আশার মুকুল ঝরতে শুরু করেছে: সংলাপ প্রসঙ্গে রিজভী

নির্বাচনের আগে বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগে যে ‘আশার’ সঞ্চার হয়েছিল, ক্ষমতাসীনদের অনড় অবস্থানের কারণে তা ফিকে হতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

সংলাপের পরদিন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকারি জোটের সংলাপে সরকারের যে একগুয়ে মনোভাব, তা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বড় ধরনের অশনি সংকেত।

“সংলাপে মানুষের মনে যে আশাবাদ জেগে উঠেছিল, সংলাপ শেষে সেই আশার মুকুল ঝরতে শুরু করেছে।”

গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংলাপ শেষে রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেন বলেন, এ আলোচনায় বিশেষ কোনো সমাধান তারা পাননি। আর জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট নন।

আর রিজভী শুক্রবার নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সাত দফা দাবির প্রতি সাড়া না দেওয়ার আওয়ামী অনড়তায় সুষ্ঠু নির্বাচনের অগ্রগতি তিমিরাচ্ছন্ন হল। “

নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন অবস্থান থেকে আলোচনার জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকেই সংলাপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এতদিন আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে আসা শেখ হাসিনা অপ্রত্যাশিতভাবেই তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ‘সংবিধানসম্মত বিষয়ে’ আলোচনার জন্য ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানান।

ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বক্তব্যে হতাশার সুর থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতে গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু বলেছিলেন, “বরফ গলতে শুরু করেছে।”

আর আওয়ামী লীগের পক্ষে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে এসে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের একটি দাবি ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন, সভা-সমাবেশ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক রাখার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন।

তবে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যে সাড়া মেলেনি, সে কথা জানা যায় সংলাপে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী শ ম রেজাউল করিমের কথায়।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আদালতের বিষয়, সরকারের নয়। আর নির্বাচন হবে সংবিধানে যেভাবে বলা আছে সেভাবে। বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় জানিয়ে দিয়েছেন।

যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় আবারও আলোচনা হতে পারে- এমন কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বললেও বিএনপি নেতা রিজভী সংলাপ নিয়ে এখন পর্যন্ত ‘আশাপ্রদ’ কিছু দেখছেন না।

“যে আশা ফুটে উঠেছিল, ফুলের মুকুল যেমন ঝরে যায় আস্তে আস্তে। সেটা এখন ঝরে যেতে শুরু করেছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, সংলাপের পরও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে সংলাপ শেষ হওয়ার পরপরই টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালেহ মোহাম্মদ ইথেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সরকার অনমনীয় মনোভাব দেখাতে থাকলে সাত দফা দাবি ‘রাজপথেই আদায় করতে হবে’ মন্তব্য করে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান রিজভী।

তিনি বলেন, “সরকারের যদি বোধদয় হয়, যদি একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য আন্তরিকতা থাকে, যদি দেশকে বিভেদ ও বিভাজনের দিকে তারা ঠেলে না দেন তাহলে আবার তারা বসবেন। বসে এমন একটা ঐকমত্য তৈরি করবেন, যেখানে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে নির্ভয়ে যেতে পারবে এবং অবশ্যই সেটা নির্দলীয় সরকারের অধীনে হবে। অবশ্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে- এ ব্যাপারে আমরা আপসহীন।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, আবেদ রাজা, সাইফুল ইসলাম পটু সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।