মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ কি অত্যাসন্ন?

ক্ষোভে ফুঁসছে ইরান, মার্কিনিদের বাগদাদ ছাড়ার নির্দেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ, বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরা

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধের দামামা। কুদ্‌স ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর ক্ষোভে ফুঁসছে ইরান। যেকোনোভাবে এ হামলার প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছে তারা। যেকোনো সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে যেতে পারে যুদ্ধ। বাগদাদ ছেড়ে যেতে নিজ দেশের নাগরিকদের নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরা। নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরাঁ সবাইকে সাবধান করে বলেছেন, বিশ্ব আরেকটি যুদ্ধ বহন করার সামর্থ্য রাখে না।

আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সোলাইমানিকে হত্যার আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতিসংঘের নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশপথে হামলায় ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোর কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলায়মানি, ইরাকের আধাসামরিক বাহিনীর কমান্ডার আবু মাহদি আল মুহানদিস সহ মোট ৬ জন নিহত হন।

গতকাল ইরাকের রাজধানী বাগদাদে তাদের মৃতদেহ নিয়ে লাখো মানুষ শোকর‌্যালি করেন। এ সময় তাদের পরনে ছিল কালো পোশাক। তারা তুলে ধরেছিলেন আধা-সামরিক বাহিনী হাশেদ আল শাবি’র পতাকা। বাগদাদের কাদিমিয়ায় শিয়া সমাধির কাছে তাদের প্রতি প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এতে উপস্থিত হয়েছিলেন হাশেদ আল শাবি’র সদস্য ৩৪ বছর বয়সী আমজাদ হ্যামোড। তিনি বলেছেন, সোলাইমানি ও মুহানদিসের মতো সাহসী যোদ্ধাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে আমি এখানে সমবেত হয়েছি। তারা দু’জনেই তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন শিয়াদের জগৎ ও ইরাকের পরিণতির জন্য।

মোতায়েন হচ্ছে ৩০০০ অতিরিক্ত মার্কিন সেনা
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে হিম আতঙ্ক। সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাকে অশান্তি, গৃহযুদ্ধ। লেবাননেও পরিস্থিতি ভালো নয়। ফিলিস্তিনিরা তো নির্যাতিত হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে। ইরান-ইরাক প্রায় ৯ বছর যুদ্ধ করে অবশেষে ক্ষান্তি দিয়েছে। কাতারকে একপেশে করে রাখা হয়েছে। এমন এক অস্থির পরিবেশে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য যুদ্ধ নিয়ে চারদিকে বিরাজমান আতঙ্ক। একের পর এক ঘটনাপ্রবাহ দুটি দেশকে শেষ পর্যন্ত যেন সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে। কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার মধ্যদিয়ে যেন অনানুষ্ঠানিকভাবে সেই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এ হত্যার ভয়াবহ বদলা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। জাতিসংঘকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে আত্মরক্ষার অধিকার আছে ইরানের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে যুদ্ধ থামাতে। যুদ্ধ শুরু করতে তাকে হত্যা করা হয় নি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
শুক্রবার বাগদাদ বিমানবন্দরে হামলায় সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর ট্রাম্প বলেছেন, সন্ত্রাসের রাজত্ব শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ইরান কি শুধু হুমকি দিয়ে, ভয় দেখিয়েই নিবৃত্ত থাকবে! মনে হয় না। কারণ, এ হত্যার জন্য যে বা যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধের প্রত্যয় ঘোষণা করেছে ইরান। এমনিতেই ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজমান। তার মধ্যে কুদস ফোর্সের প্রধানকে হত্যায় সেই উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। ইরান প্রতিশোধ নিতে হয়তো হামলা বা যুদ্ধ শুরু করতে পারে। তাই পূর্ব সতর্কতা হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তি ৩০০০ সেনা মোতায়েন করবে যুক্তরাষ্ট্র।

