অর্থ কেলেঙ্কারী ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ এনে মণিরামপুরের রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ইউনুস আলমকে সাময়িক বহিস্কার করেছেন পরিচালনা পর্ষদ। কেন তাকে স্থায়ী বহিস্কার করা হবে না এই মর্মে অভিযোগ তদন্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফীকে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছেন কমিটি। ইউনুস আলমের পরিবর্তে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নওশের আলমকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে বহিস্কার আদেশ বেআইনী ও একতরফা এমন অভিযোগ এনে সভাপতি আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলম। একই দাবিতে প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে তিন অভিভাবক সদস্য যৌথভাবে স্কুলের পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। অভিভাবকদের মামলায় আব্দুল লতিফ যেন পুনরায় সভাপতির দায়িত্ব না পান সেই মর্মে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।
সাময়িক বহিস্কার আদেশ কেন অবৈধ নয়, কেন সে পুনরায় সভাপতি হতে পারবেন বা পারবেন না, দুই মামলায় আদালত সভাপতির কাছে সেই জবাব চেয়েছেন।
এদিকে, ইউনুস আলমের মত একজন অভিক্ষ প্রধান শিক্ষককে বহিস্কারের বিরুদ্ধে এবং তাকে স্কুলে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ২০ জুলাই ইউনুস আলমকে বহিস্কার করলেও তা চাপা রাখেন ম্যানেজিং কমিটি। শুক্রবার (২ আগস্ট) কমিটির মেয়াদ শেষ হলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
অভিযোগ রয়েছে, ছয় মাস আগে রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আবুল বাশারের মেয়াদ শেষের একদিন বাকি থাকতে নিয়োগ বোর্ড বসিয়ে ইমরান হোসেন ও নিছার আলী নামে দুই জন পিয়ন নিয়োগ দিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন আবুল বাশারসহ প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের আব্দুল খালেক নামে এক পিয়নের মাত্র দেড় মাস চাকরির মেয়াদ থাকতে তাকে জোর পূর্বক অবসরে যেতে বাধ্য করেন এই প্রধানসহ সাবেক সভাপতি আবুল বাসার। আব্দুল খালেকের পরিবর্তে ১৪ লাখ টাকা নিয়ে ইমরানকে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চত্বরে ৭৩ টি দোকান ঘর রয়েছে। ৫০ হাজার থেকে শুরু করে দেড় লাখ পর্যন্ত অগ্রিম টাকা নিয়ে দোকান ঘরগুলো ভাড়া দেওয়া হয়। দোকান প্রতি মাসে ভাড়া আসে ২০০-১০০০ টাকা। কিন্তু এই টাকার কোন সঠিক হিসাব প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলমের কাছে রক্ষিত নেই। স্কুলের মাঠের এক পাশে গত দশ বছর ধরে গরুর হাট বসছে। হাটের ইজারাদাররা প্রতি বছর ৫০-৬০ হাজার টাকা স্কুল কর্তৃপক্ষকে দিলেও সেই টাকার কোন হিসাব দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক।
এছাড়া বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগও রয়েছে এই প্রধানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, গত ২২ জুন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির অর্ধবার্ষিকী ও প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা বোর্ড প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হয়। স্কুলের গোপনীয় পিন কোর্ডের মাধ্যমে সেই প্রশ্ন সরবরাহ দেয় বোর্ড। পরীক্ষা শুরুর আগে প্রধান শিক্ষক নিজে উপস্থিত থেকে প্রশ্ন বের করে পরীক্ষা নেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা না করে স্কুলের পিনকোর্ড অন্য শিক্ষকের কাছে দিয়ে রাখেন প্রধান শিক্ষক। ফলে বিদ্যালয়ের যে ৫-৬ জন শিক্ষক প্রাইভেট পড়ান, তারা সেই পিনকোর্ড ব্যবহার করে আগে থেকেই প্রশ্ন বের করে শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেন। বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক ওইসব শিক্ষকদের কাছ থেকে মাশোয়ারা নেন। বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির নজরে আসলে কমিটি প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষিপ্ত হন।
বিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ বলেন, অর্থ কেলেঙ্কারী ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গত ২০ জুলাই প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলমকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো তদন্ত করে তাকে স্থায়ী বহিস্কারের জন্য ইউএনও’র বরাবর আবেদন দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ছয় মাস এডহক (সাময়িক) কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ।
তবে বহিস্কারের বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলম। তিনি বলেন, কোন রেজুলেশন ও শোকজ ছাড়াই মিথ্যে অভিযোগ তুলে আমাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। গত ২৯ জুলাই সভাপতিকে বিবাদী করে আমি আদালতে মামলা করেছি। আমার পক্ষে তিনজন অভিভাবক যৌথভাবে বাদি হয়ে গত ৩১ জুলাই কমিটির বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছেন।
তিনি বলেন, সাময়িক বহিস্কার হলেও আমার স্কুলে আসার অধিকার আছে। কিন্তু আমাকে স্কুলে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আজ (সোমবার) বিশেষ কাজে আমি স্কুলে এসেছি। খবর পেয়ে সদ্য বিদায়ী সভাপতি আব্দুল লতিফ আমাকে স্কুলে এসে শাসিয়ে গেছেন। যদিও তার মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন দিন আগে।
এই বিষয়ে ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফীর কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।