নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষ্যা ইউনিয়নে দুইপক্ষের সংঘর্ষে ৪রজন নিহতের ঘটনার দায় আওয়ামী লীগ নিবে না বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু বীর প্রতীক। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান।
শনিবার বিকেলে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম হিরু এসব কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম হিরু বলেন, ‘বর্বরতম সংঘর্ষ ও হতাহতের দায় আওয়ামী লীগের নয়। এই দায় আওয়ামী লীগ নিবে না। শুধু স্থানীয় নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বার বার এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। তবে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যারা আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে বাড়িঘরে হামলা, পাল্টাহামলা ও টেঁটা যুদ্ধের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দল থেকে বহিষ্কারসহ দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নজরুল ইসলাম হিরু আরো বলেন, ‘এই মারামারিটা আওয়ামী লীগের কোনো মারামারি নয়। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যে এই মারামারিটা একান্তই ওইখানকার স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। এখানে আওয়ামী লীগের নাম আসাটা দুর্ভাগ্যজনক। আওয়ামী লীগ এখানে কোনো পার্টি নয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আমি আপনাকে এই নির্দেশ দিচ্ছি যে, আপনি ইমেডিয়েটলি গিয়ে আপনি এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবেন। এবং হালকা কোনো ব্যবস্থা না। দেয়ার ইজ নো কম্প্রোমাইজ। এই ধরনের ঘটনায় কোনো কম্প্রোমাইজ নাই। আওয়ামী লীগ এগুলি কোনোমতেই গ্রহণ করবে না। এই সব লোককে নেতৃত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূইয়া, রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান, রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাচ্চুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, নিলক্ষ্যা ইউনিয়নে দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৩ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা করেছে রায়পুরা থানা পুলিশ। তবে নিহতের ঘটনায় দুই দিনেও থানায় কোনো হত্যা মামলা করা হয়নি।
হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিলক্ষ্যা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে উত্তেজনা বিরাজ করছে। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, নিলক্ষ্যা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রয়াত দুই নেতা সাহেদ সরকার ও সিরাজুল চেয়ারম্যানের মধ্যে বহুদিন ধরে সংঘর্ষ চলে আসছিল। এই দুই নেতা মারা গেলেও, এরই জের ধরে গতকাল সকালে ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও প্রয়াত সাহেদ সরকারের সমর্থক জামাল, জাকির ও সুমনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানা নিহত হয়। এ সময় আহত হয় কমপক্ষে ১০ জন।
এ ঘটনারই জের ধরে দুপুর ২টার দিকে উপজেলার নিলক্ষ্যা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর বীরগাও কান্দাপাড়া গ্রামে আবারো আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বিকেলে সোহরাব মিয়া (৩০) নামের এক ব্যাক্তি নিহত হয়। এ খবর ছড়িয়ে পরলে সন্ধ্যার পর সংঘর্ষ আরো ভয়াবহ রূপ নেয়। থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে সন্ধ্যার পর স্বপন (২৭) ও মরম আলী (৪০) নিহত হয়। রাত পর্যন্ত আহতের সংখ্যা দাঁড়ায় অর্ধশতাধিক। পরে রাতেই ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আজ সকালে দুটি মামলা করে রায়পুরা থানা পুলিশ।