জাতীয় ঐক্যের জন্য ছাড় দেবে বিএনপি: ফখরুল

সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য বিএনপি ছাড় দেবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘ভালোর’ জন্য এই ছাড় দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

শনিবার নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় এই মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, অতি দ্রুত ঐক্য হবে।

দুই নেত্রীর হাতে দেশ নিরাপদ নয় দাবি করে তৃতীয় শক্তি হওয়ার বাসনায় গঠন করা যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্য গড়তে চাইছে বিএনপি যা ‘জাতীয় ঐক্য’ নামে পরিচিতি পাচ্ছে।

এই ঐক্যের জন্য একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তবে ড. কামাল এবং যু্ক্তফ্রন্ট নেতাদের নানা শর্তে আটকে আছে এই প্রক্রিয়া। কামাল হোসেন বিএনপিকে দেড় যুগের মিত্র জামায়াতকে ছাড় দেয়ার কথা বলেছেন, যুক্তফ্রন্ট চাইছে তিনশ আসনের মধ্যে ১৫০ আসন। আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে দুই বছর দেশ চালাতে দিতে হবে তাদের। আবার যুক্তফ্রন্ট নেতারা দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাতে চান না।

এসব দাবি মেনে নেয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বললেও ফখরুল বলেন, ‘তাদের কিছু দাবি থাকতে পারে। কোনো ভালো কিছুর জন্য তো কিছু না কিছু ছাড় দিতে হবে।’

যুক্তফ্রন্ট নেতাদের বিষয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, ‘আপনাদের একটা ভুল ধারণা আছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি বুঝি চান না জাতীয় ঐক্যের নেতারা। আসলে খালদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সকলে একমত। ড. কামাল হোসেন ও বি চৌধুরী তো আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেই বলেছেন তার মুক্তি দেয়া হোক।’

‘আমরা বিশ্বাস করি অতি দ্রুত জাতীয় ঐক্য হবে। সমস্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে হটাবে।’

‘আ.লীগ পরাজিত হচ্ছে, পালানোর পথ খুঁজছে’

আওয়ামী লীগ সরকার শেষ সময়ে এসে পরাজিত হচ্ছে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, নিজেদের পতন বুঝতে পেরে তারা মরিয়া হয়ে পালাবার পথ খুঁজছে।

বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ অত্যন্ত সংকটময় মুহূর্তে উপনীত হয়েছে। দেশের মানুষের স্বাধীনতা থাকবে কি থাকবে না, মানুষের বাঁচার অধিকার থাকবে কি থাকবে না তা নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের উপর। আমরা সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি। আজকেও আমরা সেই লড়াই করছি। লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।’

“বেগম খালেদা জিয়া হোটেল লা মেরিডিয়ানে বলেছিলেন, ‘আমি হয় তো কারাগারে চলে যাব। কিন্তু আপনারা সকল গণতন্ত্রকামী দলকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবেন। এই স্বৈরাচারী সরকারকে হটাবেন’। এখন একটা জাতীয় ঐক্য দরকার। সমস্ত জাতির ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে হটাতে হবে।”

শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘কিন্তু আজ আমরা দেখছি তিনি গণতন্ত্রকে স্তব্ধ করে দিচ্ছেন।’

দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অপরাধ কী? তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন। একমাত্র এই কারণেই তার সঙ্গে এটা করা হচ্ছে।’

খালেদা জিয়ার বিচারে কারাগারে আদালত বসানোর সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘কারাগারে আদালত স্থানান্তর করা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। সেখানে ক্যামেরা ট্রায়াল (গোপন বিচার) করা হচ্ছে। এটা কোনো আদালত নয়। এটাকে বাংলায় বলা যায় গুহা।’

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ,চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম,সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।

সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।