ওদিকে ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলেছে, কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার বিমান হামলা হয়েছে। এই হামলার বিষয়ে ওয়াশিংটন থেকে কিছু বলা হয় নি। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ইরাকের একটি সেনা সূত্র বলেছেন, এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬ জন। স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে ইরাকি মিলিশিয়াদের একটি বহরে ওই হামলা চালানো হয়।
ওদিকে শুক্রবারের হামলায় সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর ফ্লোরিডায় অবকাশ যাপন কেন্দ্র মার এ লাগোতে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী একটি ত্রুটিহীন হামলা চালিয়েছে। তাতে সারা বিশ্বের এক নম্বর ‘ওয়ানটেড’ কাসেম সোলাইমানি নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও সামরিক ব্যক্তিত্বদের ওপর অবিলম্বে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু তার মাঝেই আমরা তার টুঁটি চেপে ধরেছি এবং তাকে শেষ করে দিয়েছি।

ওদিকে সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর কড়া ভাষায় বিবৃতি দিয়েছেন ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, আল্লাহর ডাকে তিনি (সোলাইমানি) চলে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে, তার পথ অথবা তার মিশন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু অপরাধীদের জন্য অপেক্ষা করছে এক শক্তিশালী প্রতিশোধ। এই প্রতিশোধ তাদের বিরুদ্ধে যাদের হাতে লেগে আছে তার ও অন্য শহীদদের রক্ত। ওদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি চিঠি লিখেছেন ইরানের রাষ্ট্রদূত মাহিদ তাখত রাভানছি। তাতে তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে আত্মরক্ষার অধিকার আছে তেহরানের।
‘প্রতিশোধ হবে ভয়াবহ’

মার্কিন নাগরিকদের বাগদাদ ছাড়ার নির্দেশ
ইরানের নিহত কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ও অন্যদের মৃতদেহ নিয়ে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে শনিবার শোকর‌্যালি হয়। এমন অবস্থায় ওই শহর ছাড়তে নিজ দেশের নাগরিকদের নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মাজিদ তাখত রাভানছি কড়া ভাষায় শনিবার জানিয়ে দিয়েছেন, জবাব না দিয়ে সোলাইমানি হত্যার বিষয় ছেড়ে দেয়া হবে না। তিনি বলেছেন, এর প্রতিশোধ হবে ভয়াবহ। কোথায়, কীভাবে, কখন এই প্রতিশোধ নেয়া হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে ইরান। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের অনলাইন গার্ডিয়ান।
বাগদাদে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ইরাজ মাসজেদি ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়াকে বলেছেন, শনিবার শোকর‌্যালি হবে নিহত সোলাইমান, আবু মাহদি আল মাহানদিস ও অন্যদের মৃতদেহ নিয়ে। জনশোকর‌্যালিতে উপস্থিত থাকতে চেয়েছেন ইরাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি। পবিত্র শহর কারবালা ও নাজাফ থেকে শুরু হওয়ার কথা এই শোকর‌্যালি। এরপর সোলাইমানির মৃতদেহ রোববার সকালে তুলে দেয়ার কথা রয়েছে ইরানের হাতে। সেখানে রাজধানী তেহরানে সোলাইমানির নামাজে জানাজা পড়াবেন ইরানের সুপ্রিম নেতা আলী খামেনি। তারপর তাকে দাফন করা হবে নিজের শহর কেরমানে।

সোলাইমানি হত্যায় বিভক্ত মার্কিন রাজনীতিকরা
ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোরের জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যাকাণ্ডে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরাই বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তারা কেউ প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। অন্যরা এর কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। ট্রাম্পের পক্ষ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যালঘু নেতা, রিপাবলিকান লিন্ডসে গ্রাহাম, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্রেট দল থেকে প্রার্থী জো বাইডেন, সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর প্রমুখ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইউরো নিউজ।

