রাবিতে বেড়েছে সাপের উপদ্রব, আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে সাপের উপদ্রব বেড়েছে। সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসের বেশকিছু জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির বিষাক্ত সাপের দেখা মিলছে। এছাড়া গত কয়েকদিনে সন্ধ্যার পর আত্মরক্ষার্থে বেশকিছু বিষধর সাপ মারা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে সাপের ভয়ে আতঙ্কে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

খোজ নিয়ে জানা যায়- বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হল (পশ্চিমপাড়া), ছেলেদের হল, রাকসু ভবন, টিএসসিসি, স্টেডিয়াম, শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, বধ্যভূমি, স্টুয়ার্ট ভবন ও মাদার বখ্শ হলের পুকুরপাড় সংলগ্ল এলাকায় সাপের উপদ্রব বেশ। এছাড়াও বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের আশেপাশে এবং ভবনের ভিতরে সাপের বাসস্থান আছে বলে জানা গেছে। গত কয়েকদিনে এসব স্থান থেকে কিছু বিষধর সাপ মারা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও কর্মচারী সূত্রে জানা যায়, গত ১জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের সামনের পুকুরপাড় দিয়ে হলে যওয়ার পথে ফলিত গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে সাপে কাঁমড় দেয়। তাৎক্ষনিকভাবে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে নিয়ে গিয়ে আশঙ্কামুক্ত করা হয়। এছাড়া গত ২৮জুন রোকেয়া হল (পশ্চিম পাড়া) এর সামনে সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীরা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে বেশকিছু বিষধর সাপ মেরেছে বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রহরীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রত্যেক রাতেই বিষধর সাপ দেখতে পায়। অনেকসময় রাতে চলাফেরা করতে তাদের সমস্যা হয় বলে জানিয়েছেন। তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের দুই প্রহরী বলেন, প্রতি রাতেই ব্যাঙ ডাকার শব্দ শোনা যায়। তখন লাইট মারলে দেখা যায় সাপে ব্যাঙ ধরেছে। তাছাড়া এ ভবনের বেশিরভাগ জায়গা ছায়াযুক্ত ও স্যঁতসেঁতে হওয়ার কারণে এখানে সাপের উপদ্রব বেশি দেখা যায়। তাছাড়া কিছুদিন আগে ব্যাঙ খওয়ার সময় সাপের গায়ে লাইট মারলে আমাদের এক প্রহরীর দিকে সাপ ছুটে আসে বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের শিক্ষার্থী স্বরনালি আক্তার বেশিরভাগ সময় রাতে চলাফেরা করতে সমস্যায় পড়তে হয় এসব সাপ গুলো রাতের অন্ধকারে ঘুরে বেড়ায়। আর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় অন্ধকারচ্ছন্ন ও অপরিষ্কারচ্ছন্ন থাকার কারনে সাপের উপদ্রব বেশি বেড়ে গেছে। আশা করছি সাপের উপদ্রব কমাতে প্রশাসন খুব শিঘ্রীই একটা ব্যবস্থা নিবে।

রাবির সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষর্থী ও মাদার বখ্শ হলের আবাসিক ছাত্র মতিয়ার রহমান বলেন, প্রায় দিনই টিউশনি করিয়ে হলে ফিরতে আমার রাত হয়ে যায়। রাতে হলে ফেরার সময় হলের সামনে পুকুর পাড়ে প্রায় সাপ দেখতে পাই। তাই প্রতিদিনই সাপের আতঙ্কে থাকি।

এ বিষয়ে কথা বলেছেন রাবির জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু রেজা। যিনি সাপের বিষের প্রথম ডাটাবেজ তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, গত বছরে আমরা সাপ ধরার জন্য (পশ্চিমপাড়া) দিকে যারা সাপ ধরে তাদের নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু তেমন সাপ আমরা দেখতে পাইনি। তবে এখন যেহেতু সাপের উপদ্রব বেড়েছে সেখান থেকে বাঁচতে হলে আমাদের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান থেকে সাপ ধরে বিভিন্ন ধরনের ‘চরে’ রেখে আসতে হবে। দ্বিতীয়ত ক্যাম্পাসের অপরিষ্কারচ্ছন্ন স্যাঁতসেতে জায়গা গুলো পরিষ্কার করতে হবে। এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অন্ধকারচ্ছন্ন জায়গায় আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. লায়লা আরজুমান বানু বলেন, কিছুদিন ধরে শুনছি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সাপের উৎপাত বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে এই ক্যাম্পাসের সবার কাছে যা খুবই ভয়ের ব্যাপার। আমরা খুব দ্রুত প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটা সমাধানে ব্যবস্থা গস্খহণ করা হবে বলে জানার তিনি।