দুর্নীতির মামলায় অনুমতি ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের গ্রেফতার নয়, বিল সংসদে

songsod

কোনও সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ফৌজদারি মামলা হলেও আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণের আগে তাকে গ্রেফতার করা যাবে না। আর এ অবস্থায় যদি গ্রেফতার করতে হয় তাহলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। এমন বিধান রেখে রবিবার (২১ অক্টোবর)জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে ‘সরকারি চাকরি বিল ২০১৮’।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। উত্থাপনের পর যাচাই-বাছাই করে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিলটি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

এর আগে ২০ আগস্ট বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। চলতি অধিবেশনেই এই বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রস্তাবিত এই আইনে বলা হয়েছে, কোনও সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনও আদালতে ফৌজদারি বা অন্য কোনও আইনি কার্যধারা বিচারাধীন থাকলে বিচারাধীন এক বা একাধিক অভিযোগের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা রুজু বা নিষ্পত্তির ব্যাপারে কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। বিলের ৪১ ধারায় এই কথা বলা হয়েছে।

বিলের ৭ ধারায় বলা আছে, এই আইনের আওতাভুক্ত কোনও কর্ম বা কর্মবিভাগে সরাসরি জনবল নিয়োগের ভিত্তি হবে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা। সংবিধানের ২৯(৩) অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য পদ সংরক্ষণের বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

সংবিধানের ২৯(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না। নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা যাবে।’

বিলের ২৫ ধারায় বলা আছে, কোনও ব্যক্তি সেবা পাওয়ার জন্য আবেদন করলে সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, কিংবা সময়সীমা উল্লেখ না থাকলে যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে। কোনও কর্মচারী এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তা ওই কর্মচারীর অদক্ষতা ও অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। ২৬ ধারায় বলা আছে, কোনও কর্মচারী নির্ধারিত বা যুক্তিসঙ্গত সময়ে সেবা প্রদানে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ ওই কর্মচারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে সেবাপ্রার্থী ব্যক্তিকে প্রদান করতে পারবে।’

৩২ ধারায় বলা আছে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দোষীসাব্যস্ত কোনও কর্মচারীর ওপর বিধি মোতাবেক একাধিক লঘু ও গুরুদণ্ড আরোপ করতে পারবে। লঘুদণ্ডের মধ্যে আছে- তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি ও বেতন-ভাতা স্থগিত করা, বেতন স্কেল অবনমিত করা এবং সরকারি অর্থ ও সম্পত্তির ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ আদায় করা। গুরুদণ্ডের মধ্যে আছে- বেতন নিম্ন স্কেলে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা, চাকরি হতে অপসারণ করা এবং চাকরি হতে বরখাস্ত করা।

৩৮ ধারায় বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের কর্ম হতে বরখাস্ত হয়েছেন এমন কোনও ব্যক্তি ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের কোনও কর্মে বা রাষ্ট্রের অন্য কোনও কর্তৃপক্ষে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।

৪২ ধারায় বলা আছে, কোনও সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বা এক মেয়াদের বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে ওই ব্যক্তি দণ্ড আরোপের রায় প্রদানের দিন থেকে চাকরি হতে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত হবেন। তবে কর্মচারী এক বছর বা তার কম মেয়াদের জন্য দণ্ডিত হলে কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তিকে তিরস্কার, পদোন্নতি ও বেতন স্থগিত করা, পদ ও বেতন স্কেলের অবনমন করা এবং সরকারি সম্পদের ক্ষতি হয়ে থাকলে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে।

তবে এই আইনে যাই থাকুক না কেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনক মনে হলে তিনি সাজা পাওয়া ব্যক্তিকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবেন এবং চাকরিতে পুনর্বহাল করতে পারবেন।

৪২ ধারার এই বিধান সম্পর্কে কোনও আদালতে প্রশ্ন বা আপত্তি উত্থাপন করা যাবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।