নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শুনানি আজ। ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে এ মামলার বিচারকাজ চলছে।
এই মামলায় গত ২২ নভেম্বর রয়েল কানাডীয় মাউন্টেড পুলিশের দুজন কর্মকর্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) একজন কর্মকর্তাকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। তবে তারা আজকের শুনানিতে সাক্ষ্য দেবে কিনা সেটা জানা যায়নি। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বসানো অস্থায়ী এজলাসে এ মামলার বিচারকাজ চলছে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের নাইকো দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতা পরিষ্কার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। গতকাল ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এক স্ট্যাটাসে জয় এ কথা বলেন। স্ট্যাটাসটির সঙ্গে তিনি মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই ও রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের সাক্ষ্য করা নথিও তুলে ধরেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ নাইকো দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছে যা আমাদের দেশের আদালতে ইতোমধ্যে ফাইল করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাইকো দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতা পরিষ্কার।’
২০০৮ সালের জানুয়ারিতে নাইকো দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন এফবিআই। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুরোধের প্রেক্ষাপটে এফবিআই ওই তদন্ত শুরু করে।
২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সংস্থাটির আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার ও সম্পদ উদ্ধার বিশেষজ্ঞ স্পেশাল এজেন্ট ডেবরা লাপ্রেভোটে গ্রিফিত চারবার বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সময় ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেশন কমিটি অ্যাগেইন্সট গ্রিয়েভাস অফেন্সেসের (এনসিসিএজিও) সঙ্গে তিনি নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর তদন্ত কাজে কাজে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড ও কানাডা থেকে নথি সংগ্রহ করেন।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘নাইকো মামলার শুনানির দিন রয়েছে। তবে আজ এফবিআইয়ের কেউ আদালতে স্বাক্ষ্য দিবেন কি না আমার জানা নেই।’
এফবিআই কর্মকর্তারা সাক্ষ্য দেবেন কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গতকাল বলেন, ‘তারা শুনানিতে সাক্ষ্য দেবেন কিনা আমার ঠিক জানা নেই।’
এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দীন খোকন বলেছেন, ‘মূলত শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় থাকাকালে নাইকোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া তার সরকারের আমলে কেবল ফাইলটির অনুমোদন দিয়েছিলেন। তাই কানাডিয়ান পুলিশ ও এফবিআইয়ের প্রতিবেদন একপেশে।’
২০০৭ সালে ৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করার অভিযোগে সেনা নিয়ন্ত্রিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলা করে করে দুদক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ এই মামলায় ১২ জন আসামি।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।