অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন : কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেশে কী এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে দেশে এখন বিশেষ সরকারের প্রয়োজন পড়েছে?’ আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির বিষয়ে সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন সেতুমন্ত্রী। এসময় নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন সরকারের ক্ষমতা সংকুচিত হবে বলে জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন সরকারের ক্ষমতা সংকুচিত হবে। সরকার নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও বিষয় নিয়ে কোনও কাজে সম্পৃক্ত হবে না।’

তিনি বলেন,, ‘নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নভেম্বরে প্রথম সপ্তাহে শিডিউল ঘোষণা হবে। সে দিক দিয়ে হিসেব করলে এক মাসের চাইতে দুই-একদিন বেশি। এসময় বিএনপি ও তাদের সহযোগীদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি অযৌক্তিক। বিএনপি ও তাদের সহযোগীদের দাবি হওয়া উচিত নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের, নিরপেক্ষ সরকারের নয়। নিরপেক্ষ সরকার কী করবে? নিরপেক্ষ সরকার তো রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। তার হাতে তো কোনও ক্ষমতা থাকবে না। তাদের এই দাবি মানতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হয়। সেই সুযোগ তো নেই।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পৃথিবীর মানুষ বর্তমান সরকারের বিস্ময়কর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখছে। স্বয়ং জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক ও সাহসী ভূমিকা পালন করার জন্য। বাংলাদেশের এই বিস্ময়কর উন্নয়নেও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে জাতিসংঘ।’

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ তো অশান্ত নয়। তবে বিএনপি ও তার সহযোগীরা অশান্তির উস্কানি দিচ্ছে।’

ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্ন করে বলেন, ‘দেশে কী এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে দেশে এখন বিশেষ সরকারের প্রয়োজন পড়েছে?’

তিনি বলেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি অথবা শেষ সপ্তাহে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। মোট কথা অক্টোবরেই হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার।

বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তবে তাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য বিশেষ কোনও পদক্ষেপ নেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা কি আমার বাড়ির মেজবান যে আমি তাদের দাওয়াত দিয়ে আনবো? নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা তো বিএনপির গণতান্ত্রিক অধিকার। সেটিকে তারা দয়ার দান ভাবছে কেন?’

তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করার জন্য না কি অনুমতি দেই না। এবার তো অনুমতি দিলাম, জনসভা করুক। লাগলে মঞ্চ তৈরি করে দিবো, মাইক লাগিয়ে দিবো, যত খুশি কথা বলুক। বিএনপির শাসনামলে অনুমতি আমাদেরকেও নিতে হয়েছে। এখন তো অনুমতি দেই দিনে, আমরা অনুমতি পেতাম রাত ১১টার পর।’

তিনি বলেন, ‘টকশো দেখলাম, টকশোর বিষয় হচ্ছে অনুমতি, বিএনপির পক্ষ থেকে যে গেছে সে কিছু জানে না, আমার দলের পক্ষ থেকে যে গেছে সেও কিছু জানে না। যে টকশো চালাচ্ছে সে ও কিছু জানে না। অনুমতি একটি সাধারণ জিনিস। সবারই নিতে হয়। সাধারণ মানুষরাও জনসভা করলে অনুমতি নিতে হয়।’

রাজনীতির মাঠ আবার উত্তপ্ত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাঠ উত্তপ্ত হবে কেন? আমরা তো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেইনি। আমরা দিয়েছি নিরীহ কর্মসূচি। আমাদের কর্মসূচি হছে ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ।’

বিএনপি না এলে এবারের নির্বাচনও ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো প্রশ্নবিদ্ধ হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৪ সালের নির্বাচন যদি বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য না হতো তাহলে এদেশে আইপিইউ (ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন) এবং সিপিএ’র (কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন) বর্ণাঢ্য কনফারেন্স হলো কী করে। বিশ্বের এত এত স্পিকার, এত এত ডেপুটি স্পিকার দেশে এসেছিল, তারা কি কোনও প্রশ্ন তুলেছিল যে এই দেশের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না কিংবা আমি এখানে কনফারেন্সে অংশ নেবো না। এমন কিছু কি ঘটেছিলো? এমন কিছু কি শুনেছেন? এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব হবে না।’

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বলেছে, একজন সাম্প্রদায়িক চেতনার লোককে তারা ভোট দেবেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত। একজন সাম্প্রদায়িক মন মানসিকতার লোক কেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবে? আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি আইনে সব কিছু উল্লেখ থাকে না। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে পরিপূর্ণ করা হয় বিধিমালায়। সম্পাদক পরিষদের যে উদ্বেগ সেটি সরকার আমলে নিয়েছে বলেই তথ্যমন্ত্রী আজকে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাদের দাবি যৌক্তিক হলে মানতে বাধা কোথায়। বিধিমালা চূড়ান্ত হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সংবাদপত্রকে তো আমরা অস্বীকার করতে পারি না।’

মওদুদ আহমেদকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেছেন, সাগরের উত্তাল উড়নিমালা সমুদ্র ছেড়ে রাজপথে এসে মওদুদ আহমেদকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে এমন ভাবার কোনও সুযোগ নাই। সময় কম, এক মাসে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলে সবাই নির্বাচনে আসবে, খবর আমাদের কাছেও আছে।’