আ’লীগ থেকে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির সাবেক মেয়র মনজুর

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) বিএনপির সাবেক নির্বাচিত মেয়র এম মনজুর আলম এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে চান। বৃহস্পতিবার সকালে মেয়র পদে মনজুরের পক্ষে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। এ নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা চলছে।

মনজুর আলম একসময় আওয়ামী লীগ করতেন। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তিনবারের সাবেক কাউন্সিলর। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতা প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর নগরসভার গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য একসময় ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনও করেন।
২০১০ সালের চসিক নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন চেয়েছিলেন। না পেয়ে আচমকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। পরে বিএনপির সমর্থন পেয়ে মেয়র নির্বাচন করেন। চট্টগ্রামের তিন বারের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রায় লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন মনজুর।

মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ দেয়া হয়। সেই মনজুর আলমই ভোল পাল্টে এবার আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে চাইছেন।

এ বিষয়ে মনজুর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, এখন আওয়ামী লীগের ডাকের অপেক্ষায় আছেন তিনি।

‘ডাক পেলে ঢাকায় যাব। দল চাইতে হবে, না হলে ঢাকায় গিয়ে লাভ কী? এর বাইরে আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেই,’ বলেন তিনি।

২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে হেরেছিলেন সেই সময়কার বিএনপি নেতা মনজুর আলম। সেবার ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। ভোটের দিন দুপুরে দল ভোট থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়ায় কিছুটা নাখোশ ছিলেন মনজুর। তিনি চেয়েছিলেন কেন্দ্রদখল, ভোট কারচুপি যাই হোক মাটি কামড়ে ভোটের মাঠে পড়ে থাকতে। সেই ক্ষোভ থেকে বিএনপি এবং রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন।

মহিউদ্দিন-শীষ্য মনজুর আলম পরে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেয়নি।

তবে সিটিতে মনজুর মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। তার কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন মনজুর চট্টগ্রামে অন্যতম সফল মেয়র। তার ইতিবাচক ইমেজ রয়েছে। একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক। তাই আওয়ামী লীগদলীয় কোন্দল এড়াতে এবার তাকেই বেছে নেবে।

এদিকে চসিক নির্বাচনে নৌকার মেয়রপ্রার্থী হতে এরই মধ্যে ৯ জন ঢাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের পাশাপাশি মেয়রপ্রার্থী হতে চাইছেন আরেক হেভিওয়েট নেতা ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামও প্রার্থী হতে চান। এসব হেভিওয়েট নেতার ভিড়ে মনজুর আলম আওয়ামী লীগে ঠাঁই পাবেন কিনা, এটি নিয়েও স্থানীয় নেতাদের সংশয় রয়েছে।

২০১০ সালের নির্বাচনে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ১৪৫ ভোট পেয়ে নিজের রাজনৈতিক গুরু এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রায় ৯৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থী মনজুর। পরে তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়। বিএনপির টিকিটে মেয়র হলেও মনজুর আওয়ামী লীগের খোলস ছাড়তে পারেননি। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করতেন নগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। এ ছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান করে সেটির ব্যানারে সমাজসেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের ক্ষোভ ছিল তার প্রতি। তবু পরের নির্বাচনে তাকেই ধানের শীষের টিকিট দেয় বিএনপি। কিন্তু মনজুর নির্বাচনে আ জ ম নাছিরের কৌশলের কাছে কুলিয়ে উঠতে পারেননি।

২০১৫ সালে সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মনজুর, যদিও পরে আবার পুরনো দলে ফিরে সংসদ নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন।

এ বিষয়ে মনজুর বলেন, রাজনীতি করব না বলেছিলাম, সঙ্গে এটিও বলেছিলাম সমাজসেবা করে যাব। সেই কমিটমেন্ট আমি রেখেছি। এক মিনিটের জন্যও সমাজসেবা থেকে বিচ্যুত হইনি। এটিও একটি দায়িত্ব পালন। মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন আমি করে গেছি।

এবারও নির্বাচনে আগ্রহী হলেও দলের মনোনয়ন না পেলে সে পথেই হাঁটবেন বলে জানান মনজুর। যেহেতু দলীয় মনোনয়নেই নির্বাচন হচ্ছে, তাই দলের মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।