কথোপকথনটির খণ্ডিতাংশ বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে: ভিপি নূর

nurul haque nur
ফাইল ছবি

একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার হওয়া কথোপকথন নিয়ে বিপাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর। কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের জেরে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এই দাবিতে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধনও করেছে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের একাংশ। ভিপি নুরের কক্ষে তালাও দেয়া হয়েছে।

এই কথোপকথনের বিষয়ে মুখ খুলেছেন ভিপি নুর। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ডাকসুর এই ভিপি দাবি করেন, কথোপকথনটির খণ্ডিতাংশ বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে। তথ্য-বিকৃত করে ভুল সংবাদ পরিবেশেন করায় তিনটি সংবাদমাধ্যমকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

ওই অডিওতে ডাকসু ভিপিকে জনৈক এক ব্যক্তির সঙ্গে ব্যবসায়িক কথাবার্তা বলতে শোনা গেছে। এ ছাড়া প্রবাসে এক বাংলাদেশির সঙ্গে টেলিফোনে টাকা লেনদেনের বিষয়ে কথা বলতে শোনা গেছে তাকে।

অডিওতে আরও বলতে শোনা গেছে, ওই ব্যক্তি ভিপি নুরকে ইমেইল অ্যাড্রেসসহ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠাতে বলেছেন।

এ বিষয়ে ভিপি নুর বলেন, ৩ ডিসেম্বর নিউজ টুয়েন্টিফোর ও ডিবিসি চ্যানেলে আমার কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপের খণ্ডিতাংশ বিকৃতভাবে প্রচার করে ভুলভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, যা আমার সম্মানহানি ও জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। অডিওটির প্রথম অংশের কথোপকথন ছিল আমার খালা ও আমার পরিচিত এক ভাইয়ের সঙ্গে। যেখানে আমার খালার কনস্ট্রাকশন ফার্মের ১৩ কোটি টাকার একটি কাজের ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে ভাইয়ের (জনৈক ব্যক্তি) সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম, যা একান্তই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসাসংক্রান্ত বিষয়।

কিন্তু নিউজ টুয়েন্টিফোর ও ডিবিসি চ্যানেলে কথোপকথনটির বিভিন্ন খণ্ডিতাংশ বিকৃতভাবে প্রচার করে এবং আমি জনৈক প্রকল্প কর্মকর্তার কাছে ১৩ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজের তদবির করি, এই মর্মে খবর প্রচার করে। একইভাবে বাংলাদেশ প্রতিদিন অনলাইনেও একই সংবাদ প্রকাশ করে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে– সেখানে আমি কোনো প্রকল্প কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো কথা বলা কিংবা কোনো তদবির করিনি।

তিনি বলেন, অডিও ক্লিপটির ২য় অংশে অন্য ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথন নিয়ে নিউজ টুয়েন্টিফোর ও ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনে’ বলা হয়েছে, আমি প্রবাসী কোনো এক ব্যক্তির কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছি এবং ডিবিসি চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে- টেক্সাস প্রবাসী বিএনপি নেতার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছি।

কিন্তু প্রকৃত ঘটনাটি ছিল, জনৈক প্রবাসী ব্যক্তি ফোন করে আমাকে সহযোগিতার কথা বললেও আমি তা নাকচ করে দিই। পুরো ফোনালাপটি শুনলেই আমার কথার সত্যতা পাওয়া যাবে। কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয়– ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করার ক্ষেত্রে ঘটনার সত্যতা যাচাই না করে, আমার কোনো বক্তব্য না নিয়ে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করা এবং ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ইমেজ ক্ষুণ্ন করার জন্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তথ্য বিকৃত করে এমন সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে।

নুরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করে গণমাধ্যমে প্রচার সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় আইনবিরোধী। তা ছাড়া এভাবে তথ্য বিকৃত করে সংবাদ পরিবেশন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্পষ্ট অপরাধ। তাই তথ্য-বিকৃত করে ভুল সংবাদ পরিবেশন করায় নিউজ টুয়েন্টিফোর, ডিবিসি ও বাংলাদেশ প্রতিদিন কর্তৃপক্ষকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল গণমাধ্যম হিসেবে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে খবর প্রচার ও প্রকাশের আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে এই তিনটি গণমাধ্যম বর্জনসহ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহ্স্পতিবার ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি সংগঠন আমার পদত্যাগ দাবি করে, কক্ষে তালা লাগায়, যার আহ্বায়ক আওয়ামীপন্থী নীল দলের বিতর্কিত শিক্ষক নেতা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান জয়ও একই দাবি করেন। ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে আমি মনে করি যে, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমাকে ও আমার সংগঠন তারুণ্যের স্পন্দন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’কে বিতর্কিত করে তুলে ধরতেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এমন হীন চক্রান্তের আয়োজন করা হয়েছে।