মুকুটের আরেকটি পালক হারালেন সু চি

মিয়ানমারের নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সু চির সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলের একটি প্রস্তাব কানাডার পার্লামেন্টে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে।

রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর রাষ্ট্রের দমন-নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থতার কারণেই তার এ সম্মাননা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

বিবিসি জানিয়েছে, ২০০৭ সালে সু চিকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছিল কানাডা। দেশটি এখন পর্যন্ত যে ছয়জনকে এ সম্মানে ভূষিত করেছে, মিয়ানমারের নেত্রী তাদের একজন।

বৃহস্পতিবার কানাডার পার্লামেন্ট সর্বসম্মতভাবে সু চির সেই সম্মান ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বুধবার জানিয়েছিলেন, মিয়ানমারের নেত্রী এখনো কানাডার নাগরিকত্ব রাখার উপযুক্ত কিনা পার্লামেন্ট তা খতিয়ে দেখছে।

অবশ্য এ পদক্ষেপ মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গার দুর্দশা লাঘব করবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রয়টার্স জানিয়েছে, কানাডার পার্লামেন্টের দুই কক্ষ যৌথ প্রস্তাবের মাধ্যমে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়। বাতিলও একই প্রক্রিয়ায় করতে হয়।

এর আগে সু চির অক্সফোর্ড, গ্লাসগো, এডিনবরা এবং নিউক্যাসলের ফ্রিডম অব সিটি পুরস্কারও বাতিল হয়েছে।

সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারে গণতন্ত্রের দাবিতে অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান সু চি। তার আগে পরে দীর্ঘ গৃহবন্দি দশার মধ্যেই বহু সম্মাননা, সম্মানসূচ ডিগ্রি ও পুরস্কার ঘোষণা করা হয় সু চির নামে।

২০১৭ সালে অটোয়ায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ২০১৭ সালে অটোয়ায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। বেসামরিক সরকার ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের পর ২০১৫ সালে নির্বাচনে জিতে সু চি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর হন। দেশের বেসামরিক প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন তারই হাতে। তবে সাংবিধানিকভাবে সেনাবাহিনী এখনও বিপুল ক্ষমতাধর।

গত বছর অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন মিয়ানমারের ‘ডি ফ্যাক্টো’ নেত্রী।

দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে গত এক বছরেই দেশটি ছেড়ে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

গত মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষ ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চালানো গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে একটি আন্তর্জাতিক প্যানেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলও।

সেনাবাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ থাকলেও সু চি তা করতে রাজি হননি। গত বছরের এপ্রিলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি উল্টো সেনাবাহিনীর পক্ষেই বলেন। তিনি দাবি করেন, রাখাইনে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হয়নি।