আর কতটা লাঞ্ছিত হলে ঘটনা বড় হবে: প্রশ্ন ছাত্রলীগ নেত্রীর

ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিক্ষুব্ধদের ওপর হামলাকে ‘অত্যন্ত সামান্য ঘটনা’ বলার সমালোচনা করে সংগঠনের এক নেত্রী প্রশ্ন করেছেন, নারী নেত্রীরা আর কতটা লাঞ্ছিত হলে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে তা বড় ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে।

সোমবার ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিত ও পদ নিয়ে অসন্তুষ্টরা মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে তাদের ওপর হামলা হয়। মারপিটে ছয় নারী নেত্রীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।

এ ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “এটা অত্যন্ত সামান্য ঘটনা। এটা নিয়ে আমার মনে হয় যে, খুব বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করার কিছু নেই।”

ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে ছাত্রলীগের কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধনে হানিফের ওই বক্তব্য নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ছাত্রলীগ নেত্রী নিপু ইসলাম তন্বী।

শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তন্বী সংগঠনের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক হয়েছেন। তবে এই পদ নিয়ে অসন্তুষ্ট এই নেত্রী প্রথম থেকেই কমিটির প্রতিবাদ করছেন।

মানববন্ধনে তন্বী বলেন, “ঘটনাটি কোন পর্যায়ে গেলে তারা এটাকে বিশাল আকারের ঘটনা বলবেন? আর কতটা লাঞ্ছিত হলে আমরা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে বিবৃতি পাব যে, ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন। তাহলে কি আমরা মারা যাওয়ার পর প্রকাশ হবে, এটা একটা বড় ঘটনা ছিল?”

এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটলে আর কোনো বাবা-মা সন্তানদের ছাত্রলীগ করতে পাঠাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মারপিটের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতৃত্ব তদন্ত কমিটি করার নামে তাদের সঙ্গে প্রহসন করেছে বলেও অভিযোগ করেন সংগঠনটির বিক্ষুব্ধ এই নেত্রী।

তিনি বলেন, “৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। আজ তার শেষ দিন। কিন্তু এখনও তারা আমাদের কারো সাথে কথাই বলেনি।”

‘জামাত-শিবির ছাত্রদল অনুপ্রবেশকারীদের কমিটি মানি না’, ‘আমাদের বোনদের উপর হামলা কেন বিচার চাই বিচার চাই’, ‘অবৈধ কমিটি মানি না’, ‘অছাত্রদের আদু ভাইদের কমিটি মানি না’, ‘ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কৃতদের কমিটি মানি না’, ‘বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগে অছাত্রদের স্থান নেই’, ‘চাকুরীজীবী ব্যবসায়ীদের কূটিল কমিটি মানি না’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায় মানববন্ধনকারীদের হাতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল হাসান শুভ বলেন, “অনেক ত্যাগী কর্র্মীদের বঞ্চিত করে নিজেদের অনুগতদের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। যারা শুরু থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেছে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। উল্টো এর প্রতিবাদ করলে আমাদের বোনদের উপর হামলা চালিয়েছে তারা। বিতর্কিত এই কমিটি মানি না। অবিলম্বে কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণার জোর দাবি জানাই।”

রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও নবগঠিত ছাত্রলীগের পূণার্ঙ্গ কমিটির উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক বি এম লিপি আক্তার বলেন, “যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের ২২ জনের আগে ছাত্রলীগের কোনো পদ ছিল না। অথচ তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ছোট পদ দেওয়া হয়েছে।

“আমরা পদ না পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। বরং কমিটিতে মাদক মামলার আসামি, বিবাহিত, অছাত্র, ছাত্রদল, রাজাকারের সন্তানদের পদ দেওয়া হয়েছে তার প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি।”