খালেদা জিয়াকে জোর করে কারা আদালতে হাজির করা হয়: জয়নুল আবেদীন

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে জোর করে হাজির করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, সরকার দেশের আইন-কানুন না মেনে বেআইনিভাবে গেজেট নোটিফিকেশন করেছে।

বুধবার বিকেলে (৫ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাকক্ষে কারা আদালতে খালেদা জিয়ার বিচার বিষয়ে করণীয় বিষয়ক রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ অভিযোগ করেন।
এদিন দুপুর সোয়া ১২টায় খালেদা জিয়াকে কারাগারের নিজ কক্ষ থেকে হুইল চেয়ারে করে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত আদালতের এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিনই ছিল কারা আদালতে বিচারের প্রথম দিন। আদালতে বিচারককে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া তখন বলেন, ‘আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আপনাদের যা মনে চায়, যতদিন ইচ্ছা সাজা দিয়ে দিন। ন্যায়বিচার বলে কিছু নাই। আমার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।’

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘গতকাল হঠাৎ করে অন্ধকার কারাঘরে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিচারের জন্য একটি আদালত গঠন করা হয়েছে। অতীতে আমরা কখনও দেখিনি এবং বাংলাদেশে কেন, পাকিস্তানের ইতিহাসেও নেই যে সাংবিধানিকভাবে কারাগারে কোনও আদালত হতে পারে। যদি দেশে সামরিক শাসন হয় সেক্ষেত্রে যা ইচ্ছা তা করতে পারে। কিন্তু সংবিধান মোতাবেক কারাগারে কোনও আদালত স্থাপন করা যায় না। তার কারণ হলো সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিচার হতে হবে প্রকাশ্যে এবং জনগণের উপস্থিতিতে। অর্থাৎ যেখানে জনগণের উপস্থিতি থাকবে না, সেখানে বিচার করা যাবে না।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এই সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সরকার সংবিধান মানে না, দেশের আইন-কানুন মানে না, দেশের বিচার মানে না। সবকিছু না মেনে বেআইনিভাবে গেজেট নোটিফিকেশন করে অসুস্থ ব্যক্তি খালেদা জিয়ার জন্য একটি আদালত করেছে। আমাদের প্রতিনিধি সেখানে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখেছে একটি অন্ধকার কূপ, একটি গুহা। চব্বিশ ফুট বাই চব্বিশ ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের আদালত কক্ষ। এই অবস্থার মধ্যে একটি আদালত বসিয়েছে এবং খালেদা জিয়া এত অসুস্থ যে তিনি আসতে পারেননি। তবুও তাকে হুইল চেয়ারে করে জোর করে নিয়ে এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে আছে জোর করে কাউকে আনা যাবে না, বিশেষ করে অসুস্থ মানুষকে। অথচ খালেদা জিয়াকে জোর করে নিয়ে এসেছে। এ সমস্ত বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করেছি। দলের মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) এসেছিলেন এ নিয়ে আমাদের মতামত নেওয়ার জন্য। এখানে অন্য কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। খালেদা জিয়ার জন্য যে আদালত গঠন করা হয়েছে তা আইনগত কিনা, সে বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনায় বসেছিলাম। আমরা আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, এই যে আদালত করা হয়েছে, এটা বেআইনি আদালত। তাই এটার পরবর্তী কী পদক্ষেপ হবে সেটা আমরা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো এবং আপনাদের জানাবো।’

ফৌজদারী কার্যবিধির ৯ ধারা অনুসারে কারাগারে খালেদা জিয়ার জন্য আদালত গঠন করা হয়েছে এবং এখানে সংবিধান লঙ্ঘনের কিছুই ঘটেনি— আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘তাহলে কি দেশে এখন সামরিক শাসন চলছে? এটা আইনমন্ত্রী জবাব দেবেন। কর্নেল তাহেরের যখন বিচার হয়েছে তখন দেশে সামরিক আইন ছিল। সেখানে কোনও সাংবিধানিক আইন ছিল না। তাহলে বুঝতে হবে তারা আইন মানে না। আইনমন্ত্রী যদি দেশের আইন না মানেন তাহলে পরে সে দেশে বিচার ব্যবস্থা কীভাবে চলবে?’