রিটার্নিং কর্মকর্তারা সৎমায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ : রিজভী

ruhul kabir rizvi
ফাইল ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা সৎমায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে রিটার্নিং কর্মকর্তারা বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করেছেন।

মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন রিজভী।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডেকে এনে বৈঠক করে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গণহারে বাতিল করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপত্রে অসংখ্য ত্রুটি থাকার পরও সেগুলোকে বাতিল করা হয়নি। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়া ও তথ্য গোপনের অভিযোগ থাকার পরও সরকারি দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়নি।’

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হায়াত উদ দৌলা খানের কার্যালয়ে রোববার মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রমে মনোনয়ন বাতিল হওয়া বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ কোনো প্রার্থীকে কথা বলার সুযোগ দেননি তিনি। নির্বাচনী আচরণবিধির বিধান হচ্ছে, প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে তাঁদের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। কোনো ডকুমেন্টস উপস্থাপন করতে চাইলে তা করতে দিতে হবে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা যদি শুরুতেই প্রার্থীকে থামিয়ে দেন, তাহলে বুঝতে হবে রিটার্নিং কর্মকর্তা দুরভিসন্ধি নিয়ে কাজ করছেন। এভাবে সারা দেশেই রিটার্নিং কর্মকর্তারা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিএনপির মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া চলবে না। কিন্তু যদি রিটার্নিং কর্মকর্তা বা নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত অন্য কোনো কর্মকর্তা কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থের পক্ষে কাজ করেন, তাহলে তা হবে গুরুতর অসদাচরণ। এটি সমগ্র নির্বাচন কমিশনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচন কমিশন, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাচনে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের ভোটে নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়, জনমনে শঙ্কা ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি দেশব্যাপী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডে নির্বাচনে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটবে কি না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত রিটার্নিং কর্মকর্তারা যা করছেন, তা কেবলই প্রহসন।

রিজভী বলেন, আয় কমে গেলেও ক্ষমতাসীন মন্ত্রী-নেতাদের সম্পদ বাড়ে, অথচ এগুলোতে দুদক ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আসন্ন নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও দেশব্যাপী গভীর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের আগ্রাসী তৎপরতা ও নির্বিচারে দেশব্যাপী বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযানে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনেরই ছবি মানুষ দেখতে পাচ্ছে। যেন পাতানো কিছু একটা করতে যাচ্ছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। স্বৈরশাসিত এই দেশে আগামী দিনে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অধঃপতনের লক্ষণগুলোই ফুটে উঠছে। তবে এবারের নির্বাচন নিয়ে জনবিরোধী কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে এই অবৈধ আধিপত্য অভিলাষী সরকার নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে আনবে। ভোটারদের বঞ্চিত করে ভাগ্নে শাহজাদাদের বিজয়ী করার নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী পুলিশের ওপর নির্ভরপরায়ণ ও সামর্থ্যহীন। সুতরাং গণভিত্তি নেই বলেই এদের পতন অত্যাসন্ন।