পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরেছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। বাংলাদেশ পুলিশের সেবার মনোভাব, সততা এবং আন্তরিকতা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে। অত্যন্ত সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় পুলিশ বাহিনীর ওপর দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বেড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে রংপুর এবং গাজীপুর পুলিশের দু’টি পৃথক মেট্রোপলিটন ইউনিটের উদ্বোধনকালে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনগণ এবং রংপুর ও গাজীপুর পুলিশ লাইন্সের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে এই ইউনিট দু’টির উদ্বোধন করেন। জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন এবং পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী গাজীপুর এবং রংপুরের স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন।

এ সময় গণভবন প্রান্ত এবং গাজীপুর ও রংপুরে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণ এবং স্থানীয় উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রংপুর ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ইউনিটের উদ্বোধন করছি এই জন্য যে, মানুষের সেবাটা যাতে নিশ্চিত হয়।

কারণ, দেশের উন্নয়ন করতে হলে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। তিনি এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যেখানে আজ বিশ্বজুড়ে জঙ্গিবাদ একটি বড় সমস্যা সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে আমরা এই জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য অর্জন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনীকে আমি ধন্যবাদ জানাই, তারা সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেই আজকে আমরা এই জঙ্গিবাদ দমনে সক্ষম হয়েছি। কারণ, আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। কোন একটি ঘটনা ঘটলে দিনরাত যখনই হোক, ফোন করেছি তাদের সাড়া পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসে আমাদের ১৭ জন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অগ্নীসন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই পায়নি।

আমি এটুকুই বলবো যে, একটা দেশকে উন্নত করতে হলে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা। সেক্ষেত্রে আমাদের পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। এতে করে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসও ফিরে এসেছে। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি, এটা আমাদের ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ কারো কাছে হাত পেতে চলবে না, বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে, আত্মসম্মান এবং মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাবে, বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলবে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। দেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের। অবশ্যই দেশকে গড়ে তোলার জন্য আমরা সকল মানুষের জন্য সেবা নিশ্চিত করতে চাই। আর সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আমরা পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়েছি। তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তিনি বলেন, এই যে নতুন মেট্রোপলিটন গঠন করা হলো এতে অনেক পুলিশ সদস্যের পদোন্নতিরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের পদেরও আপগ্রেডেশন করা হয়েছে।

আজকে আর্থ-সামাজিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা বাজেট বৃদ্ধি করেছি, পুলিশের বাজেটও আমরা বাড়িয়ে দিয়েছি। জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো আমরাও করার উদ্যোগ নিচ্ছি।
উত্তরবঙ্গ একসময় অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সেখানে ইপিজেড করেছি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। আর রংপুরকে যেহেতু একটা বিভাগ করেছি সেখানে বিভাগীয় সুযোগ-সুবিধাটাও যেন স্থানীয় জনগণ পায় সেভাবেই আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। রংপুর এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের যেহেতু যাত্রা শুরু হচ্ছে কাজেই এই দু’অঞ্চলের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তাটা নিশ্চিত হবে। মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নটা আরো ত্বরান্বিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার লক্ষ্যে একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

দুই সেতুর উদ্বোধন: এদিকে ভিডিও কনফারেন্সে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর ওপর ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ এবং অপরটি ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তিতাস নদীর ওপর নির্মিত ওয়াই আকৃতির ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেতু’ উদ্বোধন করেন। এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারের সময়ে দেশের উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য চিত্র তুলে ধরে বলেন, মানুষ নৌকায় ভোট দিলেই কেবল উন্নয়নের দেখা পায় এবং এটা এখন প্রমাণিত যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই শুধু দেশের উন্নতি হয়। এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এ সময় রংপুর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। সাবেক মন্ত্রী এবিএম তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ বাঞ্ছারামপুর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের অবহেলিত থাকার কথা স্মরণ করে বলেন, এক সময় উত্তরবঙ্গের বহু এলাকার মতো গঙ্গাচড়াও মঙ্গাপ্রবণ এলাকা ছিল। কিন্তু তাঁর সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়নে আজ আর মঙ্গা নেই। এই শব্দটিই যেন হারিয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগের শাসনেই দেশ থেকে মঙ্গা চিরবিদায় নিয়েছে বলেন তিনি। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এই এলাকার জনগণের যখন কাজ থাকে না তখনকার সময়ের জন্য তাঁর সরকার সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দারিদ্র্যবিমোচনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবন মানে পরিবর্তন এনেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে (এলজিইডি) ৮৫০ মিটার দীর্ঘ ও ফুটপাথসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সেতুর সংযোগ সড়কটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে যুক্ত হয়েছে। মূল সেতুর সংযোগ সড়কের কাকিনা অংশে তিনটি কালভার্ট ও দু’টি ছোট সেতু রয়েছে। এ ছাড়া ও মূল সেতু ও পুরো সড়কজুড়ে রয়েছে আলোর ব্যবস্থা। অন্যদিকে, ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেতু’টি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও কুমিল্লার হোমনা উপজেলার তিতাস নদীর ত্রিমোহনায় নির্মিত দেশের প্রথম ওয়াই আকৃতির সেতু। এটি চালুর ফলে বদলে যাবে বাঞ্ছারামপুর, হোমনা ও মুরাদনগর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ৯৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছে ৭৭১ দশমিক ২০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি। সেতুটিতে ২৫টি পিলার, ২৪টি দৃষ্টিনন্দন স্প্যান রয়েছে। তিতাস নদীর ওপর এ সেতু চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের বিকল্প পথ হিসেবেও কুমিল্লা দিয়ে তা ব্যবহৃত হবে বলে জানিয়েছে এলজিইডি।