে যার ফলে তিনি চিরতরে অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতলে তার সুচিকিৎসার জন্য বার বার দাবি জানালেও সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না।