বাদলের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সংসদ সদস্য মাঈনউদ্দীন খান বাদল মারা গেছেন। ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইন্সটিটিউট অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, নেতাকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সর্বশেষ চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও জাসদ একাংশের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ।

চট্টগ্রাম ৮ (চাঁদগাও-বোয়ালখালী) আসনের তিনবারের সাংসদ বাদল বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

মাঈনউদ্দীন খান বাদল সবার কাছে একজন সুবক্তা হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও জাতীয় ইস্যুতে তার সময়োপযোগী বক্তৃতার প্রশংসা করেছেন অনেকে।

বাদল সারা জীবন বাম রাজনীতি করেছেন। তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা রেখেছেন। বাদল তিন তিনবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

বাদলের জন্ম ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা আহমদ উল্লাহ খান ও মা যতুমা খাতুন।

ষাটের দশকে ছাত্রলীগের ‘নিউক্লিয়াসে’ যুক্ত বাদল একাত্তরে ভারতে প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের পর সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন বাদল। জাসদ হয়ে বাসদ এবং পরে আবারো জাসদে ফেরেন। এরশাদের সামরিক শাসনের সময় তাকে কারাগারে যেতে হয়।

২০১৬ সালের ১২ মার্চ জাসদের জাতীয় কাউন্সিলে আবার দুই ভাগ হয় দলটি। হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আখতার নেতৃত্বাধীন অংশটি ইসির স্বীকৃতি পাওয়ার পর শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান নেতৃত্বাধীন অংশটি বাংলাদেশ জাসদ নামে আলাদা দলের স্বীকৃতি চায়। তবে ইসি তাদের নিবন্ধন দেয়নি। এই অংশের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মাইনউদ্দীন খান বাদল।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসন থেকে ২০০৮ সালে মহাজোটের মনোনয়ন পান শরিক দল জাসদের নেতা বাদল। নৌকা প্রতীকে তার বড় জয়ের মধ্য দিয়ে ওই আসনে বিএনপির দীর্ঘদিনের আধিপত্যের অবসান ঘটে।

এরপর ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আরও দুই বার তিনি আসনের এমপি নির্বাচিত হয়ে সংসদে যান। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে দৃপ্ত বক্তব্য দেওয়া বাদল সমাদৃত ছিলেন একজন দক্ষ পার্লামেন্টেরিয়ান হিসেবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

স্পষ্টভাষী হিসেবে পরিচিত বাদল সংসদ ও সংসদের বাইরে নানা বক্তব্য দিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচিত হন। চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীতে সেতু নির্মাণের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন তিনি। বারবার সেতুটি নির্মাণের দাবি জানিয়েও সাড়া না পাওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঘোষণা দেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার কালুরঘাট সেতু নির্মাণে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের ঘোষণা আসে। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই চিরবিদায় নিলেন বাদল।