আরো অনেক দূর যেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার নানা চিত্র তুলে ধরে বলেন, “এই যে মর্যাদা আমরা পেয়েছি, বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের গতিধারাটা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই হচ্ছে লক্ষ্য।

“ইনশাল্লাহ আমরা তা পারব। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম আজকে এগিয়ে চলার পথে আমরা যখন যাত্রা শুরু করেছি, ইনশাল্লাহ এই যাত্রা আর কেউ বন্ধ করতে পারবে না। শুধু আপনাদের দোয়া চাই।”
২০০৯ সাল থেকে দুই মেয়াদে টানা ক্ষমতায় থাকার কথাও তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “২০০৮ এ নির্বাচনে ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম দিনবদলের সনদ। আপনারাই বিবেচনা করে দেখবেন সেই দিনবদল আমরা করতে পেরেছি কি না। আমি দাবি করব, অবশ্যই দিনবদল করতে পেরেছি। তবে আমাদের আরো অনেক দূর যেতে হবে। আরো অনেক উন্নত করতে হবে দেশকে।”

দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২১ ভাগে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আরো অন্তত পাঁচ ভাগ এই দারিদ্র্যের হার আমরা কমাব। বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ।আজকে যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে সেটাকেও আমাদের ধরে রাখতে হবে।”

বিশ্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন অনেক দেশই বাংলাদেশের মত উন্নয়ন করতে চায়।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদ তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং জনগণের কল্যাণে কাজ করাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা, আর সে লক্ষ্যে তিনি কাজ করছেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “অনেক ঝড়-ঝাপটা পার করেই আমাকে এগোতে হয়েছে।”

মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মান ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি দেখেছি আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কত অবহেলিত ছিল। চেষ্টা করেছি তাদের সন্মান ফিরিয়ে দেওয়ার। তাদের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ বংশানুক্রমিকভাবে যেন সন্মানটা পায় সেই চেষ্টাটা করেছি।

“সেইসাথে তাদের জীবনযাত্রা যেন ভালভাবে চলতে পারে সে সেষ্টা করেছি। আমরা যেন সকল রকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নত করে দিতে পারি।”
একসময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হলেও সত্য চাপা রাখা যায়নি বলেও জানান তিনি।

জাতির পিতার সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য দলিল হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এই ভাষণকে কেন্দ্র করেই মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে তুলে নেয় এবং যার যার যা আছে তাই নিয়ে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলে। এখন আর কেউ বাংলাদেশের ইতিহাস মুছে দিতে পারবে না, এটাই সত্য।”

মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর থেকে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে পাঁচ হাজার টাকা করে বিজয় দিবস ভাতা এবং দুই হাজার টাকা নববর্ষ ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শন্তিকালীন সাহসিকতাপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সেনাবাহিনীর নয়জন, নৌবাহিনীর একজন ও বিমানবাহিনীর তিনজনসহ ১৩ জনকে ‘শান্তিকালীন পদক ২০১৭’ দেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের হাতে সম্মানীর চেক ও বিভিন্ন উপহার তুলে দেন শেখ হাসিনা।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।