এই রায় রাজনীতিকদের জন্য একটি মেসেজ: অ্যাটর্নি জেনারেল

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের রায়টি সব রাজনীতিকের জন্য একটি মেসেজ বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘এই রায় নিশ্চয়ই একটি ইঙ্গিত বহন করে যে, রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে কেউ যদি অন্যায় করে, তবে সে কোনও আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না। তাই এই রায় রাজনীতিকদের জন্য একটি মেসেজ।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার পর মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন আটর্নি জেনারেল।

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াসহ মোট তিন আসামির পক্ষে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করা হয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে একটি রিভিশন আবেদন করে। মঙ্গলবার হাইকোর্ট ডিভিশন মামলাটি নিষ্পত্তি করেছেন। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রায় দিয়ে আসামিদের তিনটি আপিল খারিজ করে দিয়েছেন এবং দুদকের রিভিশন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। ফলে এই রায়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে এই মামলাটির পরিসমাপ্তি ঘটলো।

হাইকোর্টের রায়ের পর খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা, তা জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘কেউ সাজাপ্রাপ্ত হলে নিশ্চয়ই পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সাজা বাতিল না হয়। সাজার দুই রকম ব্যাখ্যা রয়েছে। এক. আপিল করে সাজা বাতিল করা এবং দুই. সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করা। এখানে আমার অভিমত হলো, কেউ নির্বাচন করতে চাইলে তাকে সাজা বাতিল করতে হবে। তবে সাজা সাময়িক স্থগিত করে নির্বাচন করতে পারবে না। ফলে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আপিল শুনানি অবস্থায় থাকলেও হবে না, যেপর্যন্ত সাজা বাতিল না হয়।’

এর আগেও অনেকেই সাজা স্থগিত রেখে নির্বাচন করেছেন সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে নির্বাচন করতে পারবেন কিনা তার জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা অনেকেই আইনের নানান ফাঁকফোকর দিয়ে করতে পারেন। কিন্তু আমার ব্যাখ্যা হলো যে, কেউ যদি দণ্ডপ্রাপ্ত হন সেক্ষেত্রে তার দণ্ড যতক্ষণ না বাতিল হবে, সে পর্যন্ত তিনি মুক্ত মানুষ হিসেবে পরিগণিত হতে পারেন না। আবার সাজা স্থগিত হলে আপাতত জেল খাটা থেকে হয়তো অব্যাহতি পেতে পারেন, কিন্তু নির্বাচন করতে পারবেন না।’

এই মামলার পলাতক আসামিদের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘যারা এ মামলায় পলাতক আছেন, তারা তো হাইকোর্টে আসেননি (আপিল করেননি)। তাই তাদের বিষয়ে কিছু বলার হাইকোর্টের অবকাশ নেই। ’

রায় ঘোষণার সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে হাজির না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তাদের ইচ্ছা। আদালত তাদের সব সুযোগ প্রদান করেছেন। গত চারমাস ধরে হাইকোর্টে ২৮ কার্যদিবস এ মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। সম্পূর্ণরকম সুযোগ তাদের দেওয়া হয়েছে। এরকম সুযোগ দেওয়া নজিরবিহীন। ’

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এই রায়কে একতরফা এবং নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে দূরে রাখতে এ ধরনের সাজা দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্যের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এর কোনও সারবত্তা নেই। তারা এতদিন শুনানি করেছেন।’

মামলাটির পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ কি হবে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘সাধারণত হাইকোর্টের রায়ের পর ৩০ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে আপিল করার বিধান রয়েছে। তবে আপিল করা হবে কিনা সে বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত নেবেন। এটা তাদের বিষয়।’