বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে প্রথমবারের মতো নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়ল দেশের প্রাচীনতম এ দলটি।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দলটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
সোমবার (১২ মে) রাতে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই দিনের আন্দোলনের মুখে গত শনিবার (১০ মে) জরুরি বৈঠকে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। রোববার (১১ মে) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তের গেজেট পেলেই আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব। ’
সোমবার সকালে কমিশন সভায় বসেন সিইসি। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সূর্য উঠলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। গেজেট এখনো পাইনি। পেলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
বিকেলে সরকার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। সিইসির সঙ্গে ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম, রহমানেল মাসউদ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদ অংশ নেন।
পরে রাতে সাড়ে নয়টার দিকে ইসি সচিব আখতার আহমেদ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ’
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ এর সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, “সরকার যুক্তিসঙ্গতভাবে মনে করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮(১) অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটি এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা দরকার। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। ”
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নির্বাচনমুখী দলগুলোর মাঝে নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। সে বছর ৩ নভেম্বর ছয় নম্বর দল হিসেবে নিবন্ধন পায় দেশের প্রাচীনতম এ দলটি। এর আগে কখনো নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়ার মতো অবস্থায় পড়েনি আওয়ামী লীগ।
এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। এবার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রমের ওপর সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার পর দলটির নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকল ৪৯টি দলের।
গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ (জ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সরকার কোনো দলকে নিষিদ্ধ করলে ইসির জন্য সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সরকার দলকে নিষিদ্ধ না করে কেবল দলীয় কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আ.লীগের নিবন্ধন বাতিল না করে স্থগিতের সিদ্ধান্ত দিল ভোট আয়োজনকারী সংস্থাটি।