প্রধানমন্ত্রী যুক্তফ্রন্টের দাবি-দাওয়া নিয়ে নীতিগতভাবে একমত: বি. চৌধুরী

যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বেশিরভাগ দাবি-দাওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে যেসব দাবি দাওয়া তুলে ধরেছি প্রধানমন্ত্রী এতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপ শেষে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বি. চৌধুরী বারিধারার বাসায় ফিরে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

এসময় সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার আমাদের দাবির সাথে প্রধানমন্ত্রী একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন- নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের অধীনে থাকবে না, তফসিল ঘোষণার পর রাষ্ট্রপতির অধীনেই থাকবে। এ সব ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কোনো দ্বিমত নেই।

যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবির সাথে একমত হয়েছেন যে, নির্বাচনের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কর্মচারীরা নির্বাচন কমিশনের অধীনেই ন্যাস্ত থাকবে। তফসিল ঘোষণার পর এমপিগণ সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো প্রকল্প উদ্বোধন বা প্রতিশ্রুতি যাতে না দিতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী রাজি হয়েছেন।

তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রী ও এমপিদের সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রত্যাহার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সরকারি দলের প্রর্থীদের বিল বোর্ড, ব্যানার, পোস্টার ইত্যাদি প্রসঙ্গে বলেন এসব অপসারণ করা হবে।

বি. চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার বা জাতীয় সরকার গঠন প্রসঙ্গে আমাদের দাবির সাথে প্রধানমন্ত্রী একমত হন নাই। তবে তিনি বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ থাকবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সেনাবাহিনী উপজেলা পর্যায়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে।

বি. চৌধুরী বলেন, ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা নেই। সেই জন্য আমরা এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সঠিক হবে না বলে মনে করি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে অধ্যাদেশ হয়ে গেছে। তবুও তিনি রাষ্ট্রপতির সাথে কথা বলবেন।

নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দীদের মুক্তি দেয়ার দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এ ব্যাপারে আমরা আগেই রাজি হয়েছি। এটা বাস্তব দাবি।

এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ৪৪ মিনিটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের সংলাপ শুরু হয়।

বৈঠক শেষে বের হয়ে যাবার সময় যুক্তফ্রন্ট নেতা বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি জেবেল রহমান গাণি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি আমাদের কথা ধৈর্যসহকারে শুনেছেন। আমরা আশা করছি নির্বাচনে যাব।

বিকল্পধারার সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা বলেন, দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। আমরা তার কথায় সন্তুষ্ঠু। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন কালীন সময়ে তফসিল ঘোষণার পর কেউ মন্ত্রী হিসেবে পতাকা ব্যবহার করবেন না। তারা শুধুমাত্র নিয়মতান্ত্রিক দাফতরির দায়িত্ব পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন।

সংলাপে ১৪ দলীয় জোটের ২৩ সদস্যের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিপরীতে যুক্তফ্রন্টের ২১ সদস্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জোট নেতা ও বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

সংলাপে অংশ নিতে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বি. চৌধুরীরা গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে প্রবেশ করেন। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে বারিধারার বাসা থেকে গণভবনের উদ্দেশে তারা রওনা হন।

সংলাপে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের ২৩ নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, দলনেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর উল্যাহ, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আবদুর রহমান, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাসদের একাংশের সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল।

আর যুক্তফ্রন্টের ২১ নেতা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, দলনেতা ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, আবদুর রউফ মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসুফ, সহ-সভাপতি মিসেস মাহমুদা চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, সহ-সভাপতি মাহবুব আলী, সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি জেবেল রহমান গাণি, মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, বিএলডিপি সভাপতি নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, মহাসচিব অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন খান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, জাতীয় জনতা পার্টির সভাপতি শেখ আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ জনদলের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ইউনাইটেড মাইনরিটি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান দীলিপ কুমার দাস, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হামদুল্লাহ আল মেহেদী, সাবেক এমপি মজহারুল হক শাহ চৌধুরী ও এনডিপি’র মহাসচিব মো. মাযহারুল হোসেইন ঈসা।

এর আগে গত ৩১ অক্টোবর বিকল্পধারার চেয়ারম্যান বি. চৌধুরী সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন। এরপর গণভবনে তাদের শুক্রবার সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।

এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকল্পধারা সংলাপের জন্য দলের নেতাদের তালিকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে দেন। চিঠিটি সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে পৌঁছে দেন বিকল্পধারার সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক।

একইসঙ্গে গণভবনে নৈশভোজে সাদা ভাত, লাল আটার রুটি, ফুলকপি, সিম, আলু ভাজি, যেকোনো মাছের ঝোল ও মসুরের ডাল রখার জন্য বি. চৌধুরীর পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।

পরে সংলাপ শেষে রাত ১১টায় বি. চৌধুরী বারিধারার বাসায় এসে সাংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।