‘কারাগারে আমার গলায় কুকুরের মতো লোহার শিকল বেঁধে দেয়া হতো। নিরাপত্তা প্রহরীরা আংটা দিয়ে গলার বেরিকে শক্ত করে দিতেন৷ সে সময় চোখের পানিই ছিল আমার আমার একমাত্র সঙ্গী৷’
এভাবেই পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি অবস্থায় দুর্বিসহ জীবনের কথা জানিয়েছেন দেশটির আলোচিত খ্রিষ্টান নারী আসিয়া বিবি।
২০০৯ সালে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন আসিয়া বিবি। এরপর ব্লাসফেমি আইনে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় দেশটির সরকার। পরে আন্দোলনের মুখে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে রেহাই পান আসিয়া।
সে সময় তার মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছিলেন ফ্রান্সের সাংবাদিক টোলেট ইসাবেল-আনা।
এবার সেই আলোচিত আসিয়া বিবিকে নিয়ে ফরাসি ভাষায় বই লিখেছেন ফ্রান্সের সাংবাদিক টোলেট ইসাবেল আনা।
বইটির নাম ‘অবশেষে মুক্ত’। বুধবার বই প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে। বইটির ইংরেজি অনুবাদের জন্য আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷
বইটিতে আসিয়া বিবির দুর্বিসহ কারাজীবনের কথা লেখা হয়েছে।
পাক কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে গত বছর থেকে কানাডায় অজ্ঞাত স্থানে বসবাস করছেন আসিয়া বিবি। নিজ দেশ থেকে তিনি এখন নির্বাসিত।
ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ইসাবেল আনাই একমাত্র সাংবাদিক যিনি আসিয়া বিবির সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছেন। আর গ্রেফতার হওয়া থেকে শুরু করে কারাগারে বন্দি জীবন ও বর্তমানে কানাডায় কেমন আছেন আসিয়া সেসব কথা বইয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন ইসাবেল আনা।
কারাগারে প্রতিদিন যে কত কষ্টের সম্মূখীন হয়েছেন তা বোঝাতে ওই সাংবাদিককে আসিয়া বলেছেন, ‘কারাগারে অন্য নারী বন্দিরা আমাকে দেখলেই ‘ফাঁসি ফাঁসি বলে চ্যাচাতো। খুনির আসামীরাও আমাকে নিয়ে সারাক্ষণ হাসিঠাট্টায় মেতে থাকত। একেবারেই ভালো ব্যবহার করত না তারা। প্রহরীরা গলায় শিকল লাগিয়ে তার আংটা শক্ত করে যেত। সেখানে চিৎকার করে সাহায্য চাওয়ার মতো আমার কোনো বন্ধু ছিল না। আমার চোখের পানিই ছিল একমাত্র সঙ্গী।’
এখন কানাডায় কেমন আছেন প্রশ্নের জবাবে আসিয়া বিবি বলেন, ‘গণমাধ্যম থেকে আপনি আমার সম্পর্কে জানেন৷ কিন্তু এখনকার নতুন জীবন সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নেই৷ ’
কানাডার জীবনও তার কাছে একরকম অসহ্য বলে জানান আসিয়া।
তিনি বলেন, ‘আমাকে যখন বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বিদায় না বলেই দেশ ছাড়তে হয়েছিল তখন আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল৷ পাকিস্তান আমার দেশ৷ আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। কিন্তু এখন আমি চিরদিনের জন্য নির্বাসনে। পাকিস্তানে ফেরার উপায় নেই।’
বিভিন্ন আর্ন্তজাতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ২০০৯ সালে পাঞ্জাবের শেখুপুরা জেলায় এক মাঠে কাজ করার সময় মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে৷। এ সময় মাঠে কর্মরত মুসলিম নারীরা তার বিরুদ্ধে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনেন৷
ওই অভিযোগে আসিয়াকে গ্রেফতার করে ব্লাসফেমি আইনে ২০১০ সালে তার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ দীর্ঘ আট বছর কারাভোগ শেষে ২০১৮ সালে আসিয়া বিবিকে মুক্তির রায় দেন সুপ্রিমকোর্ট৷
দেশটির কয়েকটি গোষ্ঠী থেকে হত্যার হুমকি এলে গত বছরের মে মাসে কানাডায় আশ্রয় নেন আসিয়া।