আগামী ১২ আগষ্ট ঈদুল আযহা। আর মাত্র ৬ দিন পরেই কুরবানি ঈদ। এই ঈদের অন্যতম কাজ হচ্ছে পশু কুরবানি করা। ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন যশোরের শার্শা উপজেলার কামার শিল্পের কারিগররা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়লার আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে সব ধারালো সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত কামারিরা। তবে এসব তৈরিতে এখনো আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি। পুরানো সেকালের নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়ে লোহা হতে ধারালো সামগ্রী তৈরির কাজ। তবে দ্রব্য মূল্যের দাম কিছুটা বেশি এবং ঈদের এখনও বেশ কিছুদিন বাকি থাকায় জমে উঠেনি দা, কাচি, হাসুয়া, কোপা, ছুরি চাপাতির বেচাকেনা।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম হচ্ছে ঈদুল আযহা। আর এই ঈদে মুসলিম ধর্মের অনুসারীরা আল্লাহকে রাজি খুশি করতে পশু জবাই করে থাকে। এই পশু জবাইয়ের জন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামাদি। মাংস কাটা এবং কুরবানির পশু জবাই করার বিভিন্ন ধাপে ছুরি, দা, চাপাতি এসব ব্যবহার করা হয়। ঈদের বাকি আরও বেশ কিছুদিন। তাই পশু কুরবানিকে কেন্দ্র করে কামার পল্লীগুলো অনেকটাই ব্যস্ত সময় পার করছে।
দগদগে আগুনে গরম লোহায় পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামার পল্লীগুলো। প্রস্তুত করছেন জবাই সামগ্রী। ঈদে শত শত গরু, খাসি, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি পশু কুরবানি করা হয়ে থাকে। এসব পশু জবাই থেকে শুরু করে রান্নার চূড়ান্ত প্রস্তুত পর্যন্ত দা-বঁটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার আবশ্যকীয় হয়ে যায়। ঈদের আগেই পশু জবাই করার ছুরি, চামড়া ছাড়ানোর ছুরি, চাপাতি, পস্টিক ম্যাট, চাটাই, গাছের গুঁড়িসহ সবকিছু প্রস্তুতি রাখতে হয়।
দেশি চাপাতিগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতি কেজি ওজনের চাপাতির দাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া বিদেশি চাপাতির দাম ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা জানান, সারাবছর বেচাকেনা কিছুটা কম থাকে। কোনোরকম দিন যায়। এই সময়ের জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। কুরবানির ঈদের আগে এক সপ্তাহ ভালো বেচাকেনা হয়। ওই সময় দামও ভালো পাওয়া যায়। লোহার তৈরি ছোট ছুরি ৬০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জবাই ছুরি মিলছে ৫০০-৬০০ টাকায়।
বিভিন্ন সাইজের চাপাতি ৬০০-৮০০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে। দা-বঁটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ টাকায়। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনো পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি। ঈদের গরুর বাজার এখনো ভালোভাবে শুরু না হওয়াকেই কারণ হিসেবে উলেখ করেন। আগে মানুষ গরু কিনবে পরে ছুরি-চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম কিনবে। তবে কবে থেকে পুরোদমে বেচা কেনা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়।
তবে এবছর অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বেচাকেনা ভালো হবে বলে আশা করেন তারা। ঈদের বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি। আরও পরে শুরু হবে। তবে আমরা এখন বানিয়ে রাখতেছি পরে শুধু বিক্রি করব। সারা বছর কাজ না থাকলেও কুরবানির ঈদের এ সময়টা বারবারই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের।
কামাররা জানায়, এ পেশায় অধিক শ্রম, জীবিকা নির্বাহে কষ্ট হলেও শুধু বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশাটিকে তারা এখনও আঁকড়ে ধরে আছেন। বিভিন্ন সময় এসবের চাহিদা কম থাকলেও কুরবানির পশুর জন্য বেশি প্রয়োজন হওয়ায় সকলেই এখন ছুটছেন কামারদের কাছে। আর এতেই এক মাসে পেশাটি জমজমাট হয়ে উঠেছে। কামাররা এই ঈদ মওসুম ছাড়া কাস্তে, হাঁসুয়া, পাসুন, বাঁশিলা, কুড়ালও তৈরি করে থাকেন।
কয়েকজন ক্রেতা জানান, কুরবানির ঈদের আরও বেশ কিছুদিন বাকি তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার কাজটি সেরে ফেলছেন। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, কাটারির দাম একটু বেশি বলে জানান তারা। লোহার পাশাপাশি স্টিলের ছুরি চাকুও বিক্রি হয় অনেকাংশে।