মণিরামপুরে লটারির মাধ্যমে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক

যশোরের মণিরামপুরের সুবলকাঠি গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক প্রাণকৃষ্ণ (৮৬)। ধান চাষ করেন বহুআগ থেকে। এবারও চার বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। নিজের নামে বরাদ্দের এক মেট্রিকটন ধান বিক্রি করতে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) উপজেলা খাদ্যগুদামে এসেছেন তিনি। এইবারই প্রথম সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পেরেছেন তিনি। আর সেটাও সম্ভব হয়েছে সরাসরি লটারির মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের কারণে। বেশিদামে ধান বেচতে পেরে খুশি এই বৃদ্ধ।
সরেজমিন কথা হয় প্রাণকৃষ্ণর সাথে। হাস্যজ্জ্বলমুখে তিনি বলেন, এবার ধান করতি যাইয়ে খরচ হইছে মেলা। বাজারে ধানের দাম পানির দরে। মাত্র ৬০০ টাকা মণ। ধান নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। লোকমুখে জানতি পারি আমার নামে একটন ধান বরাদ্দ হইছে। পরে অফিসে আইসে খোঁজ নিয়ে দেখি ঘটনা সত্যি। আজকে (১৩ জানুয়ারি) সেই ধান বেচতি আইছি। একহাজার ৪০ টাকা কইরে ২৫মণ ধান বেচলাম।
প্রাণকৃষ্ণ বলেন, ধানতো করি অনেকদিন থেকে। আগে কোনদিন সরকারের কাছে ধান বেচতি পারিনি। এবার ধান বেচতি পাইরে আমি খুশি।

প্রাণকৃষ্ণর মত সোমবার মণিরামপুর খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে এসেছেন, ঢাকুরিয়া গ্রামের নাজমুল হোসেন (১ মে.টন), রোহিতা গ্রামের মতিয়ার (১ মে.টন), রবিউল ইসলাম (১ মে.টন), বিল্লাল হোসেন (১ মে.টন), খেদাপাড়া গ্রামের কানাইলাল (১.৫ মে.টন), ওই গ্রামের সুবল পাল (১.৫ মে.টন) সহ অনেকে। এরা সবাই উচ্চ দামে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি।
এদেরমধ্যে কানাইলাল ও সুবল পাল রোববার (১২ জানুয়ারি) গুদামে ধান দিয়েছেন। আজ তারা ধান বিক্রির চেক হাতে পেয়েছে বলে জানিয়েছেন।
এইবারই প্রথম মণিরামপুরে লটারির মাধ্যমে এক হাজার ৪০টাকা মণ দরে দুই হাজার ৫৩১ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করছে সরকার। সেইলক্ষে ৪৫ হাজার কৃষকের তালিকা সংগ্রহ করে কৃষি অফিস। পরে লটারির মাধ্যমে দুই হাজার ১৫০ জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়। ১২ ডিসেম্বর ক্রয় কাজের উদ্বোধন করেন পৌর মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান। ২২ ডিসেম্বর থেকে পুরোদমে ক্রয় কাজ শুরু হয়। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই সংগ্রহ কাজ।


তবে, ধান ক্রয়ের শুরুতে হুঁচট খায় গুদাম কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায়, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি কৃষকদের অজানা থাকায় এবং তালিকায় স্থান পাওয়া অধিকাংশ কৃষকের গোলায় ধান না থাকায় কৃষকরা গুদামমুখি হননি। এরপরপরই গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে গুদামে ধান আনতে কৃষকদের আহবান করে গুদাম কর্তৃপক্ষ। পরে আবহাওয়া কিছুটা অনুকুলে পেয়েই কৃষকরা গুদামে ভিড় করতে থাকেন। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৬৮ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ হয়েছে বলে জানান গুদাম রক্ষক মনিরুজ্জামান মুন্না।
মনিরুজ্জামান মুন্না বলেন, কয়েকদিন আবহাওয়া ভাল না থাকায় কৃষকরা গুদামে ধান আনতে পারেনি। আবহাওয়া কিছুটা ভাল হওয়ায় প্রতিদিনই অনেক কৃষক গুদামে ধান নিয়ে আসছেন। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৬৮ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ হয়েছে। আশাকরছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
এদিকে উচ্চদামে ধান ক্রয় করে সরকার কৃষকদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দিতে চাইলেও কথিত সিন্ডিকেটের সদস্যরা কৃষকদের গুদামমুখি হতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। ‘ধান দিলেও ঠিকঠাক টাকা পাওয়া যাবে না’-এমন নানা কথা বলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের ভয় দেখাচ্ছে।
আবার গুদামে না এসে তাদের হাতে কার্ড তুলে দেওয়ার জন্য কৃষকদের প্রভাবিত করার অভিযোগও রয়েছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। সেইজন্য তারা কার্ডপ্রতি ৩-৪ হাজার টাকার অপার দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার মাহমুদকাটি গ্রামের নুর ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমি প্রতি মৌসুমে ৭-৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করি। আমার নামে একটন ধান বরাদ্দ হয়েছে। কয়েকদিন আগে ইত্যা গ্রাম থেকে রফিক নামে একজন এসে চার হাজার টাকার বিনিময়ে আমার কার্ড চেয়েছে। আমি দিইনি।
টাকার বিনিময়ে কার্ড চাওয়ার এমন অভিযোগ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার অফিসেও আসছে বলে জানা গেছে। তবে, সংশয় উপেক্ষা করে কৃষকদের গুদামে ধান নিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন হোসেন খান বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করছি। কোন চক্রের কারণে এই উদ্যোগ ভেস্তে যেতে দেব না। টাকার বিনিময়ে কৃষকদের কার্ড নিতে কেউ গেলে কৃষকরা আমাদের সেই তথ্য জানাতে পারেন। এছাড়া তাদের ধরে মণিরামপুর থানায় বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে হস্তান্তরের আহবান জানাচ্ছি।