সিরিয়ায় যুদ্ধের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে তুর্কি ড্রোন

চলতি সপ্তাহের শুরুতে তুর্কী সেনাবাহিনী ড্রোন, আর্টিলারি ও বিমান হামলা চালিয়ে সিরীয় সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। এর ফলে তুর্কী আক্রমণ বন্ধে কতটা হস্তক্ষেপ করা উচিত সে বিষয়ে সংকটে পড়ে গেছে সিরিয়ার প্রধান মিত্র রাশিয়া।

তুরস্ক তাদের শক্তিশালী বিমানবাহিনীর অত্যাধুনিক ড্রোন এবং উচ্চ প্রযুক্তির এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরের মাধ্যমে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা সিরিয়ার কমপক্ষে দুইটি জেট যুদ্ধবিমান, ৮টি হেলিকপ্টার, ১৩৫ টি ট্যাঙ্ক, ৫টি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ৭৭টি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছে। এর সাথে প্রায় ২,৫০০ সিরীয় সেনাও নিহত হয়েছে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনী হামলা থেকে তাদের সামনের সারির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং আর্টিলারি ইউনিটগুলি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এগুলো সস্তা কিন্তু অত্যন্ত নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল।

সিরিয়ায় তুরস্কের ড্রোন সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি নজরে এসেছে। এই ড্রোন দিয়েই সিরিয় সেনাবাহিনীর ভিত্তি কাপিয়ে দিয়েছে তুরস্ক। ড্রোন সক্ষমতায় তুরস্ক বিশ্বের অন্যতম সেরা শক্তি বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৫ সালে তারা এই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ শুরু করে। বর্তমানে তুরস্ক নিজেই ড্রোন নির্মাণ করে। তাদের নির্মিত বৃহত্তম ‘আনকা’ ড্রোনের পাশাপাশি তুরস্ক এখন ‘বায়ারাক্টর টিবি ২’ এর মতো ড্রোন ব্যবহার এবং রফতানি করে।

এ রকম শত শত তুর্কি ড্রোন ইদলিবে সিরিয়ার শাসক বাহিনীর উপরে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এর ফলে আসাদের সমর্থক রাশিয়া, ইরান এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে উদ্বেগ দেখা যায়। তথ্য অনুসারে, তুরস্কের ‘বায়ারাক্টর টিবি ২’ ড্রোনে ২২.৫ কেজি পরমাণবিক বোমা পরিবহনে সক্ষম ওয়্যারহেড যুক্ত রয়েছে। আনকা ড্রোনও রোকেস্তানের তৈরি এমএএম-এল স্মার্ট যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে।

সামগ্রিকভাবে সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তুর্কি ড্রোন মোকাবিলায় সক্ষম প্রমাণিত হয়নি। তারা দেখিয়েছে ড্রোনগুলো এমন সব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে যেখানে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে এফ-১৬ এর মতো যুদ্ধ বিমান দিয়ে হামলা চালানো সম্ভব নয়। তারা ড্রোনগুলোকে কৌশলগতভাবে যুদ্ধের ময়দানে কার্যকর করেছে এবং বিশাল সাফল্য পেয়েছে। এর আগে কোন যুদ্ধে এত বেশি পরিমাণ ড্রোন ব্যবহৃত হতে দেখা যায় নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলও সামরিক অভিযানে ড্রোন ব্যবহার করেছে, তবে ইদলিবে তুরস্ক অনন্য কর্মক্ষমতা দেখিয়েছে, যা আগামি বছরগুলিতে অন্যান্য দেশও শেখার চেষ্টা করবে।

এদিকে, রাশিয়া তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সাথে সরাসরি লড়াই করতে ইচ্ছুক না হওয়ায় বাশার আল-আসাদের সেনাবাহিনীকে আরও দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে। এর ফলে তুরস্কের পক্ষে সরকারি বাহিনীকে ইদলিবের বাইরে তাড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য অর্জনের পথ সুগম হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সহযোগিতার সিরীয় বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৩৩ তুর্কি সেনা নিহত হওয়ার পর তুরস্ক তাদের আক্রমনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর জবাবে সিরীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সিরিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন করলেই যে কোনো তুর্কি যুদ্ধবিমান বা ড্রোন ধ্বংস করা হবে। এরই মধ্যে তুরস্কের বেশ কয়েকটি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।

তুরস্ক শুধুমাত্র ইদলিবের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়, যাতে সেখানকার বাসিন্দারা পালিয়ে না আসে এবং শরণার্থী হিসাবে তুরস্কে চাপ সৃষ্টি না করে। এখনও পর্যন্ত এটি স্পষ্ট নয় যে প্রায় দশ বছরের পুরানো গৃহযুদ্ধ যাতে প্রায় ৫ লাখ মানুষ নিহত এবং মোট নাগরিকের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তা অবসানে ও সমগ্র দেশের উপরে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে আসাদ সরকারকে তার মিত্র রাশিয়া কতটা সাহায্য করতে প্রস্তুত। এ দিকে অপারেশন স্প্রিং ফিল্ড শুরু হওয়ার কারণে তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আকার বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছা আমাদের নেই। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং এরদোগান আগামীকাল বৃহস্পতিবার মস্কোয় একটি বৈঠকে বসছেন। সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার, দ্য জেরুজালেম পোস্ট।