নওয়াপাড়ায় সরকার গ্রুপের চেয়ারম্যান আলমগীর সরকারের সদ্য নির্মিত পিচ গার্ডেন নামক ৭ তলা ভবনের নীচতলার পানির রিজার্ভ ট্যাংকি থেকে উদ্ধার হওয়া রং মিস্ত্রী ঠিকাদার হাবিব হত্যার রহস্য উম্মোচন হয়েছে। রং মিস্ত্রীর ঠিকাদার হাবিবের সহযোগি মামুনই হাবিবের ঘাতক বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। মামুনকে আটকের পর তার স্বীকারোক্তিতেই হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচিত হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
২৬ অক্টোবর শনিবার যশোর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশ এই তথ্য জানায়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খ সার্কেল জামাল আল নাসের, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেডকোয়াটার অপু সরোয়ার, ডিবির ওসি মারুফ আহমেদ প্রমুখ।
অধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২৫ অক্টোবর শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টায় ঢাকার আশুলিয়ায় ফুফুর বাড়ি থেকে মামুনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। মামুনকে আটকের পর তার কাছ থেকে নিহত হাবিবের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও এর আগে রক্ত মাখা জামা কাপড় এবং হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয় বলে জানান ডিবি ওসি মারুফ আহমেদ।
মামুনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশের ভাষ্য মামুন দীর্ঘদিন যাবৎ হাবিব খানের সাথে রং মিস্ত্রীর কাজ করতো। দুজনে এক সাথে নির্মানাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকতো। কাজের মজুরি বাবদ মামুনের হাবিবের কাছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা পাওনা ছিল। গত ১৩ অক্টোবর মামুনের মোবাইল ভেঙ্গে গেলে নতুন মোবাইল কেনার জন্য হাবিবের কাছে পাওনা টাকা চাই। হাবিব মামুনকে বলে ৫শ টাকার বেশি দিতে পারবো না। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। হাবিব মামুনকে বটি দিয়ে কোপাতে যায়। তখন মামুন ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিবকে খুন করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ১৪ অক্টোবর সকাল ১১ টার দিকে নওয়াপাড়া বাজারের একটি ঔষধের দোকান ইউনিক মেডিকেল থেকে রিভো-০৫ নামের একপাতা ঘুমের ওষুধ কেনে এবং চায়ের দোকানীর কাছে রাখা একটি চাকু নেয়।
মামুনের ভাষ্য অনুযায়ী পুলিশ আরও জানায়, ওই দিন রাত ১০ টার দিকে মামুন ও হাবিব নিজের জন্য আলু ভর্তা দিয়ে ভাত রান্না করে। এসময় সে নিজের আলু ভর্তা আলাদা রেখে হাবিবের আলু ভর্তার সাথে একপাতা ঘুমের ওষুধ গুড়ো করে মিশিয়ে দেয়। রাতে খাবার খেয়ে হাবিব ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ে। ১৫ অক্টোবর রাত দেড়টার দিকে মামুন কাছে থাকা চাকু দিয়ে হাবিবকে জবাই করে। পরে হাত বেঁধে লাশ সিঁড়ি দিয়ে টেনে হেঁচড়ে নিচতলায় নিয়ে আসে। এরপর রিজার্ভ ট্যাংকির ঢাকনা খুলে পায়ে ইট বেঁধে ট্যাংকের মধ্যে ফেলে দিয়ে ঢাকনা আটকে দেয়। লাশ ফেলার পর মামুন দোতলার ওই কক্ষে গিয়ে মেঝের রক্ত ও সিড়ির রক্ত মুছে রক্তমাখা জামাকাপড় ফলস সিলিংয়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছুরিটা বাথরুমের প্যানের মধ্যে ফেলে দেয়। তারপর গোসল করে ভোর চারটার দিকে পেছনের গেট দিয়ে পালিয়ে যায় মামুন। ঘটনার পর ১৬ অক্টোবর মামুন হাবিবের স্ত্রীর কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা নেয়। এরপর সে চুড়ামনকাঠি খালা বাড়ি যায়। পরে নড়াইলের লোহাগড়ায় দাদা বাড়ি একদিন থাকে। সেখান থেকে ঢাকার আশুলিয়ায় ফুফুর বাড়িতে যায়।