এতে বলা হয়, শুক্রবার সোলাইমানিকে হত্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যুদ্ধ শুরু করতে নয়, যুদ্ধ থামাতে ইরানের ওই জেনারেলকে হত্যা করিয়েছেন। এ জন্য যেকোনো জবাব দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানে শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন করাতে চায় না। ট্রাম্পের ভাষায়, অবিলম্বে বড় ধরনের হামলা পরিকল্পনা করছিলেন সোলাইমানি। কিন্তু তার সেই পরিকল্পনার ভেতরেই তাকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। তিনি অনেক বেশি মার্কিনিকে হত্যা করতে চাইছিলেন। ইরান কখনো স্বীকার করবে না, তবু এর ভেতরে তাকে ঘৃণা করতো এবং ভয় পেতো বিপুল সংখ্যক মানুষ। মাইক পম্পেও-ও বলেছেন, অত্যাসন্ন হামলা পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দিতে সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে। জন বল্টন এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কিন্তু এমন হত্যাকাণ্ডে তীব্র বিরোধিতা করেছেন ডেমোক্রেট শিবির থেকে বাঘা বাঘা নেতারা। ডেমোক্রেট জো বাইডেন একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ও হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত করেছেন সোলাইমানি। তাই তার বিচার হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বড় রকমের যুদ্ধের ঝুঁকি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানের হামলা কমার বদলে, অবশ্যই উৎসাহিত করবে। ট্রাম্প আসলে বারুদভর্তি বাক্সে ডিনামাইট ছুড়ে মেরেছেন। সোলাইমানিকে কয়েক শ’ মার্কিনি সহ হাজার হাজার মানুষ হত্যার জন্য দায়ী করেন এলিজাবেথ ওয়ারেন। তবে তিনি ইরানের সঙ্গে সম্পর্ককে উত্তেজনাকর অবস্থা নিয়ে যাওয়াকে ট্রাম্পের বেপরোয়া সিদ্ধান্ত বলে অভিযোগ করেছেন। এর ফলে আরো অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটবে। নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বা সংঘাত সৃষ্টি হবে।

কংগ্রেসের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তিনি ২০১৯ সালের জুনে বলেছিলেন, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে কোনোই পদক্ষেপ নেয়া যাবে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে ইরানের সঙ্গে সংঘাতকে ব্যবহার করছেন কিনা ট্রাম্প এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর।
বাইডেন, ওয়ারেনের নিন্দা

বারুদের বাক্সে ডিনামাইট ছুড়েছেন ট্রাম্প
বিমান হামলায় ইরানের সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে শক্তিধর প্রার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন। সোলাইমানিকে হত্যা প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের একটি বেপরোয়া সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন জো বাইডেন। বলেছেন, এর মধ্যদিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
জো বাইডেন বলেছেন, একটি বারুদের বাক্সে ডিনামাইট ছুড়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরই মধ্যে অনলাইনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে জো বাইডেনের ৩০ সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছে। তাতে বাইডেনকে দেখানো হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লক্ষ্যভ্রষ্ট, অস্থির প্রেসিডেন্সির বিরুদ্ধে বিশ্বে একজন পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে।

ওদিকে নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে আরেক সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে আমরা। দুর্ঘটনাবশত আমরা এই অবস্থায় এসে পৌঁছিনি। আমরা এখানে এই অবস্থায় এসেছি একজন বেপরোয়া প্রেসিডেন্ট, তার মিত্র ও তার প্রশাসনের কারণে। তারাই বিগত কয়েকটি বছর আমাদেরকে ঠেলে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছেন।
কাসেম সোলাইমানি ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শক্তিশালী ব্যক্তি। শুক্রবার তাকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যদিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মধ্যে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে চরম আকার ধারণ করেছে। এ ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনী বছরে প্রবেশ করেছে। এ বছরই নভেম্বরে সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা। ফলে এই সংঘাতময় অবস্থা সেখানকার নির্বাচনের গতিবিধি পাল্টে দিতে পারে। এখন পর্যন্ত এ নির্বাচনে দেশের ভেতরকার অনেক ইস্যু প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, রাজনীতিতে অর্থ। এসব ইস্যুর সঙ্গে যোগ হবে ইরানের সঙ্গে এই উত্তেজনাকর ইস্যু। আর এটা জো বাইডেনের মতো ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট হবে, যার রয়েছে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অভিজ্ঞতা। জো বাইডেন, এলিজাবেথ ওয়ারেন, সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এবং ইন্ডিয়ানা রাজ্যের সাউথ বেন্ডের সাবেক মেয়র পিটি বুটিগিগের দিকে ইশারা করে ডেমোক্রেটিক স্ট্রাটেজিস্ট স্টিভ এলমেন্ডোর্ফ বলেছেন, ইরানের সঙ্গে এই উত্তেজনায় মূলত সুবিধা পাবেন ডেমোক্রেটিক দলের সামনে থাকা চারজন প্রার্থী।

