ক্ষমতায় গেলে যা যা করবে বিএনপি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু দাবি দাওয়া ও শর্ত তুলে ধরেছে। একই সাথে ক্ষমতায় গেলে কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন তার কিছু অঙ্গীকারও করেছেন দলের নেতারা।

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রোববার আয়োজিত এক সমাবেশে দলের নেতারা বলেছেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, ভেঙে দিতে হবে বর্তমান সংসদ, এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

শেষ দুটো দাবিই ছিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের সাত দফার দাবির প্রথম দুটো দাবি।

প্রায় এক বছর পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ করলো বিএনপি। গত বছরের ওই সভায় দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি এখন দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন। রোববারের সমাবেশেও খালেদা জিয়াকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল এবং তার জন্যে মঞ্চের উপর রাখা হয়েছিল একটি খালি চেয়ারও।

বিএনপির সাত দফা দাবির মধ্যে আরো ছিল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ভোটের দিন বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম চালু না করা।

নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ও বিরোধী বিএনপি মধ্যে উত্তেজনা যখন বাড়ছে এবং ছোট ছোট বিভিন্ন দল ও জোটকে সাথে নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর জোট গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিএনপির এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো।

বিএনপির নেতারা বলেছেন, নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এলে তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য তৈরি করবেন। এবিষয়ে দলের পক্ষ থেকে ১২ দফা অঙ্গীকার করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে:

১. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।

২. সব প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠন।

৩. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

৪. রাষ্ট্রক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।

৫. স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা।

৬. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক, শক্তিশালী ও কার্যকর করা।

৭. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

৮. দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে সংস্কার ও কার্যকর করা।

৯. সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা।

১০. সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এ মূলনীতিকে অনুসরণ করে জাতীয় মর্যাদা এবং স্বার্থ সংরক্ষণ করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

১১. কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে মদদ না দেয়া এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করতে না দেয়া।

১২. সর্বনিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে, আয়ের বৈষম্যের অবসানকল্পে অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ এবং শ্রমজীবী জনগণের জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা। সারাদেশে বিদুৎ ও জালানী নিশ্চিত করা। স্নাতক ও সমমান পর্যন্ত শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধূরী এ্যানীর সঞ্চালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ,ব্যারিষ্টার জমিরউদ্দীন সরকার, ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান।

ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, সেলিমা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুইয়া, জয়নুল আবেদীন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবীব, ফজলুর রহমান, হবিবুল ইসলাম হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মুজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক, ফজলুল হক মিলন, মাহবুবুর রহমান শাহীন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস আকতার, শামা ওবায়েদ প্রমুখ।