ঝিনাইদহের শারদীয়া দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরি করতে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত কারুশিল্পীরা

আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের আনাগোনা শরতের ফুল শিউলী আর শরতে ফোটে কাঁশ ফুল। সঙ্গে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে ছুটে আসে হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয়া দুর্গা পূজা। দুর্গা উৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর বাংলাদেশে ত্রিশ হাজারের উপর পুজা মন্ডপ তৈরি হয়। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় উৎসব। দশমির দিন বিসর্জনের জন্য প্রতিমা বসানো হয় ষষ্ঠীর দিন অর্থাৎ চারদিন প্রতিমা পূজা মন্ডপে থাকে। কিন্তু সেই মহাযোজ্ঞ শুরু হয়ে যায় চার মাস আগে খুব একটা ঘটা করে। প্রথমত রথ যাত্রার প্রথম দিন প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করতে হয়। এটাই ঐতিহ্য। সঙ্গে প্রতিমা তৈরির শুরুতে প্রতিমাদের উদ্দেশ্যে পূজা দেওয়ার রীতি রয়েছে। এটায় আনুষ্ঠনিকতা। তার পর কাজ শুরু।

ঝিনাইদহ জেলার হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয়া দুর্গা পূজা উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা তৈরির কারু শিল্পীরা। শারদীয়া উৎসব এখনও ১৪ দিন বাকি থাকলেও কারুশিল্পীরা প্রতিমা গড়ার কাজে এগিয়ে চলেছে।

জেলা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয়া উৎসবের আমেজ অগ্রীম বইতে শুরু করছে। আগামী ১৫ ই অক্টবর ইং বাংলা ৩০ শে আশ্বিন থেকে ৫দিন ব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা শুরু হবে। স্থানীয় কারীগর ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমা তৈরি করতে তারা এক প্রান্ত থেকে দেশের আরএক প্রান্তে চলে আসে।

কারু শিল্পীরা প্রতিমা তৈরি করতে প্রথমে বাঁশ, খড়, মাটি, কাঠ, সুতা ব্যবহার করে। তারপর শুকানোর পর রং দিয়ে আধুনিক রুপে রুপায়ীত করে তোলে কারুশিল্পীরা। প্রতিটি শারদীয়া দুর্গা উৎসবের জন্য মন্ডপে কাত্তিক, গণেশ, লক্ষী, সরস্বতী, দুর্গা, সর্প, মহিষ, সিংহ সহ নানা ধরণের আকষণীয় প্রতিমা তৈরি করে থাকে মন্ডপে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৭নং মহারাজপুর ইউনিয়নের বিষয়খালী বাজারে সার্বজনীন পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরি করতে এসেছেন নীল কমল বিশ্বাস, বিপুল, সুফল, নিতাই। তারা ছয়টি প্রতিমার কাজ এ বছর হাতে নিয়েছেন।

নীল কমল বিশ্বাস জানান, “বাপদাদার পেশার কাজ করতে যেয়ে আজ এ পেশায় আমরা জড়িয়ে পড়েছি। তারা আরও জানান, বছরে বাকি সময়গুলো বিশ্বকর্মা, লক্ষী, স্বরসতী, গণেশসহ অর্ডারের কাজ করে থাকে। কিন্তু এ মৌসুমীতে বড় পূজার কাজ তৈরি করতে তাদের রাতদিন কাজ করতে হচ্ছে। একটু খাবারের সময় পর্যন্তও পাচ্ছেনা। দুর্গা প্রতিমা তৈরি করতে তারা এ বছর ৫০-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।

বিষয়খালী বাজার অনিক ডেকোরেটর মালিক অবনীশ জানান, শারদীয়া দুর্গা পূজা উপলক্ষে আধুনিক আলোক সজ্জার জন্য তাদের অগ্রিম ডেকোরেটরের কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিটি পুজার ডেকোরেটরের জন্য ৫০-৬০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে।

সদর উপজেলা বিষয়খালী বাজার পূজা মন্দির কমিটির সভাপতি বিকাশ ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক অবনীশ ভৌমিক জানান, শারদীয়া দুর্গা পূজা উপলক্ষে আধুনিক আলোক সজ্জার জন্য তারা ৮০ হাজার টাকায় এবার সদর উপজেলার মধুপুর বাজারের প্রান্ত ডেকোরেটরের অগ্রিম কাজ করতে দিয়েছেন। শারদীয়া দুর্গা পূজা উপলক্ষে ঢাক-ঢোল বাজনাদের চাহিদাও বেড়ে গেছে।

ঝিনাইদহ জেলা পুজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল কুমার সরকার জানান, এ বছর ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলার ৪৪৬টি পূজা মন্ডপে শারদীয়া দূর্গা উৎসব উদ্যাপিত হবে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদরে ১০৪টি, শৈলকুপা উপজেলাতে ১২৩টি, কালীগঞ্জ উপজেলাতে ৯৮টি, কোটচাঁদপুর উপজেলাতে ৫২টি, মহেশপুর উপজেলাতে ৪২টি, ও হরিনাকুন্ডু উপজেলাতে ২৭ টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

বিষয়খালী বাজার পূজা মন্দির কমিটির ক্যাশিয়ার সন্জয় কুমার জানান, এবার সুষ্ঠুভাবে পূজা উৎযাপ করার জন্য আমাদের যাযাকরার দরকার তাই তাই করবো যাতেকরে কোনোপ্রকার অরাজকতা সৃষ্টি না হয়।

ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, পুজার জন্য র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, বি.জি.বি ও সাদা পোশাক পরিহিত পুলিশসহ স্থানীয় লোকের সার্বিক সহযোগিতায় সর্বাত্বক সতর্ক অবস্থায় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিয়োজিত থাকবেন।