আওয়ামী লীগে কৌতূহল : আগামী নির্বাচনে কে পাচ্ছেন দলের টিকিট

আগামী নির্বাচনে কে পাচ্ছেন দলের টিকিট- এ নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগে। কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে রয়েছে একই কৌতূহল। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

প্রার্থীরা আছেন প্রচারণা ও গণসংযোগে। তবে তাদের মাঝেও কৌতূহল। নিজেরা জানেন না আসলে কার হাতে তুলে দেয়া হবে নৌকার টিকিট। দলের হাইকমান্ড থেকে এরইমধ্যে প্রার্থীদের কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কেউ নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিতে পারবে না। দলের জন্য, প্রতীকের জন্য গণসংযোগ করতে হবে।

সরকারের ভালো কাজ জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। তাই বেশির ভাগ নির্বাচনী এলাকায় হাইকমান্ডের এ নির্দেশনা মানা হচ্ছে অক্ষরে অক্ষরে। বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী জানান, অতীতে যে কেউ প্রার্থী সেজে ইচ্ছামতো প্রচারণা চালাতে পারতো। এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না। দলের ও সরকারের গুণগান করতে হচ্ছে।

এটা ভালো সিদ্ধান্ত বলে জানান তারা। আবার কয়েক প্রার্থী এর উল্টো চিত্রের কথা জানান। তারা বলেন, নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি রয়েছে। অথচ এখনও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়নি। দেশের সব নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ এক নয়। ভিন্ন ভিন্ন আবহ, পরিস্থিতি রয়েছে। দলকে এসব অনুধাবন করতে হবে। শেষ মুহূর্তে এসে দলের মনোনয়ন দিলে অনেক আসনে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট হতে পারে। সহিংস ঘটনাও ঘটতে পারে। এর সুযোগ নিতে পারে বিরোধী দল।

অনেকে ক্ষোভে, দুঃখে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারে। হতে পারে অভ্যন্তরীণ নীরব ক্যু। সংশ্লিষ্টরা জানান, টানা প্রায় ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় দলে নেতা ও কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে। সে হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকাও দীর্ঘ। একেকটি আসনে কমপক্ষে ৫ জন প্রার্থী কাজ করছেন কয়েক বছর ধরে। কোথাও কোথাও ১০ জনের বেশি সম্ভাব্য প্রার্থী গণসংযোগ ও প্রচারণা চালাচ্ছেন অবিরাম। প্রার্থী নিয়ে এ ধরনের কৌতূহলের মধ্যেই ২রা সেপ্টেম্বর দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পরই মনোনয়ন কারা পাচ্ছে, সেটা চূড়ান্তভাবে বলা যাবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। দলের সভানেত্রী বিভিন্ন উইংস থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। সেই তালিকাও মোটামুটি প্রস্তুত। এদিকে দুই মাসের মধ্যেই নির্বাচনের রোডম্যাপ স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, অক্টোবরে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে।

সে হিসেবে অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এক ধরনের প্রক্রিয়া হবে আবার না নিলে অন্য ধরনের। অর্থাৎ বিএনপি আসলে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হবে। অন্যদিকে বিএনপি আগামী নির্বাচন বর্জন করলে বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি হয়তো আলাদা জোট হবে। রোববার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীতে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

ওই হিসেবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১লা সেপ্টেম্বর দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে বলেন, আমাদের জোটে আলাপ-আলোচনা চলছে। এ মাসের শেষ দিকে চূড়ান্ত হবে। বেশি দূর গেলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যেতে পারে। জোটের জন্য ৬৫ থেকে ৭৫ আসন ছেড়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা আছে আমাদের।

তিনি বলেন, এখানেও কথা আছে, এটা কোনো বাইন্ডিং (ধরা-বাঁধা) বিষয় না। ভালো প্রার্থী হলে আমরা এক্সসেপ্ট (মনোনয়ন) করবো। উইনেবল (জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী) প্রার্থীকে আমরা মনোনয়ন দেবো। জোটের যেকোনো দলেরই হোক আমরা তাদের গ্রহণ করবো। প্রার্থী উইনেবল হলে আমরা মনোনয়ন দেব। ওবায়দুল কাদেরের এ ঘোষণার পর যেসব আসনে জোটের শরীকদের শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাদের কৌতূহল আরও বেড়েছে।

এরইমধ্যে ওইসব আসনের দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। মনোনয়ন দৌঁড়ে নিজেদের অবস্থান জানতে চাচ্ছেন। একই অবস্থা তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকদেরও। আগামীতে তাদের ভোটটা কোন প্রার্থীকে দিতে হবে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষন শুরু করেছেন। তাই দলীয় মনোনয়নকে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

এ প্রসঙ্গে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফরুক খান বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে দলকে। এর মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মিটিয়ে একক প্রার্থী মনোনয়নকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অপর দুটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সহযোগিতা এবং নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি। কারণ, রাজনৈতিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগ সব সময় রাজপথে থাকার দল। সামনে নির্বাচন হওয়ায় আমাদের আপাতত চিন্তা-ভাবনা নির্বাচনকে ঘিরেই। দলের সবাই এখন প্রচারণায় ব্যস্ত। এরইমধ্যে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ চলছে। সেখানে তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হবে। প্রথমত, গত নির্বাচনের আগে আমাদের যেসব অঙ্গীকার ছিল তা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি তা তুলে ধরা হবে। দ্বিতীয়ত, আসন্ন নির্বাচনে জয়লাভ করলে আমাদের ৫ বছরের পরিকল্পনা ভোটারদের কাছে পেশ করা হবে। সর্বশেষে ইশতেহারে তুলে ধরা হবে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের কী ধরনের স্বপ্ন রয়েছে, পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্র: মানবজমিন