এ বছর হচ্ছে না রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ও স্থানান্তর প্রক্রিয়া সামনের বছরে গড়াতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। দেড় মাস পর ৩০ ডিসেম্বর দেশে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের পর সামনের বছরে আবার রোহিঙ্গা সংকট নিরসন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে বাংলাদেশের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

প্রত্যাবাসনের সঙ্গে নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের প্রক্রিয়াও জাতীয় নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন হবে না বলে মনে করছেন আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন আসন্ন, সরকার নির্বাচনের পরই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।’

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নারাজির মুখে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আবার চালু করতে শরণার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে নতুন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া দরকার বলে মনে করেন ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার। তবে এসব তাঁর ব্যক্তিগত ধারণা বলে দাবি করেন আবুল কালাম।

জাতিসংঘের হিসাবমতে, গত বছর মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে সাত লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান দেশ ছেড়ে শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আশ্রয় নেয়।

এ বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে সম্মত হয়। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং অন্য সাহায্য-সংস্থাগুলো নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে।

ওই প্রক্রিয়ার প্রথম পর্বে নভেম্বরের ১৫ তারিখ দুই হাজার ২০০ শরণার্থীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা থাকলেও রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভের মুখে তা ভেস্তে যায়। পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব, যার যার জমি দখলে পাওয়া এবং নিজ গ্রামে ফেরত যাওয়ার শর্তে ফিরে যেতে রাজি রোহিঙ্গারা। তবে ভেস্তে যাওয়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় তাদের মিয়ানমারে বিশেষ ক্যাম্পে রাখার কথা ছিল।

আর এসব ছাড়া একজন রোহিঙ্গাও স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি হবেন না বলে মনে করেন আবুল কালাম। গত সপ্তাহে তিনি ‘যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য’ দাবিগুলো মেনে নিতে বিশ্ববাসীর প্রতি মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান।

মিয়ানমার সরকার অবশ্য রোহিঙ্গাদের তাদের দেশের কেউ মনে করে না এবং তারা তাদের ‘বাঙালি’ বলে আখ্যায়িত করে থাকে। মিয়ানমার বলছে, রোহিঙ্গাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন। অন্যদিকে রোহিঙ্গারা এই কার্ডের মাধ্যমে তাঁদের বিদেশি প্রমাণ করা হবে বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আবুল কালাম বলেছেন, মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের পথে একটি পরিষ্কার পরিকল্পনা নিতে হবে। সামনের মাসে দেশটির সঙ্গে বৈঠকে এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেবেন বলে জানান তিনি। এ নিয়ে মিয়ানমারের সরকারের মুখপাত্র জ তে-এর বক্তব্য চেয়েও পায়নি রয়টার্স।

তবে বাংলাদেশ সরকার এ ক্ষেত্রে কাউকে ফেরত যেতে জোর করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চায় এমন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তালিকা তৈরির অনুরোধ জানিয়েছে।

জাতিসংঘের সংস্থাটি কয়েক দিন পরে এ নিয়ে তাদের অবস্থান জানাতে চেয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী নেতারা নতুন পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে তাঁদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাপ দেওয়া হচ্ছে না।

তবে নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য বিকল্প আবাসন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলে জানিয়ে আবুল কালাম রয়টার্সকে বলেছেন, সেখানকার জীবনমান বিবেচনায় নিয়ে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী ভাসানচরে স্থানান্তর হতে রাজি হবেন। চাষাবাদ ও মাছ ধরার সুযোগ থাকায় এটি রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসনের ভালো জায়গা হবে মনে করা হচ্ছে। তবে বন্যায় চরটি প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সাহায্য সংস্থাগুলো।