ইরানের সঙ্গে ‘অপ্রয়োজনীয়’ যুদ্ধ থামানোর আহ্বান মার্কিন সিনেটরের
ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে বিমান হামলায় হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্র এ দেশটির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে বলে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর টিম কেইন। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ থামাতে তিনি একটি প্রস্তাব এনেছেন। এর মধ্যদিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর জন্য প্রেসিডেন্টের যে ক্ষমতা আছে সে বিষয়টিতে সুরাহা করার জন্য তিনি কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। এই প্রস্তাবটি বিতর্কে তোলা হবে কংগ্রেসে। এরপর তার ওপর ভোট হবে। ভোট হবে ট্রাম্পকে ইরানের সঙ্গে আরো শত্রুতা সৃষ্টি থেকে প্রতিরোধ করা নিয়ে।

এ খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন সিবিএস ১৯ নিউজ। এতে বলা হয়, সিনেট ফরেন রিলেশন্স এবং আর্মড সার্ভিসেস কমিটিজের একজন সদস্য টিম কেইন। তিনি বলেছেন, কয়েক বছর ধরে আমি খুব গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে একটি যুদ্ধের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এখন আমরা এ অবস্থার ‘স্ফুটনাঙ্কে’ রয়েছি। ক্ষতিকর পথে আমাদের আরো সেনাকে ট্রাম্প ঠেলে দেয়ার আগেই এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে কংগ্রেসকে। আমি আহ্বান জানাই আমাদের সার্ভিস সদস্যদেরকে এ বিষয়ে একটি বিতর্কের এবং এর ওপর ভোটের জন্য। সেই ভোট হবে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে জড়িত হওয়াটা কি আমাদের জাতীয় স্বার্থে নাকি অন্য কিছু। তার এ প্রস্তাবের কো-স্পন্সর হলেন ইলিনয় থেকে নির্বাচিত সিনেটর ডিক ডারবিন।

টিম কেইন নির্বাচিত হয়েছেন ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে। তিনি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, পরমাণু সমঝোতা নামের একটি কার্যকর কূটনৈতিক চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে আসা এবং ইরানের সঙ্গে আবার সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার কারণে আমরা মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। তিনি আরো লিখেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করার পাশাপাশি আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে এবং শত্রুদেরকে জোট পাকানোর সুযোগ করে দিয়েছে। মার্কিন এই সিনেটর বলেন, ট্রাম্প যাতে আমেরিকাকে আরেকটি অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে না পারেন সেজন্য কংগ্রেসকে আইন পাস করতে হবে। সামপ্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন সিনেটর ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য বক্তব্য রেখেছেন।

টিম কেইনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধের ক্ষমতা বিষয়ক প্রস্তাব বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন। এর অর্থ হলো তার এ প্রস্তাবে ভোট দিতে বাধ্য হবে সিনেট। এতে আরো জোরালোভাবে বলা হয়েছে, যুদ্ধ ঘোষণার একক ক্ষমতা আছে কংগ্রেসের। ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা শত্রুতাপূর্ণ অবস্থান নিতে অবশ্যই যুদ্ধ ঘোষণার অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ অনুমতি নিতে হবে সেনাবাহিনীকে ব্যবহারে। এটি আসন্ন হামলা থেকে নিজের আত্মরক্ষায় দেশকে বাধা দেয় না। এমন ক্ষমতা মার্কিন সংবিধানে বিশেষভাবে বলা আছে। এর অর্থ হলো, কোনো শত্রুতায় সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কংগ্রেসকে। উল্লেখ্য, কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া সামরিক বাহিনীকে ব্যবহারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কণ্ঠ উচ্চকিত তার মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় হলেন টিম কেইন।