আপিল বিভাগে তিন বিচারকের শপথ

হাই কোর্টের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা বিচারপতি জিনাত আরা, বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান এখন থেকে আপিল বিভাগে বিচারিক দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আপিল বিভাগের তিন নতুন সদস্যকে শপথ পড়ান।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারকদের উপস্থিতিতে শপথ অনুষ্ঠানে পরিচালনা করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল জাকির হোসেন।

নতুন তিনজনকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এখন বিচারকের সংখ্যা হল সাতজন।

শপথের পর আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাশ কক্ষে নতুন তিন বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেয় বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছিল না।

বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি এজলাশে বসেন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম একে একে নবনিযুক্ত তিন বিচারকের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরেন।

বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন তিন বিচাপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য দেন।

বিচারপতি জিনাত আরা মামলা জটকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা নিরসনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে বার এবং আইনজীবীদের সহযোগিতা চান তিনি।

বাংলাদেশের আপিল বিভাগের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া এই বিচারক বলেন, আইনের শাসন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বিচারপ্রার্থী মানুষের বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। মামলা জট নিরসনের ক্ষেত্রে সফল না হলে বা মামলা জট বাড়তে থাকলে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বিশ্বাস হারাবে।

বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে লালিত একটি পরিবার থেকে আমি উঠে এসেছি। মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আগে যেমন সচেষ্ট ছিলাম, এখনও থাকব।”

বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বলেন, “আইনজীবী হিসেবে এবং পরে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে আদর্শ, সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে এসেছি। আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবেও আদর্শ ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করার জন্য শপথ নিয়েছি। সে শপথ রক্ষা করব।”

বিএসসি ও আইন পাস করে ১৯৭৮ সালে মুন্সেফ হিসেবে বিচার বিভাগে দায়িত্ব পালন শুরু করেন জিনাত আরা। ১৯৯৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে জেলা ও দায়রা জজ হন।
২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাই কোর্টে অস্থায়ী বিচারক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার দুই বছর পর স্থায়ী হন তিনি।

হাই কোর্টের জ্যেষ্ঠতার ক্রমে বিচারপতি জিনাত আরার অবস্থান ছিল চার নম্বরে।

১৯৫৩ সালের ১৫ মার্চ জন্মগ্রহণ করা বিচারপতি জিনাত আরা অবসরের বয়সসীমা অনুযায়ী আরও দুই বছর সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ২০০৯ সালের ৩০ জুন একইসঙ্গে হাই কোর্টে অস্থায়ী বিচারক হিসাবে নিয়োগ পান এবং দুই বছরের মাথায় স্থায়ী হন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারকদের তালিকায় তারা যথাক্রমে ২৫ ও ২৬তম ক্রমে ছিলেন।

১৯৫৪ সালের ২৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করা আবু বকর সিদ্দিকীর ছোট ভাই হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া বারে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন আবু বকর সিদ্দিকী।

পরের বছর মুন্সেফ হিসেবে বিচার বিভাগের চাকরিতে যোগ দেন এবং ১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ হন। এর এক যুগ পর তিনি ডাক পান হাই কোর্টে।

বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের জন্ম ১৯৫৬ সালে। একাত্তরে তিনি সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ এলাকায় সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
মাস্টার্স ও এলএলবি ডিগ্রি নেওয়ার পর আইন পেশায় যোগ দেন মো. নূরুজ্জামান। ১৯৮৩ সালে জেলা আদালত এবং ১৯৮৭ সালে হাই কোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৯ সালে তিনি বিচারক হিসেবে যোগ দেন হাই কোর্টে।

বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা গত ২ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করলে আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নেমে আসে চার জনে।

বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এতদিন আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।