যশোরে ‘রিকভারী শেয়ারিং বিজয়ীদের গল্প’

মাদকের ছোবলে তছনছ হয়ে গিয়েছিল যশোর শহরের রবীন্দ্রনাথ সড়কের রাজুর সংসার। প্রায় ২৫ বছর ধরে নেশায় আসক্ত হয়ে সব স্বপ্নের মৃত্যু ঘটিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ এ সময়ে স্ত্রী ও সন্তানদের কাছ থেকে শুধু দূরেই ছিলেন না; ঈদ আনন্দও উপভোগ করতে পারেননি। ‘সন্তানদের সাথে জীবনে ঈদ করা হয়নি, এবার ঈদুল আযহায় জীবনে প্রথম সন্তানদের সাথে ঈদ উদযাপন করেছি।’ এ কথা বলতে গিয়ে কেঁদে বুক ভাসালেন মধ্য বয়সী রাজু।

রোববার যশোরের আহ্ছানিয়া মিশনের মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (আমিক) ‘রিকভারী শেয়ারিং বিজয়ীদের গল্প’ বলতে গিয়ে কাঁদলেন তিনি। ৬ মাসের চিকিৎসা শেষে রোববার দুপুরে তিনি কেঁদে বললেন, আমি আর নেশা করবো না। আমার স্ত্রী-সন্তানদের যে সুখ কেড়ে নিয়েছিলাম, তা ফিরিয়ে দেব। একই কথা বলেছেন যশোরের চাঁচড়ার বাসিন্দা টুটুল।

তিনি বলেন, নেশা একটি অভিশাপ। আমার বাচ্চার বয়স ৪ মাস। তার দিকে তাকিয়ে, তার সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জীবনে আর কোনদিন মাদক স্পর্শ করবো না। আর নড়াইলের আল মাসুদ উজ্জ্বল বলেন, ২০০১ সালে তিনি নেশার জগতে ঢুকে পড়ার পর তার পরিবারে সুখ-শান্তি বলে কিছু ছিল না। চিকিৎসায় এখন সুস্থ। এখন বুঝতে পারছি সুন্দর পৃথিবীটা কীভাবে নেশা ধ্বংস করে দেয়।

শুধু উজ্জ্বল, রাজু কিংবা টুটুল নয়, আমিক যশোরে চিকিৎসাধীন থাকা শতাধিক ব্যক্তিই এমন প্রত্যয় নিয়ে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন বুনছেন। ঘৃণা করছেন মাদককে। শুধু ঘৃণাই নয়; মাদকের বিরুদ্ধে তারাই এখন সোচ্চার। রোববার রিকভারী মাস সেপ্টেম্বর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাদকের বিরুদ্ধে তারা লড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

যশোরের আহ্ছানিয়া মিশনের মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের ম্যানেজার আমিরুজ্জামান বলেন, মাদক রিকভারীরা মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে একটা বড় সাড়া পড়ে। এজন্য সেন্টারের চিকিৎসাধীনদের উপস্থিতিতে রিকভারী মাস সেপ্টেম্বর উদযাপন উপলক্ষে রিকভারী শেয়ারি বিজয়ীদের গল্প বলার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক মো. বাহাউদ্দিন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আলোকিত বাংলাদেশের যশোর প্রতিনিধি তবিবর রহমান। আমিক যশোরের সেন্টার ম্যানেজার আমিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রের কাউন্সিলর আবু হাসান মন্ডল ও আবদুর রহমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আমিক যশোরের প্রোগ্রামার আরিফুল ইসলাম।