গয়েশ্বরের অন্য সুর

goyeshwar chandra roy

সংসদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ‘সঠিক’ বলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করলেও এনিয়ে ভিন্ন সুর দেখা গেল বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরামের অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কণ্ঠে।

দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েই তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে কি না, তা সময়েই বলে দেবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে সংসদে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল বিএনপি ও তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

কিন্তু শপথ নেওয়ার সময়সীমার শেষ দিন আকস্মিকভাবে বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা শপথ নেন। তখন দলটির মহাসচিব ফখরুল বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

এ নিয়ে বিএনপির নেতাদের মধ্যে মতদ্বন্দ্বের খবর গণমাধ্যমে আসার প্রেক্ষাপটে ফখরুল রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেন, সংসদে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না।

তার একদিন বাদে সোমবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর বলেন, “সময় বলে দেবে যে সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল কি ছিল না। এজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের দেখতে হবে পার্লামেন্টের সদস্যরা সংসদে কতটুকু এক্সারসাইজ করতে পারে, কতটুকু তাদেরকে স্কোপ দেওয়া হয় এবং সরকারি দল তাদেরকে (বিএনপি) কতটুকু সহ্য করতে পারে।”

নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সংখ্যক সদস্য নিয়ে এবার সংসদে গেল বিএনপি। আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিপরীতে খালেদা জিয়ার দলের সদস্য সংখ্যা ৬।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বছর কারাগারে যাওয়ার পর থেকে লন্ডনে থাকা তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ার‌ম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

দলের সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, “রং ডিসিশন ইজ বেটার দেন ইনডিসিশন। রাইট অর রং, সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিবেশ পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে এবং ব্যক্তিগত ও সাংসারিক জীবনেও প্রতি মুহুর্তে সিদ্ধান্ত সংশোধন বা পরিবর্তন হয়। প্রত্যেকে পরিবর্তনের পেছনে কোনো না কোনো যৌক্তিক কারণ থাকে।

“এনিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো তর্ক-বিতর্ক নাই, দলের একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পথ চলব, এটা হল মূল কথা।”

দলীয় নেত্রীর মুক্তির দাবি নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “কেউ কেউ আশা করছিলেন যে, এই সংসদে যাওয়ার সাথে খালেদা জিয়ার মুক্তি … হাসিনার কথার পরে বোঝেন নাই যে উনার মুক্তি আদালতের উপর নির্ভর করে না, উনার মুক্তি নির্ভর করে শেখ হাসিনার ইচ্ছার উপর।

“যদি আইনের উপর নির্ভর করে, সেটা আদালতই বলবে যে, খালেদা জিয়ার মুক্তি অথবা কারাগারে থাকা আদালত ও আইনের নির্ভর করে, এটা কোনো ব্যক্তি অথবা প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভর করে না।

“এটা তো আমি কথা দিয়ে প্রমাণ করতে পারব না। আমি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হব- এই আশঙ্কাটা ব্যক্ত করা নিশ্চয়ই আদালত অবমাননা না।”

সম্প্রতি লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া একটি বক্তব্য ধরে আদালতের স্বপ্রণোদিত আদেশ প্রত্যাশা করেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায়।

তিনি বলেন, “আমি মহামান্য আদালতের কাছে আশা করি, আপনারা আদালতে সুয়োমোটার মাধ্যমে উনাকে ডাকেন। এই ডাকাটা তো জাতির কাছে জরুরি। তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন- আমার কাজটা যদি আপনি করেন তাহলে আমার এই চেয়ারটা থাকার দরকার কী?

“আমার একটা কথা মনে এখন। একসময় এই প্রধানমন্ত্রীকে উচ্চ আদালত কোনো একটা মামলার রায়ের অবজারভেশন বলেছিল ‘রং হেডেড’। এটার অর্থ মারাত্মক।”

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবনের স্বাধীনতা হলে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন গয়েশ্বর।

সংগঠনের উপদেষ্টা সা্ঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, নাজিমউদ্দিন মাস্টার, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, শাহরিয়া ইসলাম শায়লা, ফরিদউদ্দিন, খলিলুর রহমান বক্তব্য রাখেন।