করোনা নিয়ে অতি আবেগী হয়ে যে ৭টি কাজ করবেন না

coronavirus

করোনা। মাত্র কিছুদিন আগেও যে নামটির সঙ্গে মানুষের খুব একটা পরিচয় ছিলো না।কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে পুরো বিশ্বের এখন সবচেয়ে বড় আতংক এই করোনাভাইরাস।

প্রতিদিন এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ভয়ানক হারে বেড়েই চলছে। কিন্তু এখনও এই রোগের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিষেধক বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেনি।

করোনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য কি করতে হবে এবং কি করা উচিত নয় তা নিয়ে বহুবার বহু আলোচনা হয়েছে। তাই সে বিষয়ে আর যাচ্ছি না। আজকে বরং ‘করোনা নিয়ে অতি আবেগী হয়ে কি করা উচিত নয়’ সে বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করি।

১। বাংলাদেশে করোনা নেই: এই পয়েন্টটাই আমি আজকে সবার উপরে রাখতে চাই। আমাদের দেশের এখনো বহু মানুষের ধারণা এ দেশে কোন করোনা নেই এবং আসার সম্ভাবনাও নেই। কেউ কেউ আবার এটা নিছকই মিডিয়ার অতিরঞ্জিত বিষয়ও মনে করছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য অনেক দায়িত্বশীল ব্যাক্তি ও বাংলাদেশে করোনা নেই অথবা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি টাইপ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন যা মোটেই উচিত নয়।

২। আল্লাহ ভরসা: এ পয়েন্ট টা দিয়ে আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করতে মানা করেছি বিষয়টি মোটেও এমন নয়। কিন্তু সবকিছু বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করে বসে থাকলে চলবে না। উপরন্তু আল্লাহই বলছেন আগে বান্দার চেষ্টা থাকতে হবে তারপর আল্লাহর সাহায্য আসবে।

৩। করোনা বিধর্মীদের জন্য স্রষ্টার গজব: প্রথম প্রথম যখন চীনে করোনা ধরা পড়ল, তখন বহু মানুষ এটাকে তাদের ওপরে গজব বলে চাপিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই এ রোগ সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে। সব ধর্মের মানুষই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কাজেই করোনা শুধু মাত্র বিধর্মীদের জন্য এটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। আর যদি এটাকে স্রষ্টার গজব হিসেবেই চিহ্নিত করতে চান তাহলে একবার ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন। ধরুন ২ জন লোককে নিয়ম ভঙ্গের জন্য শাস্তি দেয়া হবে। একজন নিয়ম জেনে ভঙ্গ করেছেন আর আরেকজন না জেনে। তাহলে কার শাস্তি বেশি হওয়ার কথা?

৪।মসজিদ বন্ধ করা শুধুই চক্রান্ত: করোনার প্রভাবে অনেক জায়গাতেই মসজিদে নামাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি খোদ সৌদিতেও মসজিদে নববী ও মসজিদুল হারাম ব্যতীত সকল মসজিদে নামায নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারটি অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। কেউ কেউ মনে করছেন এ সময় আরও বেশি বেশি আল্লাহর দরবারে যাওয়া উচিত। তাই মসজিদ বন্ধ হওয়া একটি চক্রান্ত। আসলে সব সময়ই ব্যাপারটা ঠিক এরকম তা ভাবার কোনো কারণ নেই। এমনকি খোদ রাসূল (সা:) এর সময় ও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বৃষ্টি,ঝড় কিংবা প্রাকৃতিক বড় দুর্যোগের সময় মানুষ যেন বাড়িতে বসেই নামাজ আদায় করে সে ব্যাপারে বুখারীর স্পষ্ট হাদিস ও রয়েছে। আর এ সময় আজানে একটি বিশেষ অংশের পরিবর্তন করা হয় যা ইতোমধ্যে অনেক দেশেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কাজেই যতকিছুই হোক মসজিদে নামায পড়তেই হবে এ ধারণা থেকে দ্রুত বের হয়ে আসা দরকার।

৫। পীর ও স্বপ্নযোগ: করোনার ভয়াবহতার পাশাপাশি এ দেশে আরেকটি জিনিস যোগ হয়েছে। কিছু মানুষ এর ভয়াবহতার থেকে বাঁচার জন্য যা শুনছে তাই ই করছে। জনৈক পীর স্বপ্নে দেখেছেন অমুক গাছের পাতা খেলে করোনা আর কিছু করতে পারবেনা। ব্যস অমনি কিছু মানুষ সমানে ঐ পাতা খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। কেউ কেউ আবার কয়েক ধাপ এগিয়ে করোনা রোগের সঙ্গে আলাপচারিতাও করছেন। এ সব বিষয়ে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।

৬। ছুটির ফায়দা: স্কুল, কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুরু হয়েছে আনন্দ ভ্রমণ আর পার্টি। দেশের বিনোদন পার্ক গুলোতে উপচে পরা ভীড়। এদের দেখে কেউ বলতেই পারবেনা যে এ দেশে করোনা বলে কিছু আছে। অথচ তাদের এই সামান্য ভুলের জন্য দেশের মানুষকে অনেক বড় মাশুল দিতে হতে পারে।

৭। অতি সিরিয়াস: হ্যা। অতিরিক্ত আসলে কোন জিনিসই ভালনা। তেমনি করোনা নিয়ে অতিরিক্ত সিরিয়াস হওয়ারও কিছু নেই। কিছু মানুষ অতি সিরিয়াস হয়ে মাস্কের গোডাউন করে রেখেছে বাসায়। যার ফলে বাজারে মাস্কের অভাব দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এখন শুরু করেছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অধিক হারে কিনে নিয়ে যাওয়া। যার ফলে ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে চাহিদার অতিরিক্ত মালামাল মানুষ ক্রয় করতে থাকলে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে খুব বেশি সময় লাগবেনা। পাশাপাশি যারা অধিক মূল্য লাভের আশায় বাজারে কৃত্তিম সংকট তৈরি করছেন তাদের ব্যাপারেও আরও সচেতন হওয়া দরকার।

পরিশেষে শুধু একটা কথাই বলতে চাই। পৃথিবীর এ রূপ আমরা দেখে অভ্যস্ত নই। পুরো পৃথিবী এক প্রকার থমকে আছে। আর এ রোগের মোকাবেলা একা কখনও করা সম্ভব নয়। একা আপনি কখনো বাঁচতেও পারবেন না। আসুন সবাই জাতি, ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করোনাভাইরাসের মোকাবেলায় কাজ করি।