শিরোপার নায়ক আকবর

অনেকবার এই ভারতের কাছে তীরে গিয়ে তরী ডুবিয়েছে সিনিয়র দল। যুব দলও গত এক বছর ভারতের কাছে দুবার ফাইনালে পুড়েছে হতাশায়। বাংলাদেশ-ভারত লড়াই হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙার গল্প।

এবার যুব বিশ্বকাপ ফাইনালে আর কোন হৃদয় ভাঙার গল্প নয়। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো ম্যাচ ট্রফি উঁচিয়ে ধরছেন আকবর। যার অবিস্মরণীয় ৪৩ রানের ইনিংস বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নিশ্চিতভাবেই আলাদা জায়গা করে নেবে।

কারণ এক পর্যায়ে উইকেট হারাতে থাকা দল পড়ে গিয়েছিল চরম শঙ্কায়। দেখা দিচ্ছিল পা হড়কানোর ভয়। মাথা ঠান্ডা রেখে পুরো পরিস্থিতি পার করেন ১৯ বছরের আকবর। দেশকে এনে দেন বিশ্বকাপ।

ছয় নম্বরে নেমে দায়িত্বশীল ব্যাটিং উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক। পুরো ম্যাচে স্নায়ুচাপের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি তার শরীরী ভাষাতেও। তার বীরত্বপূর্ণ ইনিংসে বিশ্বজয় বাংলাদেশের।

৮৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে, ভীতি জাগানিয়া পরিস্থিতিতেও খেলছিলেন কেবল আকবর। অলরাউন্ডার অভিষেককে একপাশে নিয়ে ১৭ রানের জুটি এসে গিয়েছিল। লো স্কোরিং ম্যাচে ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদালনো অবস্থায় জাগছিল আশা। কিন্তু স্লিপে ক্যাচ দিয়ে জীবন পাওয়ার পরের বলেই ক্যাচ উঠিয়ে ৫ রান করে ফেরেন অভিষেক। তার আউটে ক্রিজে ফেরেন চোটে বেরিয়ে যাওয়া পারভেজ। এরপরই ফের বদলে যায় ম্যাচের মোড়। দৃঢ়তার সঙ্গে খেলতে থাকা আকবরের সঙ্গে পারভেজ যোগ দিয়ে যোগান ভরসা, আসে রান, বাড়ে আশা। অধিনায়ক আকবর রাখেন বড় ভূমিকা। পুরো পরস্থিতি পড়ে ঠান্ডা মেজাজে চালাতে থাকেন ব্যাট। পারভেজ পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে বের করতে থাকেন বাউন্ডারি। ক্রমেই জয়ের কাছে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। জুটি বাড়ছিল, জেতার জন্য প্রয়োজনীয় রানের চাহিদা ৪০ এর নিচে নেমে আসছিল। কিন্তু নাটকের বাকি ছিল আরও। আকবরের সঙ্গে ৪১ রানের জুটির পর ফিফটির দিকে থাকা পারভেজের বিদায়। অনিয়মিত লেগ স্পিনার জওসওয়ালের বলে অযথা পেটাতে গিয়ে মিড অফে দেন ক্যাচ। ফের তৈরি হয় আশা-নিরাশার দোলাচল। আকবর তখনো অবিচল। রকিবুল হাসানকে নিয়ে প্রথমে ঠান্ডা করলেন পরিস্থিতি, বেশ কিছুটা সময় নিলেন না রান। আকাশে তখন ঘন কালো মেঘের ঘনঘটা। ডি/এল মেথডের হিসাবটাও মাথায় রাখতে হচ্ছিল তাকে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও নামল এক সময়। খেলা বন্ধ থাকল ২০ মিনিট। ডি/এল মেথডে বাংলাদেশের লক্ষ্য নেমে আসে ৩০ বলে ৭ রানে। ওই রান ২৩ বল হাতে রেখেই নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ৪৩ রানের তারকা খচিত ইনিংস খেলে দেশকে বিশ্বকাপের ট্রফি এনে দেন আকবর। এতে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও উঠে তার হাতে।