পদ্মার বাঁধ ঘিরেই চলে তাদের কষ্টের সংসার

স্বামী রিকশাচালক। অসুস্থ থাকার কারণে ভালোভাবে রিকশা চালাতে পারেন না। সংসারে দুই মেয়ে এক ছেলে। খরচ অনেক। পরিবারের খরচ চালাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন রোজি। এতেও কি পোষায়। তাই রাজশাহীর পদ্মার ধারে বিকেল করে বাঁশের সঙ্গে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে ছোট্ট দোকান নিয়ে বসেছেন।

সেখানে পুরি, পিয়াজু, বেগুনি ও চপ বিক্রি করে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাতেই কোনমতে সংসার চলে রোজির। তার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর পাঠানপাড়া এলাকায়।

জানতে চাইলে রোজি জানান, পদ্মার পাড়ে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা বেড়াতে আসে। এসব মানুষের জন্যই সে নদীর শহর রক্ষা বাঁধের কাছেই ছোট্ট দোকান দিয়েছেন। প্রতিদিন বিকেলে সেখানে তিনি পুরি, বেগুনি, পিয়াজু ও চপের মতো মুখোরোচক খাবার তৈরি করেন। বেড়াতে আসা মানুষদের কাছে তা বিক্রি করে প্রতিদিন ৯০ থেকে শ’খানেক টাকা আয় করেন। বাঁশের খুটি ও পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি তার অস্থায়ী দোকান। ঝড়-বৃষ্টিতে ভেঙে যায়। জীবনের তাগিতে তা আবার তৈরি করা হয়।

রোজি আরো জানান, সকাল করে তিনি একটি বাড়িতে মাসে ২ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে গৃহকর্মীর কাজ করেন। তার ছেলে হৃদয় (১২)। লেখাপড়া করেন না। বাজারে একটি দোকানে কাজ করে। প্রায় ২ মাস আগে হৃদয়ের অসুখ হয়েছিল। সে কারণে তিনি যে বাড়িতে কাজ করতেন সে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন ছেলের চিকিৎসা করানোর জন্য। প্রতিমাসে বেতন থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা কেটে নেয় বাড়ির মালিক।

এতো অল্প আয়ে সংসার চালানো তার জন্য অনেক কষ্টের। পাঠানপাড়ায় যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়িটিও ভাড়ার। সন্তানদের ঠিকমতো লালনপালন করা তার পক্ষে অনেক কষ্টের।

এখানে রোজির মতো অনেকেই আছে। তাদের মধ্যে মেরি, লাবনী। মেরি খোলা আকাশের নিচে আঁচার বিক্রি করেন। তার স্বামী নেই। মেয়ের সংসারে থাকেন। পাশাপাশি বাসা বাড়ি কাজ ও বিকেলে করে আঁচার বিক্রি করেন।

লাবনীর চটপটির দোকান দিয়ে সংসার চলে। পদ্মার চর জাগলে তিনি সেখানে চটপটির দোকান দেন। নদীতে পানি থাকার সময়টুকু তিনি বাঁধে দোকান দেন। তার মেয়ে স্থানীয় কামরুজামান প্রাইমারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। পদ্মা নদীর বাঁধ ঘিরেই চলে তাদের কষ্টের সংসার।